মহানবী (সা) কি আসলেই আয়শা (রা) এর সাথে ৯ বছর বয়সে সহবাস করেছিলেন!?

যারা এসব অভিযোগ করে থাকে তারা সাধারণত মুহাম্মদ ﷺ ও আয়শা (রা) এর বিবাহের সময় আয়শা (রা) এর বয়স সংক্রান্ত হাদিস উপস্থাপরন করে এই ধরনের অভিযোগ করে থাকে। প্রথমত যে হাদিসগুলাতে ৬ বছর বয়সে বিয়ের প্রমান পাওয়া যায় সেগুলার বর্ণনাকারীদের মধ্যে হিসাম ইবনে উরওয়াহ রয়েছেন যার মধ্যে কিছুটা দূর্বলতা রয়েছে। চাইলে সেটা পড়ে আসতে পারেন এখান থেকে। https://islamicknowledge80.blogspot.com/2021/06/blog-post_25.html মহানবীর নামে শিশুকামিতার অপবাদের জবাব - আগে মহানবী সম্পর্কে শিশুকামিতার অভিযোগ সম্পর্কে কিছু কথা বলি। যারা pedophilia তে ভোগেন তাদের IQ লেভেল এবং স্মৃতিশক্তি অনেক কম থাকে [Cantor JM, Blanchard R, Christensen BK, Dickey R, Klassen PE, Beckstead AL, Blak T, Kuban ME (2004). "Intelligence, memory, and handedness in pedophilia". Neuropsychology 18 (1): 3–14.]। যিনি পুরো কুরআন মুখস্থ বলে যেতে পারতেন তাঁকে আমরা অবশ্যই স্মৃতিশক্তির দোষে দুষ্ট বলতে পারি না। আর মেধার প্রয়োগ এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি যে জিনিয়াস ছিলেন তা পাশ্চাত্যের অনেক লেখকই স্বীকার করেছেন [ Michael Hart in 'The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,' New York, 1978.] [Sir George Bernard Shaw in 'The Genuine Islam,' Vol. 1, No. 8, 1936.]। Pedophilia তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রধান যেসব উপসর্গে ভোগেন তার কোনোটাই তাঁর মধ্যে প্রকট ছিল না। আসুন দেখি উইকিপিডিয়াতে pedophilia এর সংজ্ঞা হিসেবে কি বলা হয়েছেঃ “Pedophilia or paedophilia is a psychiatric disorder in which an adult or older adolescent experiences a primary or exclusive sexual attraction to prepubescent children. the manual defines it as a paraphilia involving intense and recurrent sexual urges towards and fantasies about prepubescent children.” ["Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition". American Psychiatric Publishing. 2013] এখানে pubescent বা বয়ঃপ্রাপ্তির বিষয়টা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় একেক অঞ্চলের মেয়েরা একেকসময় বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। যেমনঃ মরুভূমি অঞ্চলের মেয়েরা শীতপ্রধান অঞ্চলের মেয়েদের চেয়ে দ্রুত বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। মরুভূমির মেয়েরা যেখানে ১০ বছর বয়সে বয়ঃপ্রাপ্তি লাভ করে সেখানে অনেক শীতপ্রধান অঞ্চলের মেয়েরা ১৩-১৫ বছর হয়ে গেলেও বয়ঃপ্রাপ্ত হয় না। ফ্রেঞ্চ ফিলোসফার Montesqueu তার ‘Spirit of Laws’ বইটিতে [Montesqueu-The spirit of Laws- Book-16,page 264] উল্লেখ করেছেন, উষ্ণ অঞ্চলে মেয়েরা ৮-৯-১০ বছর বয়সেই বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়। বিশ বছর বয়সে তাদেরকে বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয়। ‘Spirit of Laws’ বইটি আমেরিকার সংবিধান তৈরীতে ব্যবহৃত হয়েছে। আয়েশা (রা) নিজেই মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “মেয়ে যখন নয় বছরে উপনীত হয়ে যায়, তখন সে মহিলা হয়ে যায়।” [কিতাবুত তাহারাহ ওয়াস সালাহ বর্ণনা/৩০৫৬] তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য নয় বছর বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমাণ ছিলেন স্বয়ং আয়েশা(রাঃ)। নিচের তালিকাটি [ Log in or sign up to view ] ভালোভাবে লক্ষ্য করুন- তালিকাটাতে তিনটা ভিন্ন শতকে মেয়েদের বিয়ের জন্য অনুমোদিত বয়স কত ছিলো সেটা উল্লেখ করা হয়েছেঃ ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো, ১৮৮০ সালের দিকে অধিকাংশ জায়গায় বিয়ের জন্য অনুমোদিত বয়স ছিলো ১০-১২ এর মধ্যে। আমরা যদি ইতিহাসে আরো পেছনে যেতে পারি তাহলে আরো কম বয়স লক্ষ্য করতে পারব। আবার যত সামনে এগুবো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনুমোদিত বয়সের সীমা ক্রমাগত বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তিদের কথা বলি যাদেরকে মানুষ নিজের আইডল হিসেবে মানতে দ্বিধাবোধ করে না। (১) শেখ মুজিবের ১৯৩৮ সালে বিয়ে হবার সময় রেনুর বয়স ছিল ৮ বছর ও শেখ মুজিবের ১৮ বছর। (২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেছিলেন ২৩ বছর বয়সে তখন তাঁর স্ত্রীর বয়স ছিল ১১ বছর। (৩) বঙ্কিমচন্দ্র যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর (৪) দেবেন্দ্রনাথ ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর স্ত্রীর বয়স ছিল ছয় বছর (৫) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রীর বয়স ছিল সাত বছর (৬) বিয়ের সময় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রীর বয়স আট বছর (৭) কেশব সেন এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রীর বয়স ছিল ৯ বছর (৮) শিবনাথ শাস্ত্রীর ১০ আর রাজনারায়ণ বসুর স্ত্রীর বয়স ছিল ১১ বছর [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৭; হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা-২২০] হিন্দুদের দেবতা রাম ৬ বছর বয়সী সীতাকে! [বাল্মিকী রামায়ণ,অরন্য কান্ড, ৩.৪৭.৩-১০, স্কন্দ পুরাণ ৩.২.৩০.৮-৯], কৃষ্ণ ৮ বছর বয়সী রুক্মিণীকে [স্কন্দ পুরাণ, ৫.৩.১৪২.৮-৭৯, ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ] এবং শিব ৮ বছর বয়সী পার্বতিকে বিয়ে করেছিল। (শিব পুরান, রুদ্রসংহিতা, পার্বতি খন্ড ৩:১১:১-২), হিন্দু শাস্ত্রে বিবাহ নিয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে যেমন - বয়ঃসন্ধির পূর্বেই একজন মেয়ের বিবাহ দেওয়া উচিত। (মনু-স্মৃতি, গৌতম ১৮-২১), "ত্রিশ বছরের পুরুষের উচিত দশ বছরের কন্যাকে বিবাহ করা,যাকে বলে নগ্নিকাম।এবং একুশ বছরের পুরুষের উচিত সাত বছরের কন্যাকে বিবাহ করা" (মহাভারত,অনুশাসন পর্ব ১৩/৪৪, শ্লোক-১৩), "কূলে এবং আচারে উৎকৃষ্ট সজাতীয় বর পাইলে কন্যা বিবাহযোগ্য না হইলেও উহাকে সম্প্রদান(বিবাহদান) করিবে।" (মনুসংহিতা ৯/৮৮) ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুসারে ইসহাক (আ) ৪০ বছর বয়সে মাত্র তিন বছরের কন্যাশিশুকে বিয়ে করেছেন। সেখানে আছে : ‘ইসহাক ৪০ বছর বয়সে রেবেকাকে বিয়ে করেছেন। রেবেকা ছিলেন পদ্দম-ইরাম দেশের সিরীয় বথুয়েলের মেয়ে এবং সিরীয় লাবনের বোন। ’ (ওল্ড টেস্টামেন্টে, সৃষ্টি অধ্যায়, ২৫ : ২০) “ইহুদি আইনে বিবাহের বয়সের নিম্ন সীমা ছেলেদের জন্য ১৩ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১২ বছর, তবে বাগ্‌দান তার পূর্বেই হতে পারে, আর মধ্যযুগে প্রায়ই এরকম ঘটেছে...”। (Judaism 101 (JewFAQ), Judaism 101: Marriage) জোশেফের সঙ্গে মেরির বিবাহ, ক্যাথোলিক ইন্সাইক্লোপিডিয়া বলছে : “...... মেরিকে বিবাহ করতে একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ, সেসময় তাঁর (মেরির) বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর, জোশেফ যাঁর বয়স সেসময় ৯০ বছর, প্রস্থান করলেন......”। (CATHOLIC ENCYCLOPEDIA: St. Joseph), মেরি স্টেওর্ট অষ্টম হেনরিকে বিবাহ করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। (http://en.wikipedia.org/wiki/Mary,_Queen_of_Scots), রিচার্ড শ্রিয়ুজবারি, চতুর্থ রাজা এডওয়ার্ড-এর পুত্র, নরফোল্কের পাঁচ বছরের আন্নে মউব্রেকে বিবাহ করেছিলেন। (http://en.wikipedia.org/wiki/Richard_of_Shrewsbury,_1st_Duke_of_York), এসেক্সের কাউন্ট আগ্নেসের বিয়ের পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল মাত্র তিন বছর বয়সে এবং বারো বছর বয়সে তার বিবাহ হয়েছিল এমন একজনের সঙ্গে যার বয়স ছিল প্রায় পঞ্চাশ বছর। (http://en.wikipedia.org/wiki/Isabella_of_Angoul%C3%AAme), ন্যাভেরার তৃতীয় জিয়ান্নার বিবাহ দেওয়া হয়েছিল তেরো বছর বয়সে। (http://en.wikipedia.org/wiki/Jeanne_d'Albret), জিওভান্নি স্ফোর্যা তেরো বছরের লিওক্রিজিয়া বোরজিয়াকে বিবাহ করেছিলেন। (http://en.wikipedia.org/wiki/Giovanni_Sforza), নরওয়ের ষষ্ঠ রাজা হাকোন দশ বছরের রাণী মার্গারেটকে বিবাহ করেছিলেন। (http://en.wikipedia.org/wiki/Margaret_I_of_Denmark), প্রথম কিং আন্ড্রোনিকোস কোমনেনোস, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের নির্ভীক খ্রিস্টান নেতা, ৬৪ বছর বয়সে ফ্রান্সের বারো বছরের আগ্নেসকে বিয়ে করেছিলেন। (http://www.academia.edu/990174/Medieval_Marriage, Jeanne d'Albret - Wikipedia) যাইহোক Pedophilia এর সংজ্ঞায় আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হয়েছে- “intense and recurrent sexual urges towards and fantasies about prepubescent children”। অর্থাৎ, একজন pedophile বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি এমন শিশুদের প্রতি বারবার প্রবল আকর্ষণ বোধ করে। মুহম্মদ ﷺ কি এমন কিছু প্রদর্শন করেছিলেন? তিনি কি বাছাই করে শুধু শিশুদের বিয়ে করেছিলেন? নিচের তালিকাটি লক্ষ্য করুন। এখানে আমি মুহাম্মদ ﷺ এর বিভিন্ন বিয়ের সময় তাঁর স্ত্রীদের বয়স উল্লেখ করেছিঃ অর্থাৎ, তাঁর স্ত্রীদের যখন বিয়ে করেছিলেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেরই বয়স ছিলো ১৭ কিংবা তার চেয়েও বেশী। একমাত্র আয়েশা (রা) এর বয়স ছিলো দশের নিচে। যারা আয়েশা (রা) এর বয়স দেখে খুশিতে-“Yes, we got it. All moslems are pedophile” বলে চিৎকার করে উঠেন তারা অবশ্য খাদিজা (রা), উম্মে হাবীবাহ (রা) ও সওদা (রা) এর বয়স দেখলে যথাক্রমে বোবা, বধির ও অন্ধ হয়ে যান। আবার মহানবী (সা) কে শিশুকামি বলার জন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা একটি যয়িফ হাদিস ব্যবহার করে। সেটা হল - "আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস উম্মে ফজল বিনতে হারেস থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাসের ‘দুগ্ধপোষ্য শিশু’ বয়সে দেখে বলেন, যদি আব্বাসের মেয়ে বালেগা (প্রাপ্তবয়স্ক) হয় আর আমি ততদিন বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই আমি তাকে বিয়ে করব।" [মুসনাদে আহমদ (4/441); আবু ইয়ালা তার "মুসনাদ (7075)" এ; আত-তাবারানীর কিতাব আলকাবির (25/238); সিরাত ইবনে ইসহাক (পৃ/268)] চলুন হাদিসটির তাহকিক দেখে আসি। হাদিসটির (চুরান্ত) সুত্রের একজন রাবি হলেন : "আলহুসাইন বিন আব্দুল্লাহ " সম্পর্কে জারাহ-তা'দিল শাস্ত্রের উলামাদের বক্তব্য উল্লেখ্য করা হলো এই রাবি যয়িফ। [حسين بن عبد الله بن عبيد الله بن العباس بن عبد المطلب] উক্ত হাদিসকে যয়িফ বলেছেন - নুরুদ্দিন আল-হায়ছামী; শুয়াইব আল-আরনাওত; মুহাম্মাদ নুয়াইম আল-ইরকাসুসী; ইব্রাহিম আয-যাইবাক; মুহাম্মাদ আনাস আল-খান; সাইদ বিন মুহাম্মাদ আস-সানারী; হুসাইন সালিম আসাদ বলেছেন; আহমাদ বিন আব্দুর রহমান আস-সা'আতী; বাশার আওয়াদ মারুফ বলেছেন; আস-সাইদ আবুল-মুয়াতী আন-নুরী; মুহাম্মাদ মাহদী আল-মুসলিমী; আহমাদ আব্দুর-রাজ্জাক আইদ; আইমান ইব্রাহিম আয-যামিল; মাহমুদ মুহাম্মাদ খালিল [মাজমাউয যাওয়ায়েদ (4/276); তাহকিক মুসনাদ আহমাদ (4/441,টিকা-1); তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা (9/472); তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা (12/502); আল-ফাতহুর রুব্বানী (22/147,টিকা-3); আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল (40/103)] মহানবী (সা) কি আসলেই আয়শা (রা) এর সাথে ৯ বছর বয়সে সহবাস করেছিলেন!? আয়শা (রা) এর বিয়ের সময় তার বয়স সংক্রান্ত হাদিসগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারন রয়েছে কিন্তু তারপরও যদি ধরেনি যে হাদিসগুলো সঠিক তাহলেও এটা প্রমানিত হয় না যে মুহাম্মাদ ﷺ যখন আয়েশা (রা) এর সাথে সহবাস করেন তখন আয়েশা (রা) এর বয়স ৯ বছর ছিল। বিভিন্ন হাদিস দেখিয়ে দাবি করা হয়, যে আয়েশাহর (رضي اللّٰه عنها) বয়স যখন ৯ বছর ছিল তখন মুহাম্মাদ ﷺ তার সাথে সহাবাস করেছিলেন। এই লেখাটিতে একটি ভাষাগত আলোচনার মাধ্যমে পরিক্ষা-নিরিক্ষা, যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষন করা হবে যে উক্ত হাদিসগুলোতে আসলেই এটা বলা হয়েছে, নাকি অন্য কিছু বুঝানো হয়েছে। এই মর্মে যেই হাদিসগুলো দেখানো হয়, তার প্রায় সবগুলোরই মুল রুপ কিছুটা এরুপ : "আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) হতে বর্নিত, তিনি বলেছেন আমি যখন ৬ বছর বয়সী ছিলাম তখন রাসুল ﷺ আমাকে বিয়ে করেন, এবং আমি যখন ৯ বছর বয়সী ছিলাম তখন তিনি ﷺ আমার সাথে সহবাস (যেই অর্থটা প্রচার করা হয়) করেন।" বর্ননাটির কিছু সংস্করনে আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) "তৃতীয় ব্যাক্তি"(Third person) হিসেবে এসেছেন, এবং বাচনভংগি ও শব্দের ছোটখাটো পার্থক্যের বিবেচনায় এই হাদিসটির একাধিক সংস্করন (version) রয়েছে …[আল-মুসনাদুল মুসান্নাফুল মুয়াল্লাল ৩৮/২১২-২১৮; আল-মুসনাদুল জামে ১৯/৭৮৮-৭৯২] প্রথমত, হাদিসগুলোর যেসব সংস্করন হতে দাবি করা হয় তিনি (رضي اللّٰه عنها ) এখানে "সহবাসের " কথা বলেছেন, সেইসব সংস্করনে "البناء ب"(আল-বানা বি) এবং "الدخول ب"(আদ-দুখুল বি) , এদুইটা কথা ব্যবহৃত হয়েছে। "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" হলো একে অপরের "সমার্থক, পরিপুরক", যেমনটা আবুল-ফারাজ ইবনুল যাওযি (رحمه اللّٰه) লিখেছেন [ইবনুল যাওযী, কাশফুল মুশকিল ৩/৪৯৪] এখন "الدخول ب" (আদ-দুখুল বি) কথাটির দুইটি অর্থ নয়। একটা হলো "বিয়ে করে সহবাস করা " এবং আরেকটা হলো "শুধুমাত্র স্বামী স্ত্রীর মাঝে একটি নির্জন স্থানে সাক্ষাত হয়া, যেখানে তারা দুজন ব্যাতিত আর কেওই নেই " [ড. আহমাদ মুখতার, মুজামুল লুগাতিল আরাবিয়াহ ১/৭২৭], আর পুর্বেই বলেছি, "البناء ب"(আল-বানা বি) হলো "الدخول ب "(আদ-দুখুল বি) এর "সমার্থক,পরিপুরক"[ইবনুল যাওযী, কাশফুল মুশকিল ৩/৪৯৪]। এই পর্যন্ত এসে দেখা যাচ্ছে সে আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) এর হাদিসের "আদ-দুখুল বি" ও "আল-বানা বি" কথাটির দুইটি অর্থ হতে পারে। হয় আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) এরদ্বারা "সহবাস" বুঝিয়েছেন, আর নাহয় তিনি উনার জিবনের প্রথমবার "রাসুল ﷺ এর সাথে নির্জনে সাক্ষাত হয়ার ব্যাপারটি" বুঝিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো সঠিক কোনটা? এদুটো অর্থের মধ্যে উনি আসলে কি বুঝিয়েছেন? সেটাই এখন নির্নয় করতে হবে, বেড় করতে হবে। "আদ-দুখুল বি " ও "আল-বানা বি" এই কথাদুটিসহ বর্নিত সংস্করনগুলো এটা স্পষ্ট করছেনা যে হাদিসে "সহবাস " বুঝানো হয়েছে, নাকি "নির্জনে সাক্ষাত হয়া" বুঝানো হয়েছে। তবে অন্যান্য কিছু "সংস্করন"(version) এ এটার স্পষ্টকরন রয়েছে। নিম্নে তা হতে কিছু উল্লেখ্য করা হলো : এক. আন-নাসাঈর বর্নিত একটি, আল-বুখারির বর্নিত একটি, আবু-আওয়ানাহর বর্নিত একটি, আত-তাবারানীর বর্নিত চারটি, ইবন হাযমের বর্নিত একটি, ইবন হিব্বানের বর্নিত একটি ; অর্থাৎ আন-নাসাঈ, আল-বুখারি, আবু-আওয়ানাহ, আত-তাবারানী, ইবন হাযম ও ইবন হিব্বান, এনাদের সকলের বর্নিত মোট নয়টি - সংস্করনে "আদ-দুখুল বি" বা "আল-বানা বি" এর বদলে "الدخول علی"(আদ-দুখুল আলা) ব্যবহৃত হয়েছে। [সুনান আন-নাসাঈ (হা/৩৩৭৮), সহিহ আল-বুখারী (হা/৫১৩৩),মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৬৬), আল-মুজামুল কাবির (২৩/২১) , আল-মুজামুল আওসাত (৭/৯৪) & (২/৩০১) ,হুজ্জাতুল ওইদা'আ (হা/৫০৬), সহিহ ইবন হিব্বান (হা/৩৪৫৪)] "আদ-দুখুল আলা" মানে হলো "দেখতে যাওয়া, সাক্ষাত করা, পরিদর্শন করা" [ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৪৬৫)] দুই. মুসলিম, ইবন আবি-আসেম, আন-নাসাঈ, আবু-আওয়ানহ, আল-বাগভী, আল-বায়হাকী, আবু-নুয়াইম ও ইবন আবিদ-দুনিয়া ; এনাদের প্রত্যেকে একটি করে হাদিসটির মোট ৮ টি সংস্করন বর্ননা করেছেন, যেখানে "আদ-দুখুল বি" বা "আল-বানা বি" এর বদলে "زف" (যাফফুন) ব্যবহৃত হয়েছে।[সহিহ মুসলিম (হা/১৪২২), আল-আহাদ ওয়াল মাছানী (হা/৩০২৮), সুনানুন নাসাঈ আলকুবরা (হা/৫৫৪৪), মুস্তাখরাজ আবি-আওয়ানাহ (হা/৪২৭১),শারহুস সুন্নাহ (৯/৩৫) ,সুনানুল বায়হাকী আল-কুবরা (১০/৩৭১), আল-মুসনাদুল মুস্তাখরাজ আলা সহিহ মুসলিম (হা/৩৩১২), আন-নুফকাহ আলাল ইয়াল (২/৭৫৫)] যাফফুন অর্থ হলো "কনেকে বড়ের কাছে পাঠানো, কন্যা সম্প্রদান করা, বউ নিয়ে আসা " [ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/৫৩৬-৫৩৭)] তিন. আব্দুর-রাজ্জাক দুইটি, আত-তাবারানী একটি, আবু-নুয়াইম একটি অর্থাৎ এনারা সকলে হাদিসটির মোট ৪ টি সংস্করন বর্ননা করেছেন। যাতে "আদ-দুখুল বি" বা "আল-বানা বি" এর বদলে "إهتداء إلی" (ইহতিদা ইলা) ব্যবহৃত হয়েছে [মুসান্নাফ আব্দুর-রাজ্জাক (হা/১১১৯১),আল-মুজামুল কাবির (২৩/১৭),মা'রেফাতুস সাহাবাহা (৬/৩২০৮)]। "ইহতিদা ইলা" অর্থ হলো "সন্ধান পাওয়া, পথ পাওয়া, পেয়ে যাওয়া, আবিস্কার করা, পৌছে যাওয়া"। [ড.ফজলুর রহমান, আল-মুজামুল ওয়াফী (পৃ/১৮৭)] "আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" - এই তিনটি শব্দ হলো "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর ব্যাখ্যাস্বরুপ এবং অর্থ স্পষ্টকরনের সাহায্যকারী। কেননা এই তিনটি শব্দ একই হাদিসের অন্যান্য সংস্করনে "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর বিকল্প হিসেবে বর্নিত হয়েছে, উল্লেখিত হয়েছে।যেহেতু কিছু বর্ননায় "আল-বানা বি " ও "আদ-দুখুল বি" এর এর বদলে "আদ-দুখুল আলা ", "যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা" এসেছে। সেহেতু অবশ্যই "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর অর্থ এমন কিছু হতে হবে যা এই তিনটির সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্নতা রাখে। এক্ষেত্রে "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি" এর দ্বিতীয় অর্থটি (স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া) "আদ-দুখুল আলা ","যাফফুন ", এবং "ইহতিদা ইলা " এর অর্থের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপুর্ন। সুতরাং হাদিসে বর্নিত "আল-বানা বি" বা "আদ-দুখুল বি" দ্বারা "স্বামী স্ত্রীর মাঝে নির্জনে সাক্ষাত হয়া" বুঝানো হয়েছে, "সহবাস" বুঝানো হয়নি।স্বামী-স্ত্রীর মাঝে নির্জনে প্রথমবার সাক্ষাত হয়ার অর্থই এটা না যে তারা উক্ত সময়ে সহবাস করেছে, বরং সহবাস ব্যাতিতও স্বামী স্ত্রীর মাঝে প্রথমবার নির্জনে সাক্ষাত হতে পারে। অতএব, মুহাম্মাদ ﷺ আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) এর সাথে যখন সহবাস করেন তখন আয়েশাহ (رضي اللّٰه عنها) এর বয়স ৯ বছর ছিল, এরুপ দাবি করাটা সঠিক নয় বরং ভুল। তাছারা মুহাদ্দিসরাও "আল-বানা বি" ও "আদ-দুখুল বি " দ্বারা সেটাই বুঝেছেন যা আমি উল্লেখ্য করলাম। "আল-বানা বি " এর ব্যাখ্যায় যারা "ঘড়ে তোলা, সংসার করা,স্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া" এই ধরনের অর্থ বুঝেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন : [তাহকিক সহিহ মুসলিম (২/১০৩৮), মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ (১১/৪২৫), শারহুল মাসাবিহ (৩/৫৬০), আল-মাফাতিহ (৪/৩৫), মিরকাতুল মাফাতিহ (৫/২০৬৬), শারহুল মিশকাহ (৭/২২৮৫), শারহু সুনানে আবি-দাউদ (১৯/১৮)] (১) আল-আমিন আল-হারারী (২) ইবনুল মালাক আল-কিরামানী (৩) মাযহারুদ্দিন আয-যাইদানী (৪) মোল্লা আলি আল-কারী (৫) শারফুদ্দিন আত-তাইবী (৬) ইবন রাসালান আল-বাল্কিনী (৭) মুহাম্মাদ ফাওয়াদ আব্দুল-বাকী (মুহাক্কিক) "আদ-দুখুল বি " বলতে যারা "সাক্ষাত করা" বা এই ধরনের অর্থ বুঝেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন : [বাযলুল মাজহুদ (৮/৪৭),আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫), শারহু সুনানে আবি-দাউদ (৯/৪৩১), তাহযিব সুনানে আবি-দাউদ (১/৪৪৭), আল-কাওকাবুও ওয়াহহাজ (১৫/২৯৫), মুরশিদ যাওইল হাজা ওয়াল হাজাহ (১১/৪২৫), আস-সুনান ওয়াল আহকাম (৫/১১৫)] (১)দ্বিয়াউদ্দিন আল-মাকদেসী (২)খালিল আহমাদ আস-সাহারনপুরী (৩)ইবন রাসলান আল-বাল্কিনী (৪)ইবন কাইয়িমিল জাওযিয়াহ (৫) আল-আমিন আল-হারারী তাহকিক সংক্রান্ত বিষয়গুলো লিখেছেন : সামিঈ আল-হাসান তবিব আল-ইনফিরাদী ৯ বছর বয়সে যদি সহবাস না করে তাহলে এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারন কি? অনেকে প্রশ্ন করতে পারে যে যদি তার সাথে ৯ বছরে সহবাস নাই করে থাকেন তাহলে এত ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারন কি? এর উত্তর হচ্ছে, মহানবী ﷺ এর ইচ্ছা হয়েছিল তাই তিনি কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করেছেন। বিষয়টা এটা না, মূল বিষয়টা হচ্ছে তিনি কি আদো ৯ বছর বয়সী আয়শার সাথে সহবাস করেছিলেন কিনা সেটা। বর্তমান যুগেত ১২/১৩ বছরের মেয়েরাও নিজের প্রেমিকের সাথে সেচ্ছায় সেক্স করে। যাই হোক সেগুলা বাদ দিই। কম বয়সি আয়শা (রা) কে বিয়ে করার অনেক কারনই থাকতে পারে। ১. আল্লাহর আদেশ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪১৮, ৫০৭৮] ২. ভালোবাসা [বুখারি ৩৬৬২; মুসলিম ২৩৮৪, ২৮১৫, সহিহ মুসলিম, ৪/১৮৯১; তিরমিযী ৩৮৯০; মুসনাদে আহমদঃ ২৫৫, ২১৭, ৬/৬৪, ৬/২৫৮; সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৬৪০, ৮৯৭; সীরাতে আয়েশা-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী (রহ), পৃষ্ঠা-১৪৯] ৩. আয়শা (রা) অনেক বেশি জ্ঞানী ছিলেন [সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা- ৭৬৮; আল-মুসতাদরাক, ৪/১৫; তাফসীর ইবনে কাছীর, ৩/৪৮৭; সুনানে তিরমিযী ৩৮৮৩, ৩৮৮৪; মিশকাত ৬১৯৪; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৮৫] ৪. আবু বকর (রা) এর সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালি করা আসল আর্টিক্যালটি - https://islamicknowledge80.blogspot.com/2022/04/blog-post_29.html

Comments