knowledge of Islam-মঙ্গলবার, মার্চ ২২, ২০২২
সময়ের বিখ্যাত নাস্তিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাস্তিক জনগণের দাবি, "হয়তো আনুমানিত ৪শত কোটি বছর আগে পানিতে নিজ থেকে আপনা আপনি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি, তারপর সেই এক কোষী প্রাণ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকোষী প্রাণের সৃষ্টি হয়।" আবার অনেকের ধারনা, “জীবের উৎপত্তি হয়ত নিজ থেকে আপনা আপনি ভাবে জড় বস্তু থেকে হয়েছে।” এখানে "হয়তো" শব্দটি ব্যাবহার করে তারা যা বলেন তা শুধুমাত্র তাদের ধারণা! প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরনের বক্তব্য কি আদৌও গ্রহণযোগ্য কিনা?
প্রাণ বা রূহ কি? এটা 'প্রাণশক্তি' সেই শক্তি বা সেই জিনিস যা জড়কে জীবীত করে তুলতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, আপনার হাতের স্মার্টফোনটির হার্ডওয়ারটি জড়। যতক্ষণ এতে সফটওয়্যার ইনস্টল না করা হবে, ততক্ষণ এটি কাজ করবেনা। তেমনি, মানুষের দেহটিকে হার্ডওয়ার এর সাথে তুলণা করা যেতে পারে, যা জড়৷ মানুষের প্রাণ বা জীবনকে সফটওয়্যার এর সাথে তুলণা করা যেতে পারে।
আরেকটু পরিষ্কার ধারণার জন্য একটু হাইপোথেটিক্যাল উদাহরণ দেই: মনে করুন, যদি আমরা প্রাণ একবস্তু থেকে অন্য বস্তুতে সঞ্চারণ করতে পারতাম, তবে যেকোনো জড় বস্তুকে জীবন দান করতে পারতাম। এমনকি মৃতকেও জীবীত করতে পারতাম। ধরুণ, একটি টেবিলে আপনি প্রাণের সঞ্চারণ করলেন, ফলে টেবিলটি জীবীত হয়ে গেলো! একটি বইতে জীবন সঞ্চারণ করলেন, ফলে বইটি জীবন্ত হয়ে উঠলো! 'জীবন' কিংবা 'প্রাণশক্তি' মুলত এমনই। যদিও বাস্তবে এটা সম্ভব না, কারণ, আমাদের হাতে সেই ক্ষমতা নেই এবং বই বা টেবিলের ক্ষমতা নেই সেই 'প্রাণ' কে ধারণ করার। কাউকে রূহ দেওয়াত মানুষের পক্ষে অসম্ভব কিন্তু সামান্য দেহ সৃষ্টি করাও মানুষের পক্ষে অসম্ভব বললেই চলে।
তোমরা কেমন করে আল্লাহকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। [সুরা বাকারা আয়াত ২৮]
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনিই প্রাণহীন থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে প্রাণহীন বেরকারী। তিনিই তো আল্লাহ্, কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?” [সূরা আনআম, আয়াত ৯৫]
নিজ থেকে আপনা আপনি প্রাণ সৃষ্টি!!
আচ্ছা বিজ্ঞানিরা কি আজ পর্যন্ত কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টিতে সফল হয়েছে? আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক ল্যাবরেটরিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানিরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করেও যদি কৃত্রিম প্রাণের সৃষ্টি না করতে পাড়ে তবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও বিরূপ পরিবেশে কিভাবে প্রাণের সৃষ্টি হলো কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া? ধরেনিলাম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল নিয়ন্ত্রক ছাড়াই! সেই এককোষী প্রাণ থেকে কি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর সৃষ্টি সম্ভব? জবাব হচ্ছে "না" কখনোই সম্ভব নয়। যদি স্রষ্টা ছাড়া প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই একজন স্রষ্টা রয়েছে যিনি অসীম মমতায়, অত্যন্ত সুক্ষ পরিকল্পনায় গঠন করেছেন এই মহাবিশ্ব ও সৃষ্টি করেছেন সকল প্রাণ! আল্লাহ কোরআনে বলেছেন -
আল্লাহ্ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধায়ক। [সূরা যুমার, আয়াত ৬২]
তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না। তোমার রবের গুপ্তভান্ডার কি তাদের কাছে আছে, না তারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণকারী? নাকি গায়েবী বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখছে? [সূরা আত-তুর, আয়াত ৩৫-৩৭,৪১]
একটু বিশ্লেষণে যাচ্ছি! প্রাণীদেহের অন্যতম নিয়ামক কোষ। কোষ সম্পর্কে প্রথম সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় ১৯৩৯ সালেজার্মান প্রানীবিদ থিওডোর স্বোয়ানের কাছ থেকে। এর আগে কোষের সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কোন সুস্পষ্ট ধারনা ছিল না। প্রতিটি কোষের মূল উপাদান হচ্ছে প্রোটিন ( Protein )। প্রোটিন হচ্ছে কোষের প্রোটোপ্লাজমের মূল উপাদান এবং সকল উদ্ভিদও প্রানি দেহে এটি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। আবার প্রোটিন হল অসংখ্য অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত বৃহদাকার যৌগিক জৈব অনু।এই অ্যামিনো এসিড গুলি প্রোটিনের ভিতরে শুধু পেপটাইড নামক এক প্রকার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। একটি অ্যামিনো এসিডের কার্বোক্সিল মূলক ( COOH-) অপর একটি অ্যামিনো এসিডের অ্যামিনো গ্রুপের সাথে (NH) যে বন্ধনে যুক্ত থাকে তাকে পেপটাইড বন্ধন বলে। কোষের বাইরে এইঅ্যামিনো এসিড গুলি আরো অনেক বন্ধনে যুক্ত হয় কিন্তু কোষের ভিতর এই অ্যামিনো এসিড গুলি শুধুমাত্র পেপটাইড বন্ধনেই আবদ্ধ থাকে। প্রোটিন গঠনকারী এই অ্যামিনো এসিডের রয়েছে ২০টি প্রকারভেদ। এই ২০ প্রকারের অ্যামিনো এসিড নিজেদের ভিতর সঠিক ক্রমানুসারে সজ্জিত হতে হবে। একটি সাধারন আকারের প্রোটিন কম পক্ষে ৫০০ টি অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে সবচেয়ে অবাক করা জিনিস হল এই অ্যামিনো এসিড গুলি আবারডান হাতি ও বাম হাতি হয়। প্রোটিন গঠনে শুধু মাত্র বামহাতি অ্যামিনো এসিড গুলি যুক্ত থাকে। প্রোটিন কাঠামোর মাঝে যদি একটিও ডান হাতি অ্যামিনো এসিডের প্রবেশ ঘটে তবে এই প্রোটিন কাঠামোটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একটি অকার্যকর খন্ডে পরিনত হবে। এখন আমরা একটি প্রানী কোষের মূল উপাদান প্রোটিনের যে মূল বৈশিষ্ট্য গুলি পেলাম তা হল প্রোটিনের মাঝে অ্যামিনো এসিড গুলি শুধুমাত্র পেপটাইড বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ থাকে, প্রোটিন সমূহের সংগঠনে ব্যবহৃত ২০ টি বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড গুলি শুধু মাত্র বাম হাতিহতে হবে, এখন ডারউইনের মতে কাঁকতলিয় ভাবে যদি প্রানের উৎপত্তি হয়ে থাকে তাইলে সামান্য ৫০০ অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রোটিন অনু গঠিত হবার সম্ভাবনা পরিসংখ্যানের Probability অনুসারে দাড়ায় যথাক্রমে:
১. সঠিক ক্রমানুসারে অবস্থানের সম্ভাবনা = ১/২০^৫০০= ১/১০^৬৫০ (যেহেতু Log { (20)^500}=500 Log20=650 এবং Log { (10)^650}= 650log10=650)
২. সবগুলি বাম হাতি হবার সম্ভাবনা = ১/২^৫০০= ১/১০^১৫০ (পূর্বের নিয়মে লগারিদম করে)
৩. পেপটাইড বন্ধনে আবদ্ধ হবার সম্ভাবনা= ১/২^৪৯৯= ১/১০^১৫০ (পূর্বের নিয়মে লগারিদম করে] সর্ব মোট সম্ভাবনা= ১/১০^৯৫০ অর্থ্যাৎ ১০^৯৫০ ভাগের একভাগ)
এখন দেখা যাচ্ছে ৫০০ অ্যামিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত একটি সাধারন প্রোটিন মলিকুল কাঁকতলিয় ভাবে গঠিত হবার সম্ভাবনা ১ সংখ্যাটির পরে একটানা ৯৫০ টি শূন্য বসালে যেসংখ্যাটি দাঁড়ায় সেই সংখ্যাটি দ্বারা ১ সংখ্যাটি ভাগ করলে যে ভাগফল দাঁড়াবে, ঠিক ততভাগের একভাগ অর্থাৎ মোট সম্ভবনা ১/১০^৯৫০। বুঝতেই পারছেন এটা নিতান্তই কাগুজে সম্ভাবনা বা Probability on paper. বাস্তবে এটি ০ সম্ভাবনারই নামান্তর। পরিসংখ্যান এর নিয়ম অনুযায়ী ১০^৫০ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনাকে শুন্য সম্ভাবনা হিসাবেই ধরা হয়। এই যদি হয় সামান্য একটি প্রোটিন গঠিত হবার সম্ভাবনা তাইলে ১ মিলিয়ন প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের দেহ কাঁকতলিয় ভাবে গঠন হওয়া কতটা সম্ভব আপনারা একটু চিন্তা করেন!! আর এই ভাবে যদি কখনো একটি প্রোটিন গঠিত হয় তাইলে এই সময় লাগবে বিগব্যাং সংগঠিত হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত যত সময় লেগেছে ততদিন। আর আমি এখানে শুধু প্রোটিনের কথাই বললাম, মাইটোকন্ড্রিয়া, সাইটোপ্লাজম গঠন হওয়া যে আর কত কঠিন তা আপনারা বুঝে নিন। এখন তাইলে প্রশ্ন আসে প্রানের উৎপত্তি তাইলে কিভাবে হয়েছে? হঠাৎ করে?
বিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার ফ্রেড হয়েল (Sir Fred Hoyle) পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকারান্তরে এ-প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তার গ্রন্থ The Intelligent Universe-এ লিখেছেন: “একটা টর্নেডোর ধাক্কায় হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ একত্রিত হয়ে একটি বোয়িং-৭৪৭ তৈরী হয়ে যাবার সম্ভাবনা যতোটুকু, দৈবক্রমে পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির সম্ভাবনাও ততোটুকু।” [সূত্র: Nature, 12 November, 1981]
ডগলাস এক্স যে বিষয়গুলো সম্ভাব্যতা কমাতে পারে সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে (অর্থাৎ বাদ দিয়ে) ১৫০টি অ্যামাইনো এসিডের একটি প্রোটিন তৈরী দূর্ঘটনাক্রমে হওয়ার সম্ভাব্যতা হিসেব করেছেন ১০ এর পরে ১৬৪টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি হয় (তথা ১০১৬৪) এর মধ্যে ১ বার অর্থাৎ ১/১০^168। বিল ডেম্ব্সকি হিসেব করে দেখিয়েছেন আমাদের দর্শনযোগ্য মহাবিশ্বে ১০৮০টি এলিমেন্টারি পার্টিকল আছে, বিগব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত ১০১৬ সেকেণ্ড পার হয়েছে এবং দুটো বস্তুর মধ্যে যে কোন বিক্রিয়া প্ল্যাঙ্কটাইম ১০-৪৩ সেকেণ্ড এর চেয়ে কম সময়ে হতে পারে না। এ সবগুলো সংখ্যাকে একত্রিত করলে দাড়ায় ১০১৩৯; অর্থাৎ মহাবিশ্বের বয়স, মহাবিশ্বের গাঠনিক এলিমেন্টারি পার্টিকেলের সংখ্যা এবং পার্টিকেলের মধ্যে বিক্রিয়া হতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সময়কে একত্রে বিবেচনার পরও উপর্যুক্ত প্রোটিনটি তৈরী হওয়ার সম্ভাব্যতা ট্রিলিয়ন ভাগ পিছিয়ে পড়ে। সহজ কথায় উক্ত প্রোটিনটি তৈরী হতে এখন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেকেণ্ড (১০২৫বা ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ বা দশ লক্ষ কোটি কোটি সেকেণ্ড বা একত্রিশ কোটি বিলিয়ন বছর) অতিবাহিত হতে হবে। [Stephen C. Meyer, Signature in The Cell; পাভেল আহমেদ, বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৭: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ২ বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৮: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ৩ (ছক্কা বনাম প্রোটিন)]
"কীভাবে অজীবন্ত অণু জীবিত অণুতে পরিণত হল, এবং অজৈব কিভাবে জৈব হল? কীভাবে রসায়ন জীববিজ্ঞানের জন্ম দেয়?" এই প্রশ্নগুলোর জবাবে `What is life? How chemistry becomes biology‘ বইটির লেখক Addy pross বলেন, "আমরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাবনা৷"
স্লাইডেন এবং সোয়ান যারা কোষ তত্ত্বের প্রবর্তক তাঁরা বলেছেন ”Every cell comes from a pre-existing cell” প্রত্যেকটি কোষ শূন্য থেকে আসে না। তার অবশ্যই একটি মাতৃকোষ থাকে। ভারউইনের বিবর্তবাদ এটির ব্যাখ্যা দিতে পারে না যা কিভাবে জীবনের উৎপত্তি হল। আর সে জন্য বিবর্তনবাদ একটি ভ্রান্ত তত্ত্বে পরিণত হয়েছে।
DNA হচ্ছে জীবনের রাসায়নিক ভিত্তি। এ DNA এর উপাদান ৫টি কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও ফসফরাস। DNA গুলো অ্যামিনো এসিড তৈরী করে আর এই অ্যামিনো এসিডগুলো প্রোটিন তৈরী করে। আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলে একটি DNA অনু যদি হঠাৎ করে তৈরী হত, অর্থাৎ, ধরুণ, একটি পাত্রে কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), নাইট্রোজেন (N) অক্সিজেন (O), ফসফরাস (P) ইত্যদি মৌলসমূহ রয়েছে; পত্রটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ও চাপ উভয়ই বিদ্যমান; এমতাবস্থায়, এসকল মৌলসমূহ নিজেরা বিক্রিয়া করে একটা DNA অণু তৈরীর সম্ভাবনা 1/10^268 …………….……………….0000000000000000000001 যা শুণ্যের কাছাকাছি। এমনকি বিশ্ব জগতের সব অনুপরমানু একত্রিত করেও একটি DNA তৈরী করা সম্ভব না। এতো গেলো ডারউইনিজম প্রস্তাবিত অসম্ভব উপায়ে DNA তৈরীর সম্ভাবনা; সেই DNA থেকে একটা নিউক্লিয়াস, অতপর, তা থেকে একটা কোষ!— এগুলো তো অসম্ভবের উপর আরো বড় অসম্ভব! আলোচনার খাতিরে যদি ধরেই নেই, এমন অসম্ভবও কোনোভাবে সম্ভব হয়েছিল; কিন্তু, DNA একটা জড় অণু মাত্র! আরা কোষসমূহ জীবীত, যাতে প্রাণ আছে! তাহলে জড় DNA অণু থেকে জীবন্ত কোষ হওয়া কীভাবে সম্ভব হল?
সম্ভবনা গুলো যদি সম্ভব হয়ও তারপরও আরো কিছু সমস্যা থেকেই যায়। যেমন ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সের মতে, “দুটি অ্যামিনো অ্যাসিড স্বতঃস্ফূর্তভাবে জলীয় পরিবেশে পরস্পর যুক্ত হয় না। বরং, বিপরীত বিক্রিয়া তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী অনুকূলে থাকে”[Committee on the Limits of Organic Life in Planetary Systems, Committee on the Origins and Evolution of Life, National Research Council, The Limits of Organic Life in Planetary Systems, p. 60]
অন্যকথায়, পানি প্রোটিন অনুকে ভেঙে ফেলে, তাই উক্ত পরিবেশে প্রোটিন তৈরি হতে পারে না। আরও আগে, স্ট্যানলি মিলার দেখিয়েছিলেন যে, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যাডেনিন ও গুয়ানিনের অর্ধায়ু প্রায় এক বছর, ইউরাসিলের ১২ বছর, এবং সাইটোসিনের ১৯ দিন।[Levy, M and Miller, S.L., The stability of the RNA bases: Implications for the origin of life, Proc. Natl. Acad. Sci. USA 95(14):7933–38, 1998.] সাধারণত ভেন্ট [ফাটলের] তাপমাত্রা ৩৫০ ডিগ্রি [সমুদ্রের তলদেশে উচ্চচাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস] সেলসিয়াস হতে পারে। মিলারের গবেষণা অনুযায়ী, উক্ত তাপমাত্রায় অ্যামিনো এসিডের অর্ধায়ু কয়েক মিনিট, ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সুগারের অর্ধায়ু সেকেন্ডের এককে নেমে আসে। আর ডিএনএ/আরএনএ তৈরির জন্য সুগারের বন্ধন হওয়া জরুরি। পলিপেপটাইডের অর্ধায়ু কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে উঠা-নামা করে। আরএনএ ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জলবিশ্লেষিত হয়ে যায়, এবং ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মাত্র কিছু সেকেন্ড টিকে থাকে। মিলারের মতে, একই ভেন্ট নিউক্লিওটাইড ধ্বংসের জন্য দায়ী।[Stanley L. Miller and Jeffrey L. Bada, “Submarine Hot Springs and the Origin of Life,” Nature 334 (1988): 609–11; Matthew Levy and Stanley L. Miller, “The Stability of the RNA Bases: Implications for the Origin of Life,” Proceedings of the National Academy of Sciences, USA 95 (1998): 7933–38.] অনেক জটিল অ্যামিনো এসিড যেমন- সেরিন ও থ্রিওনিন তাপ প্রয়োগে নষ্ট হয়ে যায়।[Gish, D.T., Origin of life: The Fox thermal model of the origin of life, Impact 33, Institute for Creation Research, March 1976.]
আরেকটি সমস্যা হল, অ্যামোনিয়া তৈরি, কারন প্রাণসৃষ্টির জন্য অ্যামোনিয়া খুব জরুরি। আর আদিম পৃথিবীতে অ্যামোনিয়া যথেষ্ট পরিমাণে ছিল না। তবে রসায়নের মূলনীতি অনুযায়ী, অ্যামোনিয়া তৈরির জন্য নাইট্রোজেনকে হাইড্রোজেন সালফাইড বা আয়রন সালফাইডের বিক্রিয়াপথে পরিচালিত করতে হবে। গবেষণাগারের তথ্যানুযায়ী, হাইড্রোজেন সালফাইড পথ খুব সামান্য পরিমাণ অ্যামোনিয়া প্রস্তুত করে, যা প্রাণ সঞ্চারের জন্য যথেষ্ট নয়। আর আয়রন সালফাইড বিক্রিয়াপথ খুব ধীর গতির।[Martin A. A. Schoonen and Yong Xu, “Nitrogen Reduction under Hydrothermal Vent Conditions: Implications for the Prebiotic Synthesis of C-H-O-N Compounds,” Astrobiology 1 (2001): 133–42.]
মিলার দেখিয়েছেন যে, আজকের জলতাপীয় ফাটলগুলোর ঘনত্ব এমন যে, মহাসাগরগুলোর সমস্ত পানি ১০ মিলিয়ন বছর লম্বা চক্রের মধ্যে পরিচলন পদ্ধতিতে চলাচল করে। আজ থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, জলতাপীয় ফাটলের ঘনত্ব আরও অনেক বেশি ছিল। অন্যকথায়, পানির চলাচলের সময় অনেক কম ছিল। যদি কোনভাবে প্রাণ প্রয়োজনীয় অনু তৈরি হয়েও থাকে, তা মহাসাগরের ফাটল পেরিয়ে বিক্রিয়াস্থল থেকে দূর সাগরে হারিয়ে যেত। কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া উন্নত সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ‘ডিএনএ’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতিটি কাজ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে খুব জটিল যন্ত্রাংশে সম্পাদিত হয়। তাহলে সমুদ্রের অনিয়ন্ত্রিত বিক্রিয়াকে কিভাবে ATP তৈরির সাথে তুলনা করা যায়? প্রানীর জন্য ২০ প্রকারের অ্যামিনো এসিড দরকার। অন্যসকল অ্যামিনো এসিড প্রাণের কোন কাজে আসে না। আমাদের ডিএনএ-তে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য কোড করা আছে। হাইড্রো-থার্মাল ভেন্টে ডিএনএ/আরএনএ ছিল না। আর প্রাকৃতিকভাবে ডিএনএ বা আরএনএ অদ্যাবধি উৎপন্ন হতে দেখা যায় নি, কিংবা তা উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘তথ্য’ প্রকৃতি সরবরাহ করতে পারে না। প্রফেসর পল ডেভিস বলেন, “...প্রথম কোষকে জীবন্ত করে তুলতে অদ্ভুত গঠনের তথ্য কোথা থেকে আসলো? কেউ জানে না...” [Davies, P., Life Force, New Scientist, 1:27–30, 18 September 1999.] “কোন প্রাকৃতিক আইন [ডিএনএ তৈরির] তথ্য সরবরাহ করতে পারে না” [Davies, P., The Fifth Miracle, Penguin Books, London, UK, p. 100, 1999.]
এতক্ষণে অবশ্যই বুঝতে পেড়েছেন প্রাণের উৎপত্তি কত জটিল বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে সামান্য এক কোষী প্রাণের সৃষ্টি যদি এতটা জটিল ও প্রায় অসম্ভব হয় তবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সৃষ্টির জটিলতা কি আমরা কল্পনা করতে পাড়ি? অথচ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান স্রষ্টা তার কাছে এগুলা কোন জটিল বিষয় না। আরে মানুষের সেই ক্ষমতা নেই যে একটি শুক্রানু তৈরি করে সেটাকে মানুষ বানাবে। পাঠককে বলছি আপনি জানেন কি আপনার জন্মের সম্ভাব্যতা ৪০০ ট্রিলিয়ন ভাগের প্রায় ১ ছিল! মানুষ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ উৎপাদন করে, যেমন একটি পদ্ধতি হল টিস্যু কালচার। একটি উদ্ভিদ তৈরি করতেও মানুষকে প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়, তাও নতুন উদ্ভিদ তৈরি করতেও একটি মাতৃউদ্ভিদ থাকা বাধ্যতা মূলক। কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -
তোমরা ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে? সেটা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমরা সৃষ্টি করি? তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি সেটাকে অংকুরিত কর, না আমরা অংকুরিত করি? তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে আমাকে জানাও, তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল, তোমরাই কি এর গাছ সৃষ্টি কর, না আমরা সৃষ্টি করি? (সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ৫৮,৫৯, ৬৩,৬৪,৬৮,৭১,৭২)
কিছু কথা বলে রাখা ভালো। কোষকেন্দ্রের ধরনের উপর ভিত্তি করে কোষ প্রধানত দুই প্রকার: আদি কোষ এবং প্রকৃত কোষ, প্রকৃত কোষ হচ্ছে উদ্ভিদ কোষ এবং প্রাণী কোষ। সকল কোষেই জিনের বংশগতিক পদার্থগুলো বহনের জন্য ডিএনএ এবং এনজাইমসহ অন্যান্য প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য আরএনএ উপস্থিত থাকে। উপরেত খুব সীমিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সবগুলো আলাদা আলাদা বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে হয়ত আরো ৬/৭ টা আর্টিক্যাল লিখতে হবে।
আদি কোষ গঠন - এরা সাধারণত এককোষী, সরল ও জটিলতা বর্জিত। রাইবোজোম, প্লাজমা ঝিল্লি, ফ্লাজেলা, পিলি, জিনোম (ডিএনএ), ক্রোমোসোম, কোষ প্রাচীর, পিগমেন্ট, প্লাজমিড, ভলিউটিন ইত্যাদি
উদ্ভিদ কোষ গঠন - এরা সাধারণত এককোষী থেকে বহুকোষী ও অপেক্ষাকৃত জটিল প্রকৃতির। কোষ প্রাচীর, অ্যারগ্যাসটিক পদার্থ (সঞ্চিত বস্তু, ক্ষরিত পদার্থ, বর্জ্য পদার্থ), নিউক্লিয়াস (সকল উপাদান সহ), সাইটোসোল, ক্রোমোসোম, অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা, প্লাস্টিড, রাইবোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, সাইটোস্কেলিটন, গলগি বস্তু, সাইটোপ্লাজম, ভেসিক্ল, লাইসোজোম, সেন্ট্রিওল, কোষ গহ্বর, মাইক্রোবডিজ, সেন্ট্রোজোম, প্লাজমা ঝিল্লি, কোষ ঝিল্লি, ফ্লাজেলাম, সিলিয়াম ইত্যাদি
প্রাণী কোষ গঠন - এরা সাধারণত এককোষী থেকে বহুকোষী ও অপেক্ষাকৃত জটিল প্রকৃতির। নিউক্লিয়াস (সকল উপাদান সহ), ক্রোমোসোম, অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা, রাইবোজোম, সাইটোস্কেলিটন, গলগি বস্তু, সাইটোপ্লাজম, মাইটোকন্ড্রিয়া, ভেসিক্ল, ক্লোরোপ্লাস্ট, এবং অন্যান্য প্লাস্টিড, ক্রন্দ্রীয় গহ্বর, টনোপ্লাস্ট (কেন্দ্রীয় গহ্বরের ঝিল্লি) পারঅক্সিজোম (e.g. গ্লায়োক্সিজোম) কোষ গহ্বর, সেন্ট্রিওল, প্লাজমা ঝিল্লি, ফ্লাজেলাম (শুধুমাত্র পুং জননকোষে থাকে), কোষ প্রাচীর, প্লাজমোডেসমাটা, সাইটোসোল, কোষ ঝিল্লি, মেটাপ্লাস্টিক বডিস, লাইসোজোম, মাইক্রোবডিজ ইত্যাদি।
অনেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখিয়ে বলে এভাবে, সেভাবে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন নাস্তিকদের বা বিজ্ঞানীদের অনেকে বলে থাকে যে, “পৃথিবীতে যখন তাপমাত্রা কমে 1000 ডিগ্রি সেলসিয়াস তখন বায়ুমন্ডলে অবস্থিত বিভিন্ন অজৈব অণু যেমন হাইড্রোজেন, এমোনিয়া , মিথেন ,জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড , ইত্যাদির সঙ্গে আকাশের বজ্র বিদ্যুৎ যা তড়িৎ শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ও অতিবেগুনি রশ্মি ইত্যাদি মিলিত প্রক্রিয়ায় সমুদ্র লাভা মিশ্রিত গরম জলে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সম্ভব হয়েছিল ও এর থেকেই সরল জৈব অণু যেমন অ্যামাইনো এসিড ,ফ্যাটি এসিড ও পরে তৈরি হয় জটিল জৈব অণু যেমন প্রটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড যা ডিএনএ ও আরএনএ তৈরি করতে সক্ষম , এভাবেই সমুদ্রের জলে কোষ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে ওঠার পর সৃষ্টি হয় আদিকোষ বা প্রোটোসেল যা থেকে পরে ব্যাকটেরিয়া বা এককোষী জীব সৃষ্টি হয়, প্রায় দু বিলিয়ন বছর আগে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মত কিছু ব্যাকটেরিয়া যা অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম ছিল তাদের জন্ম হয় পৃথিবীতে ও তাদের জন্য পৃথিবীতে মুক্ত অক্সিজেন এর আবির্ভাব ঘটল ও মুক্ত অক্সিজেন এর ফলে শ্বসন যুক্ত জীব কোষের সৃষ্টি হয় ও জীবের সৃষ্টি হয়।”
এখানে যা কিছু বলা হয়েছে সবকিছুই শুধু ধারনা কারন এই মতবাদের পক্ষে কোন শক্তিশালী ও গ্রহনযোগ্য প্রমান নেই। এবং কাকতালিয় ভাবে প্রাণ সৃষ্টি যে একপ্রকার অসম্ভব তা আমি আগেই প্রমান করেছি। যদি প্রাণ সৃষ্টি এতই সহজ হত তাহলে বর্তমানে কেউ সেই প্রক্রিয়ায় কোন জীব সৃষ্টি করছে না কেন? প্রাণী ও উদ্ভিদকোষত অনেক দূরের কথা শুধু একটি আদিকোষী জীব সৃষ্টি করাই কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত, যদি তৈরি করেও ফেলে তাহলেও সেটাকে কৃত্রিমভাবে এককোষী জীবের মত হুবহু বৈশিষ্ট ও নিজস্বতা দেওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব।
মানুষ কৃত্রিম প্রাণ সৃষ্টি করেছে!!
কিছু নাস্তিক একটি নিউজ অনেক বেশি ছড়াচ্ছে সেটা হল, ‘কৃত্রিম জীবন্ত কোষ সৃষ্টিতে সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা।’ এরকম আরো কয়েকটা আর্টিক্যালের টাইটেল দেখেই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম, যখন সেটা নিয়ে সব তথ্য বের করি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম নাস্তিকদের অজ্ঞতা বা মিথ্যাচার সম্পর্কে অথচ বিজ্ঞানীরা কোষ সৃষ্টিই করেনি বাস্তবে কারন সৃষ্টি করা মানে অনস্তিত্ব থেকে অস্বিত্বে আনা। বিজ্ঞানীরা কেবল পরিবেশ থেকে উপাদান সংগ্রহ করে জেনেটিক সফ্টওয়্যার তৈরী করেন এবং সেটি অন্য এক ব্যাকটেরিয়ার কোষে প্রতিস্থাপন করেন৷ যা পরে একে একে এই জেনম একটি থেকে আরেকটি ব্যাকটেরিয়ায় প্রতিস্থাপিত করা হয়৷ গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে একটি নতুন কৃত্রিম কোষ বলে অভিহিত করছেন। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন -
হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল। [সূরা হজ্জ আয়াত ৭৩]
মাইকোপ্লাজমা জেনিটালিয়ামে পৃথিবীর যেকোন মুক্ত-জীবিত জীবের ক্ষুদ্রতম জিনোমগুলির মধ্যে একটি রয়েছে, যা মাত্র 525টি জিন রয়েছে। এটি E. coli এর মতো অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার আকারের একটি ভগ্নাংশ, যার 4,288 টি জিন রয়েছে। এম. জেনিটালিয়ামের ক্ষীণ জিনোম এটিকে স্ট্যানফোর্ড এবং জে. ক্রেগ ভেন্টার ইনস্টিটিউটের গবেষকদের জন্য প্রথম লক্ষ্য বানিয়েছে যারা সফ্টওয়্যারে একটি জীবকে অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন।
স্ট্যানফোর্ডের মার্কাস কভার্টের নেতৃত্বে জৈব প্রকৌশলীরা ব্যাকটেরিয়াটির মডেলিং করতে সফল হন এবং কিছু দিন আগে তাদের কাজটি সেল জার্নালে প্রকাশ করেন। চিত্তাকর্ষক বিষয় হল এই সাধারণ জীবটিকে আংশিকভাবে অনুকরণ করতে তাদের কত অশ্বশক্তি প্রয়োজন। দেখা যায় ১২৮টি কম্পিউটারের একটি গুচ্ছ কাজ করেছে ৯ থেকে ১০ ঘন্টা যাবত কোষের জীবনচক্র প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ২৫ ধরনের অণুর তথ্য তৈরি করতে।
আবার সেলুলার জটিলতার গভীরতা এবং প্রশস্ততা প্রায় অবিশ্বাস্য, এবং পরিচালনা করা অনেক কঠিন, এমনকি মোরের ল অনুসারেও। এম. জেনিটালিয়াম মডেলের জন্য ২৮টি সাবসিস্টেমকে পৃথকভাবে মডেল করা এবং একীভূত করা প্রয়োজন, এবং কাজের অনেক সমালোচক অভিযোগ করেছেন যে সিমুলেশনটিকে বাস্তবসম্মত কিনা তা বিবেচনা করার প্রয়োজন কারন শেষ পর্যন্ত যা যা প্রয়োজন হবে তার মাত্র একটি ভগ্নাংশ এটি।
"এই মুহুর্তে, একটি একক সেল শুধু একবার বিভক্ত করতে একটি সিমুলেশন চালানো হলে তার জন্য প্রায় ১০ ঘন্টা সময় লাগে এবং অর্ধেক গিগাবাইট ডেটা তৈরি করে," এটি সেখানের প্রধান বিজ্ঞানীদের একজন কভার্ট নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন। তিনি আরো বলেন, "আমি এই ফ্যাক্টটিকে সম্পূর্ণ আকর্ষণীয় বলে মনে করি, কারণ আমি জানি না যে কেউ কখনও জিজ্ঞাসা করেছে কিনা যে একটি জীবন্ত জিনিস সত্যিই কতটা ডেটা ধারন করে রাখে।"
কৃত্রিম প্রাণ উদ্ভাবণের নেতৃত্ব দানকারী ড. ক্রেইগ ভেন্টর বলেছেন, “আমরা একে ‘শূণ্য থেকে জীবন সৃষ্টি’ হিসেবে ভাবছিনা বরং আমরা বিদ্যমান জীবন থেকেই নতুন জীবন সৃষ্টি করেছি সংশ্লেষিত ডিএনএ দ্বারা কোষগুলোকে নতুনভাবে প্রোগ্রাম করার মাধ্যমে। আমরা প্রোটিনও কৃত্রিমভাবে তৈরি করিনি, কোষও কৃত্রিমভাবে তৈরি করিনি এগুলো সবই ক্রোমোসোমের নির্দেশনা অনুসারে তৈরি হয়েছে।” তিনি আরো বলেছেন, “এটি মুক্তজীবি শুধু এই অর্থে যে এটি গবেষণাগারে সমৃদ্ধ কালচার মাধ্যমে জন্মাতে পারে, সুতরাং এটি বাইরের পরিবেশে জন্মাতে পারবেনা।” তিনি নিজের গবেষণা সম্পর্কে বিস্তারীত আলোচনা করেতে যেয়ে বলেছে, “এক পর্যায়ে আমরা আবিষ্কার করলাম যে ১০ লক্ষ ডিএনএ বেস পেয়ারের মধ্যে মাত্র একটা ভুল থাকায় প্রাণ আসেনি!”
একটি কোষ, একটি বিভাজন, অর্ধেক গিগাবাইট ডাটা। এখন অনুমান করুন যে একটি পিনের মাথায় লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া বসতে পারে এবং তাদের অনেকগুলি এম. জেনিটালিয়ামের চেয়েও জটিল আকারের একটি ক্রমে বিন্যাস্ত। অথবা ধারণা চিন্তা করুন যে মানবদেহ ১০ ট্রিলিয়ন (বড়, জটিল) মানব কোষ এবং প্রায় ৯০ বা ১০০ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া কোষ দ্বারা গঠিত। এটি মোট প্রায় ১০০,০০০,০০০,০০০,০০০ কোষ।
সময়ের বিখ্যাত আধুনিক নাস্তিকতার জনক নামে খ্যাত নাস্তিক এনথনি ফ্লিউ আস্তিক হওয়ার পর বলেছিলেন যে, “DNA ইনভেস্টিগেশন থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রাণ (Life) সৃষ্টিতে অবশ্যই অবশ্যই Intelligence তথা বুদ্ধিমান সত্ত্বার উপস্থিতি আবশ্যক।” There is a God এই বইটি তারই লেখা।
প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান নিয়ে, বাস্তব ডিএনএ দেখে কপি পেস্ট করে কৃত্রিম ডিএনএ বা কৃত্রিম কোষ তৈরি করতে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। আর এই ডিএনএ সহ প্রাণ নাকি আপনা আপনি চলে এসেছে!
Comments
Post a Comment