আল্লাহ কি না বানিয়ে ধ্বংশ করতে পারবে? আল্লাহ কি চারটি বাহু ছাড়া চতুর্ভুজ বানাতে পারবে? এ মাত্রই সবাইকে একেবারে ভালো বানিয়ে স্বর্গে রেখে দিতে পারবে যদি অতি দয়ালু হয়? অতি দয়ালু বলতে তিনি কতটা দয়ালু বোঝাচ্ছেন?
আল্লাহ কি না বানিয়ে ধ্বংশ করতে পারবে? আল্লাহ কি চারটি বাহু ছাড়া চতুর্ভুজ বানাতে পারবে? এ মাত্রই সবাইকে একেবারে ভালো বানিয়ে স্বর্গে রেখে দিতে পারবে যদি অতি দয়ালু হয়? অতি দয়ালু বলতে তিনি কতটা দয়ালু বোঝাচ্ছেন?
রুবেল আহমেদ-এর প্রোফাইল ফটো
রুবেল আহমেদ
আপনি "আল্লাহ্র ক্ষমতা" বিষয়ে ভুল বুঝেছেন।
আল্লাহ্ তায়ালা সে সবকিছু পারেন, যা কিছু যৌক্তিক।
আল্লাহ্ তায়ালা সে সবকিছু পারেন, যা কিছু তিনি চান।
আর,
সর্বোচ্চ ক্ষমতা আল্লাহ্ তায়ালার।
তাঁর সমকক্ষ কেও নেই।
"এ মাত্রই সবাইকে একেবারে ভালো বানিয়ে স্বর্গে রেখে দিতে"
যৌক্তিক কারণে এটা তিনি পারবেন বলে মনে হয় না, কারণ যারা ভালো, কোনো প্রকার খারাপ কাজ করে না তারা ফেরেস্তা। মানুষকে যদি তিনি নিজে থেকেই ভালো বানিয়ে দিয়ে জান্নাতে পাঠিয়ে দেন, তাহলে এই পৃথিবীতে তাকে পাঠানোর কোনো দরকার ছিলো না। ফেরেস্তাদেরকেই জান্নাতে রেখে দিতে পারতেন।
"দয়ালু":
এই পৃথিবীতে আল্লাহ্ তায়ালা যা কিছু দেন সেসবকিছু মূলত কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে এবং প্রাকৃতিকভাবে। তাই ওগুলোকে নিজের প্রাপ্য ভেবে নেয়ার কিছু নেই। মানুষ যা কিছু প্রকৃতি থেকে পায় সেগুলোও আল্লাহ্ তায়ালারই দয়া।
যখন কেও আল্লাহ্কে গালি দেয়, সাথে সাথে তিনি তাকে শাস্তি দেন না, এখানেও তাঁর দয়া।
মানুষ গুনাহ্ করার পর ক্ষমা চাইলে তিনি দয়া করেই ক্ষমা করে থাকেন।
আপনি একটা অনেক বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন, বুঝতেই পারছেন কোম্পানি মালিকের টাকার কোন অভাব নেই! তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক! আপনি তার কোম্পানির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী। আপনি কোম্পানির মালিককে বলুন, আপনি যদি সত্যিকারেই একজন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে এ মাসের বেতনটা সবাইকে কাজ না করিয়েই দিয়ে দিন।
কোম্পানির মালিক বেতন দেবেন তো? কাজ না করিয়ে? যদি না দেয়, আপনি এবার কোম্পানির মালিককে বলুন, আপনি যদি প্রকৃত পক্ষে কোম্পানির মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে আগামী এক সপ্তাহের জন্য কোম্পানীর সবাইকে ছুটি দিয়ে দিন। এবার তো দেবে নাকি? যদি না দেয় এবার বলুন, আপনি তো আসলে কোম্পানির মালিক নয়! সত্যি সত্যি মালিক হয়ে থাকলে আজকে দুপুর বেলা সবাইকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে লাঞ্চ করান। এবার তো করাবে? তাহলে আপনি কি ধরে নেবেন যে, কোম্পানির মালিক আসলে কোম্পানির মালিক নয়? অথবা তার কোন ক্ষমতা নেই? আপনি যাই ধরে নিন না কেন? প্রকৃত পক্ষে তিনি কোম্পানির মালিক আছেন এবং থাকবেন ও বটে ! কিন্তু তিনি আপনার কোন কথা কর্ণপাত করছেন না কেন? কারন তিনি আপনার কোন কথা শুনতে বাধ্য নয়, বরং আপনি তার যেকোন কথা যেকোন সময় শুনতে বাধ্য, আপনি যদি মালিকের কথা না শুনেন, তবে কী ভাই, আপনার চাকরিটা থাকবে? নিশ্চয়ই কোম্পানীর মালিক আপনার মত কর্মীকে গলাধাক্কা দিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দেবে। একটা ক্লাস টু এর ছাত্র ও আমার এ কথার সাথে একমত হবে। ভেবে বলুন, কোম্পানির মালিকের কাছে যে যুক্তিতে আপনি বিনা কাজে একমাসের বেতন বা এক সপ্তাহ ছুটি অথবা দুপুরের লাঞ্চ ফ্রী খেতে চাইছেন এটা কী যুক্তি নাকি কুযুক্তি? এমন দাবি কী পাগল ছাড়া কোন বুদ্ধিমান মানুষ করতে পারে? এবার আপনিই বলুন, আপনি যে সকল যুক্তি দিয়ে প্রশ্নগুলো করেছেন তা যে কুযুক্তি এটা কী আপনি বুঝতে পেরেছেন? নাকি আরো বুঝাতে হবে? কোন সুস্থ মস্তিষ্কের, বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কী এমন কুযুক্তি সম্পন্ন প্রশ্ন করতে পারে? অথচ আপনার মত যারা এ ধরনের প্রশ্নগুলো করে, তারা নিজেকে এ গ্রহের সেরা বুদ্ধিমান প্রানী মনে করে!
এবার ভেবে দেখুন, আপনি, আমি, আমরা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের গোলাম, গোলামের ঘরের গোলাম, বান্দীর ঘরের গোলাম! আমরা তার সকল আদেশ নিষেধ মানতে বাধ্য, তিনি আপনার আমার কোন আদেশ মানতে বাধ্য নয়!
আল্লাহ সর্বশক্তিমান এটা প্রমান করার জন্য আল্লাহকে আপনার আমার কথামত কোন কিছু করে দেখানোর প্রয়োজন নেই! কারন তিনি বিশ্ব জাহানের মালিক! শাহেনশাহ! আর আপনি যদি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন, আমরা সারা দুনিয়ায় সকল মানুষ ও যদি একসাথে তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করি, তবে কী তার ক্ষমতা কমে যাবে? না ভাই, তার ক্ষমতার কোন হেরফের হবে না। তিনি এখন যেমন সর্বশক্তিমান আছেন, তেমনি থাকবেন। ব্যাপারটা মোটেই এমন নয় যে, তিনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত, আমরা ভোট দিলে তিনি ক্ষমতায় থাকবেন, আর না দিলে তিনি তার ক্ষমতা হারাবেন! মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ-
"আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী"। ( সূরাঃ- ইখলাস, আয়াতঃ- ০৩ )
তিনি আপনার কোন কথা মানতে বাধ্য নয় বরং আপনাকে তার একজন অনুগত গোলাম প্রমাণ করতে, তার সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। যদি তা না করেন, তাহলে কোম্পানি মালিক যেমনি ভাবে আপনাকে চাকরি থেকে বের করে দেবে, ঠিক তেমনি ভাবে অবাধ্য গোলামের জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নাম! যার জ্বালানি হবে মানুষ আর পাথর। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ-
‘‘তোমরা জাহান্নামের ঐ আগুনকে ভয় কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যা কাফেরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।’’
( সূরা আল-বাকারা, আয়াতঃ- ২৪ )
কিন্তু পরম করুনাময় মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন অসীম দয়ালু!
👉 জ্বী ভাই জানতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ দয়ালু বলতে কতটা দয়ালু?
আপনি কী জানেন, আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন? না জানা থাকলে জেনে নিন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেনঃ-
"আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে"।
( সূরাঃ- আয-যারিয়াত, আয়াতঃ- ৫৬ )
অথচ আপনি কী আল্লাহর ইবাদত করছেন? নাকি তার বিরোধিতা করছেন? তিনি কী পারেন না এখন, এই মূহুর্তে আপনাকে শাস্তি দিতে? নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি এই ক্ষমতা রাখেন! কিন্তু কেন দিচ্ছেন না? কারন তিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু! তিনি যে দয়ালু তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো আপনি নিজেই! আল্লাহ রব্বুল আলামীন যদি দয়ালু'ই না হতেন তাহলে কী এতক্ষণ আপনার অস্তিত্ব থাকার কথা!! থাকত? দয়ালু বলেই তো তিনি কোম্পানি মালিকের মত কাউকে তার অপরাধের জন্য তাৎক্ষণিক শাস্তি দেননা, বরং শত অবাধ্য হওয়ার পরও, শত অন্যায় করার পরও তিনি আপনার আমার রিযিক বন্ধ করে দেন না, টুটি চেপে ধরেন না!
সুযোগ দেন, ক্ষমা চাওয়ার অবকাশ দেন, তাকিয়ে থাকেন বান্দা তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় কিনা? অনুতপ্ত হয় কিনা? যখন বান্দা তার ভুল স্বীকার করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তিনি ক্ষমা করে দেন!! জানতেও চাননা, কে কত বড় গুনাহগার!! আপনি কী উপলব্ধি করতে পারছেন, তিনি কতটা দয়ালু? স্বীকার করুন আর নাইবা করুন, আমার বিশ্বাস আমি যা বুঝাতে চেয়েছি, এটা একটা গাদাকে বুঝালেও সে বুঝবে, আর আপনি তো অনেক বুদ্ধিমান একজন মানুষ!!
আর তিনি দয়ালু বলেই তার নাফরমানী করলে কী শাস্তি পেতে হবে তাও তিনি পূর্বেই জানিয়ে রেখেছেন যাতে করে আমরা সতর্ক হই, তার আযাব গজব থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
আর মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন যদি আপনাকে সঠিক বুঝ দান করে তাহলে আপনার জন্য আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল।
আর সবকিছু জেনে বুঝেও যদি শুধুমাত্র তাগুদের অনুসরণ করেন, কিংবা এড়িয়ে যান, তবে জেনে রাখুন, আপনার নাম নিচের আয়াতে উল্লেখিত গাফেলদের তালিকাভুক্ত হওয়াটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার!
"আমরা জাহান্নামের জন্য বহু জ্বীন ও মানুষ পয়দা করেছি। তাদের কাছে দিল রয়েছে কিন্তু তারা তা দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। তাদের চোখ আছে তবুও তারা দেখেনা, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনেনা, তারা জন্তু জানোয়ারের মতো বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত"।
( সূরাঃ- আল আরাফ, আয়াতঃ- ১৭৯ )
আমার ধারনা আপনি আপনার উত্তরটি পাবার পরও মেনে নিতে পারবেন না! কারন আমি যে গানটি গাচ্ছিলাম তার পরের কলিটা ছিল⬇️
"গাদাকে যতই পেটাও গাদা কি ঘোড়া হয়?"
তথাপিও আমি নিরাশ নই, আমি আশা করি একদিন না একদিন আপনি আপনার ভুলগুলো বুঝতে পারবেন। ভাল থাকুন।
—
Comments
Post a Comment