ইসলাম বিদ্বেষীরা বেশি প্রচার করে এমন কিছু অগ্রহনযোগ্য হাদিস

knowledge of Islam-মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২২ আমাদের সমাজে কিছু ইসলাম বিদ্বেষী আছে যারা ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার করার জন্য অনেক জাল, বানোয়াট, অতিরিক্ত যয়িফ, মুনকার ইত্যাদি হাদিসের আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেইরকম কিছু হাদিস নিয়ে এই আর্টিক্যালটি তৈরি করা হয়েছে। কবি আসমা বিনতে মারওয়ান এর হত্যাকান্ড সত্য? এই সম্পর্কিত যে ঘটনাটি সমাজে প্রচলিত আছে সেটা জাল ও বানোয়াট হাদিসের বর্ণনায় এসেছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল যে আসমা বিনতে মারওয়ান নামক কোন নারীকে হত্যা করা হয়েছে তার সন্তানসহ। আসমা বিনত মারওয়ানের হত্যা সম্পর্কিত যে বর্ণনাটি মিথ্যাবাদীরা ছড়িয়ে থাকে, সেটি একটি মাওযু (জাল / বানোয়াট) বিবরণ। এটি বর্ণনা করেছেন আল ক্বাদা’ঈ তাঁর মুসনাদ শিহাবে (৮৫৬), আল খতিব তাঁর তারিখে (১৩/৯৯), ইবন আসাকির তাঁর তারিখে (৫১/২৪৪) এবং ইবন উমার আল হারবি তাঁর ফাওয়াইদে (৫০), ওয়াকিদি আল মাগাযীতে (পৃষ্ঠা ১৭৩) এই ঘটনাটি একটি বাতিল সনদে বর্ণিত হয়েছে। এই তথ্যের বিবরণ মাওযু (জাল)। হাদিসগুলা দুই ধরনের বর্ণনায় অনেকটা এরকম বর্ণনা করা হয়েছে - বনু খাতামাহ এর এক মহিলা নবী ﷺ কে তীব্র ব্যাঙ্গ করে কবিতা লিখেছিল। এ সংবাদ নবী ﷺ এর নিকট পৌঁছালে এটি তাঁকে কষ্ট দিলো। তিনি বললেন, “আমার পক্ষ থেকে কে তার ব্যাপারটি দেখবে?” ঐ মহিলার গোত্রের একজন লোক বলে উঠলো, “আমি, হে আল্লাহর রাসুল!” মহিলাটি খেজুর বিক্রী করতো। সুতরাং সে তার কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কাছে কোনো খেজুর আছে?” মহিলা বললোঃ “হ্যাঁ।” সে তাকে কিছু খেজুর দেখালো। সে বললোঃ “আমি এর চেয়ে আরো ভালো কিছু চাচ্ছিলাম।” অতঃপর সে তাকে (আরো খেজুর দেখানোর জন্য) ভেতরে গেলো। সে-ও তার পিছু পিছু ভেতরে ঢুকলো। সে ডানে-বামে তাঁকাতে লাগলো কিন্তু একটা ছোট টেবিল ছাড়া কিছু দেখতে পেলো না। এরপর সে মহিলাটির মাথায় আঘাত করতে শুরু করলো, যতক্ষন পর্যন্ত না সে মরে যায়। এরপর সে নবী ﷺ নিকট গেলো এবং বললো, “হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার জন্য তার ব্যাপারটি হেস্ত-নেস্ত করেছি।” নবী ﷺ বললেন, “এ ব্যাপারে ২টি ছাগলও শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করবে না!” [অর্থাৎ কাজটি এমনরূপে বৈধ যা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারে না।] মহিলাটি ছিল আসমা বিনত মারওয়ান। আব্দুল্লাহ ইবন হারিস তার বাবার সূত্রে আমাকে বলেছেন, আসমা বিনত মারওয়ান ছিল বনু উমাইয়াহ ইবন যায়েদ গোত্রের এবং তার স্বামী ছিল ইয়াজিদ ইবন যায়েদ ইবন হিসন আল খাতমী। সে নবী ﷺ কে কষ্ট (গালাগাল) দিতো, ইসলামের সমালোচনা করতো এবং মানুষজনকে নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে উসকে দিতো। সে যা যা বলতো এই সংবাদ যখন উমাইর ইবন ‘আদি ইবন খারাশাহ ইবন উমাইয়াহ আল খাতমীর নিকট পৌঁছালো, তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট শপথ করছি যদি আপনি আমাকে নিরাপদে মদীনায় রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পৌঁছে দেন, তাহলে আমি ওকে (আসমা) হত্যা করবো।” কারণ রাসুলুল্লাহ ﷺ সে সময়ে বদরে অবস্থান করছিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ বদর থেকে ফিরে আসার পর উমাইর ইবন ‘আদি এক মধ্যরাতে ঐ মহিলার নিকট গেলেন এবং তার ঘরে ঢুকলেন। সে সময়ে তার আশপাশে কয়েকটি বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো যার মধ্যে একটি দুধের শিশু ছিল যেটি তখনও দুধ খাচ্ছিলো। তিনি তাকে হাত দিয়ে ধরলেন এবং শিশুটিকে দুধ খাওয়া অবস্থায় পেলেন। তিনি শিশুটিকে এক পাশে সরিয়ে দিলেন এবং তার তলোয়ার ঐ মহিলার বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দি্লেন যতক্ষন না সেটি তার পিঠ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর তিনি চলে গেলেন এবং মদীনায় নবী ﷺ এর সাথে ফজরের সলাত আদায় করলেন। নবী ﷺ সলাত শেষ করে উমাইরের দিকে তাঁকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বিনত মারওয়ানকে হত্যা করেছো?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসুল!” উমাইর ভয় পাচ্ছি্লেন যে নবী ﷺ হয়তো তার ঐ হত্যাকে অনুমোদন করবেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এ জন্য আমার কি কোনো গুনাহ হয়েছে হে আল্লাহর রাসুল?” তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে ২টি ছাগলও শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করবে না!” [অর্থাৎ কাজটি এমনরূপে বৈধ যা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারে না।] আর এই প্রথম আমি (উমাইর) নবী ﷺ এর মুখে এই বাক্য শুনলাম। উমাইর বলেন, আশপাশে যারা ছিলেন তাঁদের দিকে নবী ﷺ ঘুরলেন এবং বললেন, “তোমরা যদি এমন কাউকে দেখতে চাও যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সাহায্য করেছে তাহলে উমাইর ইবন ‘আদি-কে দেখো। উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - এটি বর্ণনা করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ যার ব্যাপারে ইমাম বুখারী বলেছেন, “সে মুনকারুল হাদিস (অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদিস পরিত্যাজ্য)”। ইবন মাঈন বলেছেন, “সে একজন মিথ্যাবাদী এবং নরাধম।” দারাকুতনী বলেছেন, “সে একজন মিথ্যাবাদী।” অন্যত্র বলেছেন, “সে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) নয়।” [মিযানুল ই’তিদাল ৩/৫০৯] ইবন ‘আদি বলেছেন, “একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-কে ব্যাঙ্গ করতো বলে হাদিসটি জাল করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ। [আল মাওযুআত - ইবনুল জাওযী (রহ), ৩/১৮] এই হাদিসের ব্যাপারে শায়খ আলবানী আদ-দ্বইফাহ (৬০১৩) তে বলেছেন, “এটি বানোয়াট”। এটি একটি তালিফ (অকেজো) ইসনাদ। ইমাম আহমাদ (রহ) ওয়াকিদির ব্যাপারে বলেছেন, যার পুরো নাম ছিল মুহাম্মাদ ইবন উমার ইবন ওয়াকিদি – “সে একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদিস পরিবর্তন করে।” ইবন মাঈন (রহ) বলেছেন, “সে (ওয়াকিদি) বিশ্বস্ত নয়।” অন্যত্র তিনি বলেছেন, “তার বর্ণিত হাদিস লিপিবিদ্ধ করা যাবে না।” ইমাম বুখারী এবং আবু হাতিম বলেছেন, “সে মাতরুক (পরিত্যাক্ত)”। আবু হাতিম এবং নাসাঈ বলেছেন, “সে হাদিস জাল করে।” ইবন ‘আদি বলেছেন, “তার বর্ণিত হাদিস অদ্ভুত এবং সমস্যাপূর্ণ।” ইবন মাদিনি বলেছেন, “ওয়াকিদি হাদিস জাল করে।” [মিযানুল ই’তিদাল ৩/৬৬৩] ইমাম নাসাঈ বলেছেন, “যেসব মিথ্যাবাদী হাদিস জাল করার জন্য পরিচিত, তারা চার জনঃ মদীনায় ইব্রাহিম ইবন আবি ইয়াহইয়া, বাগদাদে ওয়াকিদি, খোরাসানে মুক্বাতিল এবং শামে মুহাম্মাদ ইবন সাঈদ।” [তাহযিব আত তাহযিব ৯/১৬৩ থেকে বর্ণনা সমাপ্ত] হাসান ও হুসাইন (রা) এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ কে নিয়ে নোংরা অভিযোগ! রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মহান চরিত্রের প্রতি ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রসিদ্ধ একটি অপপ্রচার হল - রাসুলুল্লাহ ﷺ নাকি হুসাইন ও হাসানের (রা) এর লিঙ্গে চুমু দিয়েছিলেন বা তিনি সমকামি ছিলেন! (নাউযুবিল্লাহ) তাই আসুন দেখি কথাগুলো দলিলের আলোকে কতটুকু বাস্তব ও কতটুকু সহীহ। হাসান বিন আলী আল ফাসইউ বলেছেন --- কবুস বিন আবী যবীয়ান (এই নামটা ভালো করে মনে রাখি) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী ﷺ কে দেখেছি, তিনি হুসাইনের (রা) উরুর মাঝখান ফাঁকা করলেন ও তার লিঙ্গ চুম্বন করলেন। (মু'জামুল কাবীর- ৩/৪৫, ২৬৫৮ নং হাদিস, ইবনে আবু সুফিয়ান হাদিস ১৬২৪৫) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ কারন - এই হাদিসের বর্ণনায় একজন রাবী আছে তার নাম "কবুস বিন আবী যবীয়ান" তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসিনদের মন্তব্য হল, ইবনে সা'দ বলেন, তার মধ্যে দুর্বলতা আছে, তার দ্বারা দলিল দেওয়া যাবে না। (তবাকাতুল কুবরা-৮/৪৫৯), নাসায়ী তার ব্যাপারে বলেন, সে (হাদিস বর্ণনায়) শক্তিশালী না। (দূয়াফা ওয়া মাতরুকীন-২২২), ইবনে হিব্বান তার ব্যাপারে বলেন, সে খুবই খারাপ স্মরণ শক্তিওয়ালা, তার পিতা থেকে সে এককভাবে এমন রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে যার কোন আসল বা মূল নেই, কখনো আবার মুরসালকে মারফু এবং কখনো মাওকুফকে মুসনাদ বানিয় ফেলে। ইয়াহিয়া ইবনে মায়ীন তার ব্যাপারে কঠোরতা করেছেন।(মাজরুহীন-২/২১৯), ইবনে আবীদ দুনিয়াহ বলেন, এই রকম আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তারপর সেটিকে ও এটিকে দুর্বল বলেছেন। (ইয়াল-১/৩৭৬), আর দুর্বলের কারণ মুরসাল বলে উল্লেখ করেছেন, শর্ত পাওয়া না গেলে মুরসাল হাদিস দুর্বল হয়ে যায়। (মুকাদ্দাম মুসলিম-৮ পৃষ্ঠা) আবু বকর আল কাযী ও আবু সাইদ বিন আবী আমর খবর দিয়েছেন --- ইবনে আবী লাইলা (এই নামটা ভালো করে মনে রাখি) তিনি ঈসা থেকে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবী লাইলা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা নবী ﷺ এর কাছে ছিলাম। এর মধ্যে [শিশু] হাসান (রা) এলো এবং তার দিকে (মাটিতে) গড়াগড়ি করে আসলো। তিনি তাঁর কাপড় (ধুলাবালি কারণে) খুলে দিলেন এবং তাঁর লিঙ্গ চুমু দিলেন। (সুনানে কুবরা-১/২১৫, ইবনে আবু বকর আল হাইসামী হাদিস ২৯৯/৯) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ কারন - ইমাম বাইহাকী হাদিসটিকে যয়ীফ বলেছেন (সুনানে কুবরা-১/২১৫), নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেন, এই হাদিসে ইবনে আবী লাইলা নামে একজন বর্ণনাকারী আছে যায় পূর্ণ নাম মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা। তিনি স্মৃতিশক্তি খারাপ হওয়ার কারণে দুর্বল। (ইরওয়াউল গলীল-৬/২১৩) ইমাম যাহাবী বলেন, “আবু যুরআ' বলেন, সে (ইবনে আবী লাইলা) তেমন শক্তিশালী নয়। আহমাদ বলেন, সে হাদিসের মধ্যে গোলোযোগ সৃষ্টিকারী। শু'বা বলেছেন, আমি তার থেকে অধিক খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যক্তি দেখিনি। ইয়াহিয়া আল কাত্তান বলেন, (ইবনে আবী লাইলা) খুবই খারাপ স্মৃতিশক্তিওয়ালা। ইয়াহিয়া ইবনে মায়ীন ও নাসায়ী বলেন, সে দুর্বল। দারাকুতনী বলেন, খুবই খারাপ স্মৃতিওয়ালা এবং অধিক ভ্রমপ্রবন। হাকিম বলেন, সাধারণত তার হাদিসগুলো মাকলুব বা উলটপালট “ (মিযানুল ই'তিদাল-৬/২২২) আলী সনদে আবু মুহাম্মদ ইসমাঈল বিন আবী কাসেম আল কারী হতে --- ইয়ামান বিন সায়ীদ (এই নামটা ভালো করে মনে রাখি) বলেন, আমাদেরকে হারিস বিন আতীয়া খবর দিয়েছেন, তিনি শু’বা থেকে, তিনি হাকিম থেকে, তিনি ইবরাহীম থেকে, তিনি আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি, তিনি হাসানের(রা.) দুই পা ফাঁকা করলেন এবং তার লিঙ্গে চুমু দিলেন। (তারিখে মদীনাতুল দামেশক-১৩/২২২) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি যয়িফ কারন - ইয়ামান ইবনে সায়ীদকে দারাকুতনী দুর্বলদের সাথে উল্লেখ করেন। (দুয়াফা ওয়া মাতরুকীন-২০৬), ইবনে হাজার হাদিসটি দুর্বল হওয়ার প্রতি ইশারা করেন। (তুহফাতুল মুহতাজ-৭/১৯৬) মুহাম্মদ বিন আবী আদী বর্ণনা করেছেন। তিনি ইবনে আওন থেকে, তিনি উমাইর বিন ইসহাক (এই নামটি ভালো করে মনে রাখি) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হাসান বিন আলীর (রা) সাথে ছিলাম। অতপর আমাদের সাথে আবু হুরায়রার (রা) সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন। আমাকে দেখাও আমি চুমু দেবো যেখানে আমি রাসুলুল্লাহকে ﷺ চুমু দিতে দেখেছি। তিনি বললেন, তার কাপড় খুললেন, নাভির (নিচে) চুমু দিলেন। (আহমাদ-১২/৪২৭) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি যয়িফ কারন - উমাইর ইবনে ইসহাকের দুর্বল বর্ণনাকারী হওয়া কারণ শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাঁর বিস্তারিত তাহকিকে (মুসনাদে আহমাদ-১২/৪২৭ -৪২৮) উল্লেখ করেছেন। সাথে এ-ও বলেছেন, ইবনে হিব্বানের তাহকিকে (সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৫৯৩ ও ৬৯৬৫ হাদিস) একে হাসান ও সহীহ বলেছিলাম। তবে এখনে সে (ভুল হওয়া বিষয়টি) সংশোধনকৃত হল। আবুল আব্বাস মুহাম্মদ বিন ইয়াকুম বলেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে খিজির বিন আবান আল হাশেমী (এই নামটি ভালো করে মনে রাখি) বলেছেন --- মুহাম্মদ তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হাসান বিন আলীর (রা) সাথে সাক্ষাত করে বলে, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে তোমার পেটে চুম্বন করতে দেখেছি। সুতরাং রাসুল ﷺ যে স্থান চুম্বন করেছিল সে স্থান আমার জন্য খুলে দাও যাতে আমি সেখান চুমু দিতে পারি। হাসান (রা) তা খুলে দিলেন আর তিনি সেখানে চুমু দিলেন। (মুস্তাদরকে হাকিম-৩/২০০) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি যয়িফ কারন - ইমাম যাহাবী বলেন “খিজির ইবনে আবান আল হাশেমীর ব্যাপারে হাকিম ও অন্যান্যরা দুর্বল বলেছে, ইমাম দারাকুতনীও (দুর্বল হওয়ার) মন্তব্য করেছেন “ (মিযানুল ই'তিদাল-২/৪৪৩), শায়েখ মুকবিল ইবনে হাদী আল ওয়াদীও এই হাদিসের আলোচনায় খিজির ইবনে আবান আল হাশেমীকে দুর্বল বলেছেন। আমাদেরকে আবুল কাসেম আলী বিন ইবরাহীম ও আবুল হাসান আলী বিন আহমাদ খবর দিয়েছেন---আমাদেরকে মুহাম্মদ বিন মাযয়াদ বিন আবী আযহার (নামটা ভালো করে মনে রাখি) খবর দিয়েছেন ও বলেছেন, আমাদেরকে সাইদ বিন আমের, তিনি কাবুস বিন আবী যবয়ান (নামটা ভালো করে মনে রাখি) থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি জাবের বিন আব্দুল্লাহ আবার অন্যবার এভাবে বর্ণনা করেছে যে, তার পিতা থেকে, তিনি জাবের থেকে। তিনি (জাবের) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি তিনি হুসাইনের (রা) উরুদ্বয় ফাঁকা করলেন ও চুমু খেয়ে বললেন, তোমার কতলকারীর উপর আল্লাহর লা'নত। (তারিখে মদীনাতুল দামেষ্ক-১৫/২২৪) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - ইবনে আসাকির এই হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, খতীবে বাগদাদী এই হাদিসের সনদ (সূত্র) ও মাতান (বর্ণিত বাক্য) কে জাল বলেছেন। এই হাদিসের মধ্যে একজন মিথ্যাবাদী ও আরেকজন চরম দুর্বল বর্ণনাকারী আছে। তাদের একজন হল কবুস ইবনে আবী যবয়ান, তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। আরেকজন হল মুহাম্মদ বিন মাযয়াদ বিন আবী আযহার। তার ব্যাপারে খতীবে বাগদাদ বলেন, ইবনে আবী আযহার জাল হাদিস রচনা করেন, এই হাদিসটিকে জাল করেছে। দারাকুতনী বলেন, সে তার বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল, তার থেকে অনেক মুনকার হাদিস লিপিবদ্ধ হয়েছে। মারযাবানী বলেন, হাদিসবিদগণ তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন, আমি বলি সে মিথ্যাবাদী, নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী যা স্পষ্ট। (লিসানুল মিযান-৭/৫০১) এই বিষয়ে যত হাদিস পাওয়া যায় হয় তা জাল বা চরম দুর্বল। সহীহ কোনো হাদিস নেই। এই হাদিসগুলো জাল ও যয়ীফের কারণ বিশ্লেষণ ও ইনসাফপূর্ণ আলোচনা জানতে আরো দেখুন: ১। ইমাম ইবনুল জাওজী –মা ওজুয়াত -২/২০৭২। ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী- আল লালীয়ুল মাসনুয়া -১/৩৯১৩। আল্লামা শাওকানী- ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়া-৩৩৬৪। আল্লামা কাত্তানী- তানযীহুল শারীয়াহ-৪০৮৫। ইরওয়াউল গলীল-৬/২১৩ হিজড়া সন্তান কি জ্বীনদের বা সয়তানের? হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন: হিজড়ারা জীনদের সন্তান। কোনো এক ব্যক্তি আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন এটা কীভাবে হতে পারে? জবাবে তিনি বলেছিলেন যে, “আল্লাহ্ ও রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন যে মানুষ যেনো তার স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালে যৌন সংগম না করে”, সুতরাং কোনো মহিলার সঙ্গে তার ঋতুস্রাব হলে শয়তান তার আগে থাকে ও সেই শয়তান দ্বারা ওই মহিলা গর্ববতী হয় এবং হিজড়া সন্তান প্রসব করে। (মানুষ ও জীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলামে বলা হয় “খুন্নাস”) (ইবনে আবি হাতিম, হাকিম তিরমিজি) আরেক হাদিসে হিজরা জন্মের হেকমত উল্লেখপূর্বক আলোচনা এভাবে এসেছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল,হিজরা কেন জন্ম নেয়? তদুত্তরে ইবনে আব্বাস বললেন, স্ত্রীর মাসিক চলাকালে যখন স্বামী তার সাথে সহবাস করে, তখন শয়তান ঐ যৌনমিলনে আগে আগে থেকে উক্ত ব্যক্তির সাথে যৌনকার্যে শরিক হয়,এবং শয়তানের বীর্য ঐ মহিলার গর্ভে গিয়ে পৌছে,যার ফলে হিজরা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। (ত্বরতুসী-কিতাবু তাহরীমিল ফাওয়াহিশ) এই হাদিসগুলা আরো উল্লেখ আছে - লাক্বতুল মারজানি ফি আহকামিল জান্ন’- জালালুদ্দীন সুয়ূতি, পৃষ্ঠা ৫০, ৫১, আকামুল মারজান ফী আহকামিল জান্ন’ - বদরুদ্দীন শিবলী ১/৯৩, আল কামেল ৯/৫৮, শরহে বুখারি লি ইবনু বাত্তাল ৯\১৪৩ উল্লেখিত হাদিসটিগুলোর তাহকিক - দুটো হাদিসই মুনকার কারন - শাস্ত্রজ্ঞ ইমামদের মতে এ হাদীসটি সঠিক নয়, ভুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি প্রমাণিত নয়। তাই হাদিস হিসেবে এটি বর্ণনা করার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে হেফাজত করেন! ইমাম ইবনুল কাত্তান আলফাসী তার কিতাব হাদিসটিকে মুনকার (বাতিল) বলেছেন। [আহকামুন নজরে (হাদিস,২১৫, পৃষ্ঠা ৪১৬)] ইমাম ইবনু আদী আল কামিলে ইয়াইয়া ইবনে আইয়ুব আলগাফিকী এর জীবনীতে হাদিসটিকে غير محفوظ (প্রমাণিত নয়) বলেছেন। ইমাম যাহাবী মিযানুল ই'তিদালে ইয়াইয়া ইবনে আইয়ুব আলগাফিকী-র জীবনীতে হাদিসটিকে منكر বাতিল বলে সাব্যস্ত করেছেন। আলোচ্য বর্ণনার বর্ণনানাকারীদের মধ্যে ইয়াহইয়া ইবন আইয়ূব আল-গাফিক্বী নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন। মুহাদ্দিসদের মতেঃ তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তি, দুর্বল। অতএব এই বর্ণনা মোটেও বিশুদ্ধ নয়। [মীযানুল ই’তিদাল: ৪/৩৬৩, আল-কামিল ফিদ দুআফা: ৭/২১৬] আসমান ও জমিনের দূরত্ব কত? আমাদের অনেক ইসলাম বিদ্বেষী বিজ্ঞানবাদি বা তথাকথিত বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষরা আসমান ও জমিনের দূরত্ব সম্পর্কিত কিছুটি হাদিস দিয়েও অনেক মিথ্যাচার করে থাকে, চলুন হাদিসগুলোর তাহকিক দেখি আমরা যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ এর নিকট ছিলাম তখন একটি মেঘ অতিক্রম করে গেল। তিনি ﷺ বললেন: তোমরা কি জানো এটা কি? {তারপর রাবি পূর্বের হাদিসটির মত (১ম হাদিসটির মত) উল্লেখ্য করেন}। আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, "আল-আনান"(মেঘ) এবং এবং ভূমির তৃষ্মা নিবারক। আল্লাহ একে (মেঘকে) তার বান্দারদের মধ্যে যারা তার শুকরিয়া আদায় করেনা ও তাকে ডাকে না; তাদের দিকে চালিয়ে নিয়ে যান। তিনি (সা.) বললেন "তোমরা কি জানো তোমাদের মাথার উপর এটা কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, আকাশ, অদৃশ্য তরঙ্গ, সুরক্ষিত আচ্ছাদন। তোমরা কি জানো তোমাদের ও আকাশের মধ্যবর্তি দুরুত্ব কত? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, পাঁচশত বছরের পথ। অত:পর তিনি বললেন, "তোমরা কি জানো তার উপরে কি আছে? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, "আরশ"। তোমরা কি জানো আরশ ও সপ্তম আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্ব কত? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, পাঁচশত বছরের পথ। অত:পর তিনি ﷺ বললেন: তোমরা কি জানো তোমাদের নিচে এটা কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন: ভূমি। তোমরা কি জানো ভূমির নিচে কি আছে? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, আরেকটি ভুমি। তোমরাকি জানো তাদের (১ম ও ২য় ভূমির) মধ্যবর্তি দুরুত্ব কত? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি ﷺ বললেন, সপ্তম জমিনে পৌছানোর আগ পর্যন্ত মোট পাঁচশত বছরের পথ। (আল-মুসনাদ ১৪/৪২২; সুনানে আত-তিরমিযি ৩২৯৮) উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - হাদিসটি মুনকার পর্যায়ের কারন - এই সনদের দুর্বলতা হলো, ইউনুস বিন উবাইদ, আইয়ুব, আলি বিন যাইদ, বাহয, আবু হাতেম, আবু যুর'আহ বলেছেন যে, আল-হাসান আল-বসরি, আবু হুরাইরাহ (রা) কে দেখেননি। তার নিকট হতে কিছু শ্রবন করেননি। [ইবন আবি হাতেম, আল-মারাসিল পৃ. ৩৪-৩৬] আল-আলবানী যঈফ আল-তিরমিযীতে দুর্বল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। তিরমিজি এটা বর্ণনা করে বলেছেনঃ উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীসটি গারীব। আইউব, ইউনুস ইবনু উবাইদ ও আলী ইবনু যাইদ হতে বর্ণিত আছে যে, তারা বলেছেন, আল-হাসান আল-বাসরী (রহ) আবূ হুরাইরা (রা) হতে সরাসরি কিছু শুনেননি। [সুনানে আত-তিরমিযি ৩২৯৮] তাই আল-তিরমিযী বলেছেন: এটি এইভাবে অদ্ভুত এবং আল-জাওরাকানি বলেছেন: এটি বাতিল। [আল আবাতিল ১/২০১] ইবনুল জাওযি বলেছেন, এটা সহিহ নয়। [আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ১/২৭] ইবন হাজার আল-আসকালানী বলেছেন, এর সনদ সহিহ নয়। [ তুহফাতুন নুবালা পৃ. ৬৩] আয-যাহাবী বলেছেন, মুনকার। [আল-উলুউ পৃ. ৭৪] আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন 'আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সমতল ভুমিতে বসা ছিলাম, তখন একটি মেঘ ভেসে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তিনি (আব্বাস) বললেন, আমরা উত্তর দিলাম "মেঘ",। তিনি (রাসুল) বললেন, এবং আলমুযন (সাদা মেঘ)। আমরাও বললাম এবং আলমুযন, তিনি (রাসুল) বললেন এবং "আল-আনান'(মেঘ), তিনি (আব্বাস) বললেন, তারপর আমরা চুপ হয়ে গেলাম। তখন তিনি (রাসুল) বললেন: "তোমরা কি জানো আকাশ ও জমিনের মাঝে ব্যবধান কত? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তিনি (রাসুল) বললেন, তাদের মধ্যবর্তি দুরুত্ব হলো পাঁচশত বছরের পথ এবং প্রত্যেক এক আসমান হতে অপর আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্ব পাচশত বছরের পথ। সকল জমিনের মোট দুরুত্ব পাঁচশত বছরের পথ। সপ্ত-আকাশের উপরে রয়েছে একটি সমুদ্র যা তার তলদেশ ও উর্ধদেশের মধ্যে রয়েছে অনেকটা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে থাকার মত করে। তার উপর রয়েছে আরশ; যা সেটার তলদেশ ও উর্ধদেশের মধ্যে রয়েছে অনেকটা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে থাকার মত করে। তার উপরে রয়েছেন আল্লাহ, এবং বনি আদমের কোনো কিছুই আল্লাহর নিকট হতে গোপন নয়। [তিরমিযী ৩৩২০; আবু দাউদ ৪৭২৩, মিসকাত ৫৭২৬, ইবনু মাজাহ ১৯৩; আল-মুসনাদ ৩/২৯২] উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - হাদিসটি যয়িফ কারন - এখানে একজন রাবি হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উমায়রা, তিনি একজন মাজহুল রাবি। আবদুল্লাহ ইবনে উমায়রার কারণে এটি বর্ণনাকারীদের একটি দুর্বল শৃঙ্খল। [আল-জারহ এবং আল-তা'দীল ৫/১২৪; আল-তারিখ আল-কাবীর ৫/১৫৯] ওয়ালীদ ইবনু আবূ সাওর যঈফ আর ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমায়রাহ-এর মধ্যে জাহালাত আছে [হিদায়াতুর রুওয়াত ৫/২৪৯, হা. ৫৬৫৯] ইমাম আলবানী হাদিসকে যঈফ বলেছেন। উক্ত হাদিসের রাবী ওয়ালীদ বিন আবু সাওর আল হামদানী সম্পর্কে ইবনু নুমায়র বলেন, তিনি মিথ্যুক। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় অধিক সন্দেহ করেন ও মুনকারুল হাদিস। ইয়াকুব বিন সুফইয়ান ও সাকিহ জাযারাহ তাকে দুর্বল বলেছেন। [শরহুল আকীদুত্ তাহাবীয়া - ১/৩০৫; যইফুল জামিইস সাগির ওয়া যিয়াদাতিহি পৃ/৮৭৮; সিলসিলাতুল যয়ীফা ১২৪৭], ইমাম তিরমিযী বলেন হাদিসটি হাসান গরীব [য'ঈফ আত তিরমিযী ৬৫৪], ইবনুল জাওযি বলেন, এটি সহিহ নয়। [আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ১/৯] আল-বাওসিরি বলেন, যইফ মুনক্বাতিঈ। [ইত্তিহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ ৬/১৬৫] শাইখ আহমাদ শাকের বলেন, খুবই যইফ। [তাহকিকুল মুসনাদ ২/৩৭৬] আল-আরনাওত বলেন যইফ। [মুসনাদ আহমাদ ৩/২৯২ (আর-রিসালাহ)] ইমাম আল-বুখারি বলেন, আমরা আল-আহনাফ হতে তার শ্রবনের বিষয়টি জানিনা। [আত-তারিখুল কাবির ৫/১৫৯] ইব্রাহিম আল-হারবী বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন উমাইরাহ কে চিনিনা। [ইকমালু তাহযিবিল কামাল ৮/১০২] শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, তার পরিচয় জানা যায়না। [আল-মুগ্নী ১/৩৫০] ইবন হাজার আল-আসকালানী বলেন, মাজহুল। [তা'জিলুল মুনফা'আহ ২/২৭৪] আবু সাইদ আল-খুদরি (রা) হতে বর্নিত রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন: সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন, নিশ্চই তাকে উত্তলিত করার বিষয়টা পৃথিবী ও আসমানের মধ্যবর্তি স্থানের অনুরুপ এবং নিশ্চই আকাশ ও ভূমির মধ্যবর্তি দুরুত্ব পাঁচশত বছরের পথ। [আল-মুসনাদ ১৮/২৪৭; সুনানে তিরমিযি ২৫৪০; মিশকাত ৫৬৩৪] উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ কারন - সনদের রাবি "ইবন লাহিয়াহ" একজন মশহুর "যইফ রাবি"। তাছাড়া আবুল-হাইসাম হতে দারিজ এর বর্ননা ক্রুটিপূর্ন। [তাহযিবুত তাহযিব ৩/২০৯] আত-তিরমিযি "আস-সুনান" এ হাদিসটি বর্ননা করে বলেছেন : এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র রিশদীন ইবনু সাদের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীস জেনেছি। [সুনান আত তিরমিজি হাদিস ২৫৪০] নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী এই হাদিসটিকে যইফ বলেছেন। [যইফুল জামিইস সাগির ওয়া যিয়াদাতিহি পৃ. ৮৮২] আবু যার (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ভূমির মোট দুরুত্ব (১ম জমিন হতে ৭ম জমিন) পাঁচশত বছরের পথ। ভুপৃষ্ঠ ও নিকটবর্তি আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্ব পাঁচশত বছরের পথ। (তারপর পুর্বে উল্লেখিত হাদিসের অনুরুপ) [আল-বাহরুয যাখার ৯/৪৬০] উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - হাদিসটি মুনকার কারন - আল-বাহরুয যাখার এ আল বাজ্জার এ বর্ননা করে বলেছেন ; "এই হাদিসটি আবু-যার হতে এই সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদে বর্নিত হয়েছে বলে আমরা জানিনা, এবং আবু-নাসর, আমি তাকে হুমাইদ বিন হিলাল মনে করি, এবং তিনি (হুমাইদ) আবু-যার হতে হাদিস শ্রবন করেন নি"। আজ-জাওরাকানী বলেন, হাদিসটি মুনকার। [আল-আবাতিল ১/২০০] ইবনুল জাওযি বলেন, হাদিসটি মুনকার। [আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ১/১২] ইবন কাসির বলেন, এর সনদে সমস্যা আছে। [তাফসির ইবন কাসির ৪/৩০৩] ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন, নিকটবর্তি আসমান ও তার কাছাকাছি আসমানের মধ্যকার দুরুত্ব হলো পাঁচশত বছরের পথ। প্রত্যেক আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্ব হলো পাঁচশত বছরের পর। প্রত্যেক আসমানের পুরুত্ব ৫শত বছরের পথ। সপ্ত আসমান ও কুরসীর মধ্যকার ব্যবধান ৫শত বছরের পথ। কুরসি এবং পানি এর মধ্যকার দুরুত্ব হলো পাঁচশত বছরের পথ। আরশ হলো পানির উপর এবং আল্লাহ আরশের উপর। [তাখরিজ: আর-রদ্দু আলাজ জাহমিয়াহ (ক্রম/৮১); আর-রদ্দু আলাল মারিসী (১/৪৭১ & ৫১৯); আত-তাওহিদ (১/২৪২ & ২৪৪); তাফসির আত-তাবারী (২৩/৭৮); আল-আসমা ওয়াস সিফাত (ক্রম/৮৫১, ৮৫২); আল-আযমাহ (২/৬৮৮, ৩/১০৪৭); বাহরুল উলুম (১/১৬৯); আল-কাবির (হা/৮৯৮৭); আত-তামহিদ (৭/১৩৯)] উল্লেখিত হাদিস গুলার তাহকিক - এই হাদিসটিও সহিহ নয় কারন - হাদিসটি চূড়ান্ত ভাবে ২ টি সুত্রে বর্নিত হয়েছে: ১/ আব্দুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন উতবাহ →আসিম বিন বাহদালাহ→ আবু ওয়াইল→আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ২/ আসিম বিন বাহদালাহ→যির বিন হুবাইশ→ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ উভয় সনদে একজন রাবি হলেন: 'আবু বকর আসিম বিন আবিন নুজুদ বাহদালাহ আল-আসদী আল-কুফি'। তার সম্পর্কে ইবন হাজার আল-আসকালানি (রহ) বলেন, "সত্যবাদী তার মধ্যে অনেক ক্রুটি রয়েছে। কিরা'আতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য এবং সহিহাইনে (বুখারি ও মুসলিমে) বর্নিত তার হাদিস শক্তিশালী।" [তাকরিব আত-তাহযিব রাবি নং: ৩০৭১] যদি এটা ধরা হয় যে তিনি "ছিকাহ" ছিলেন। তাহলেও এই বর্ননাটি নির্ভর করার মত নয়। কারণ যির বিন হুবাইশ ও আবু ওয়াইল হতে উনার বর্ননাগুলো বিতর্কিত। আবুল হাসান আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সালিহ আল-আজলী (রহ) 'আসিম বিন বাহদালাহ'-কে 'ছিকাহ' বলার পর উল্লেখ্য করেছেন যে, "কিন্ত তার যির ও আবু ওয়াইল হতে বর্নিত হাদিস সম্পর্কে বিতর্ক আছে।" [আল-আজলী, আছ-ছিকাত ২/৬] তার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন সাইদ আল-কাত্তান (রহ) বলেছেন, "আমি আসিম নামের যাদের পেয়েছি, তাদের সকলের স্বরণশক্তি বাজে।" [মিযানুল ই'তিদাল ৩/৭২ রা/৪০৬৮] তার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মুয়াইন (রহ) বলেছেন, "তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে শক্তিশালি নন।" [ইবন আসাকির, তারিখু দামেশক ২৫/২২৮] আব্দুর রহমান বিন ইউসুফ বিন খিরাশ (রহ) বলেছেন: "তার হাদিসে সমস্যা আছে"। [মিযানুল ই'তিদাল ৩/৭২ রা/৪০৬৮] সুতরাং: রাসুল ﷺ ও আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) হতে এই ধরনের কোনো বর্ননা সহিহভাবে প্রমানিত নয়। আসমানের দূরত্ব সম্পর্কিত সকল হাদিসের সনদ যয়িফ ও এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্বের বিষয়টি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এটি অদৃশ্যের বিষয়। যার উপর ঈমান আনা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য [ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ৩/১১৪৯] আসমানের দূরত্ব সম্পর্কিত সকল হাদিসকে আলবানী, আরনাউত এবং ইবনে জামাআহ এগুলোকে দুর্বল বলে ঘোষণা করেছেন। আল-ইরাকী ইহইয়া 'উলূম আদ-দীন'-এ হাদিস রিপোর্টের সংশোধনে তাদের দুর্বল ঘোষণা করেছেন। [ইসলাম ওয়েব.নেট - ফতোয়া নং ২৯৭৯৬১] প্রত্যেক আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্ব কিংবা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তি দুরুত্ব নির্দিষ্টকরন সক্রান্ত কোনো সহিহ হাদিস নেই [ইসলামকিউএ.ইনফো - ফতোয়া নং ২২৫১৯২] সে ব্যাপারে কোনোকিছুই সহিহ নয়, প্রত্যেক আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্বের পরিমান সহিহ নয় , আসমান ও যমিনের মধ্যবর্তি দুরুত্বের ক্ষেত্রেও নয়। এবং সেই দুরুত্ব ৫০০ বা ৮০ বছরের পথ হয়ার ব্যাপারটাও সহিহ নয় " [উসনাল মাতালিব পৃ. ১৬৪] এছাড়া এই সম্পর্কিত ৫ম হাদিসটি আসলে সাহাবির উক্তিতে পাওয়া যায় কিন্তু সেটা কোন আসলে তেমন শক্তিশালি ও গ্রহনযোগ্য না, এর উপর সেই কথা আমাদের নবী বলেন নি বরং সাহাবি নিজে থেকে বলেছেন বলে দেখা যায়। এছাড়া তখন ইহুদি নাসারাদের অনেক বর্ণনা পাওয়া যেত সে সম্পর্কে তাই ইসলামিক স্কলারগণ বলেছেন সাহাবিটির উক্তি হতে পারে অমুসলিমদের বর্ণনা থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে দিয়েছিলেন বা অন্য কিছু। এই সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে চাইলে এটা পড়ে দেখতে পারেন - আসমানসমুহের মধ্যবর্তি দুরত্বের ব্যাপারে ইবন মাসউদ (রা) এর বক্তব্য সম্পর্কে আলোচনা ইবনে খুজাইমাহ, ইবনে হিব্বান, ইবনে তাইমিয়া এবং ইবনে আল-কাইয়্যিমের মতো যে সমস্ত পণ্ডিতরা এই হাদিসগুলিকে বর্ণনা করেছেন এবং সমর্থন করেছেন, তারা এটিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা (এক আসমান হতে আরেক আসমানের দূরত্ব) করেছেন যা মনের মতে অসম্ভব নয় বা সত্যের সাথে বিরোধী নয়। তারা উল্লিখিত পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য উপায়ে ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন এই বছরগুলিকে এমনভাবে নির্ধারণ করে যা আমাদের কাছে অজানা, যেমন আল্লাহর বাণীতে উল্লেখিত (যার অর্থ) {এবং অবশ্যই, আপনার পালনকর্তার কাছে একটি দিন এক হাজার বছর যা তোমরা গণনা কর।} [সূরা আল হাজ্জ আয়াত ৪৭] এছাড়া আরো অনেক কোরআনের আয়াত ও হাদিস আছে যেখানে দেখা যায় বিভিন্ন যায়গায় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারণ করা ১ দিন পৃথিবীর ১ হাজার, ৫০ হাজার।

Comments