নবীজি (মুহাম্মদ সাঃ) ভবিষ্যৎ না জানলে আশারায়ে মুবাশ্শারাহ কিভাবে ঘোষিত হলো?

নবীজি (মুহাম্মদ সাঃ) ভবিষ্যৎ না জানলে আশারায়ে মুবাশ্শারাহ কিভাবে ঘোষিত হলো? সম্মানিত ভাই, প্রথম কথা হল আপনার প্রশ্নে আপনি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন বা প্রবল ভাবে সন্দেহ পোষণ করছেন যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) গাইব বা অদৃশ্য জানতেন! (নাউজুবিল্লাহ)। যেখানে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহই একমাত্র অদৃশ্য বা গাইবী ইলমের অধিকারী বা ‘আলিমুল গাইব'। তিনি ছাড়া কেউ গাইবী ইলমের অধিকারী নয় । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কেও বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ইলমুল গাইব জানতেন না। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেনঃ- "বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই গাইব বিষয়ের জ্ঞান রাখে না"। ( সূরা নম্‌ল, আয়াতঃ- ৬৫ ) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ- "অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত কেউ তা জানে না"। ( সূরা আন'আম, আয়াতঃ- ৫৮ ) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ- “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর গাইব তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! ( সূরা কাহাফ, আয়াতঃ- ২৬ ) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ- “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই নিকট সব কিছু প্রত্যানীত হবে।” ( সূরা হূদ, আয়াতঃ- ১২৩ ) অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ- “কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বুষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কোনো প্রাণীই জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কোনো প্রাণীই জানে না কোন্ স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।” ( সূরা লোকমান, আয়াতঃ- ৩৪ ) সহীহ্ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে মহিলা সাহাবী রুবাই' বিনতু মু‘আওয়িয বলেনঃ- “আমার বিবাহের দিন সকালে রাসূলুল্লাহ আমার ঘরে প্রবেশ করেন, তখন আমার কাছে দ'জন বালিকা বসে গীত গাচ্ছিল। তারা তাদের কথার মাঝে মাঝে বলছিল: ‘আমাদের মধ্যে একজন নবী রয়েছেন যিনি আগামীকাল (অর্থাৎ ভবিষ্যতে) কি আছে তা জানেন।' তখন রাসূলুল্লাহ তাদেরকে বলেন: “এ কথা বলো না, আগামীতে (ভবিষ্যতে) কি আছে তা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না"। ( বুখারী, আস সহীহ্ ৪/১৪৬৯, ১৭৩৩, ১৮৪০, ৫/১৯৭৬, ৬/২৬৮৭, ৮/৬০৯, ৯/২০৩ ) এভাবে কুরআন কারীম ও সহীহ্ হাদিসের বহু স্থানে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সয়ং বারংবার ঘোষণা করেছেন যে গাইবের বিষয় ও ভবিষ্যতের বিষয় মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে কেবলমাত্র যে জ্ঞান ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট আসত, তিনি তাই অনুসরণ করতেন ও প্রচার করতেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেনঃ- “বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে, অদৃশ্য (গায়েব) সম্বন্ধেও আমি অবগত নই, আর আমি তোমাদেরকে একথাও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। আমি তো শুধুমাত্র আমার প্রতি যে ওহী প্রেরণ করা হয় তারই অনুসরণ করি"। ( সূরা আনআম, আয়াতঃ- ৫০, আরো দেখুন সূরা হুদ, আয়াতঃ- ৩১ ) সুতরাং আমরা উপরোক্ত আয়াতের আলোকে উপলব্ধি করতে পারছি যে, ওহীর মাধ্যমে যে জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট আসত তিনি তার অনুসরণ করতেন ও প্রচার করতেন। ওহী ব্যতীত তিনি নিজে থেকে কোন কিছু বাড়িয়ে বলতেন না। এ বিষয়টি অনুধাবন করতে নিম্নোক্ত হাদিসটি লক্ষ করুনঃ- মহিলা সাহাবী উম্মুল আলা উসমান ইবনু মাযউনের (রা) ওফাতের পরের ঘটনা বর্ণনা করে বলেনঃ- "তখন রাসুলুল্লাহ আমাদের নিকট আসলেন। আমি বললাম, হে আবুস সাইব (উসমান ইবনু মাযউন) আমি আপনার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ বলেনঃ- তুমি কিভাবে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবানী হোন, আমি তো জানি না, তবে তাঁকে যদি আল্লাহ সম্মানিত না করেন তবে আর কাকে করবেন? তখন রসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ- "আল্লাহর কসম, আমি তার বিষয়ে ভাল আশা করি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল, আমিও জানি না যে, আমার বিষয়ে কি করা হবে।' উম্বুল আলা (রা) বলেন, আল্লাহর তার কসম! এরপর আমি আর কাউকে ভাল বলি না। (বুখারী, আস-সহীহ ১/৪১৯, ৩/১৪২৯, ৬/২৫৭৫) উপরোক্ত হাদিসের মাধ্যমে সুনিশ্চিত ভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) ওহীর জ্ঞান ব্যাতীত কারো বিষয়ে ভাল কিংবা মন্দের সাক্ষী দেননি বরং কাউকে অদৃশ্যের বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। ইনশা-আল্লাহ এ পর্যায়ে আমরা "আশারায়ে মুবাশশারা" সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব। 👉 "আশারায়ে মুবাশশারা" বলতে কী বুঝি? আরবি 'আশারা' শব্দের অর্থ দশ। আর 'মুবাশশারা' অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত। "আশারায়ে মুবাশশারা' অর্থ "সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন"। ইসলামি পরিভাষায়, আশারায়ে মুবাশশারা বলতে বোঝায় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দশজন সাহাবীকে, হাদিস অনুযায়ী যারা জীবদ্দশায় জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। যা নিম্নোক্ত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ বর্ণনা করেনঃ- "আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি যেঃ- দশ জন লোক জান্নাতে যাবে। আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলি জান্নাতি, তালহা জান্নাতি: জুবাইর ইবনুল আওয়াম জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে যায়িদ জান্নাতি, এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি। সুনান আত-তিরমিজী, এছাড়া ও হাদিসটি সুনান আবু দাউদ এ ভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে।[2]আরো জানুন[3] সুতরাং আমরা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, রসুলল্লাহ সাঃ যে সকল সাহাবায়ে কেরামদেরকে জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন সেটা অদৃশ্য বা ইলমুল গাইবের ভিত্তিতে নয়, বরং আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত ওহীর জ্ঞানের ভিত্তিতে। এপ্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করায় Fuad Ferdous ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদিও আপনি কি উদ্দেশ্য এই প্রশ্নটি করেছেন, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা আপনার প্রোফাইল ভিজিট করে আপনাকে একজন উগ্র নাস্তিক কিংবা ইসলাম বিদ্বেষী ছাড়া আপনার সম্পর্কে ভাল কোন ধারণা নিয়ে আসতে পারিনি। তবুও আমি হতাশ নই, আমি দোয়া করি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আপনাকে হেদায়েত দান করুক। সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ফুটনোটগুলি 1. https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=83475 2. https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87_%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE#%3A~%3Atext%3D%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BF%20%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%20%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%20%E0%A6%A6%E0%A6%B6%2C%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%20%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%BF%20%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A5%A4 3. https://quraneralo.net/10-promised-jannah/

Comments