knowledge of Islam-শনিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
কেন মুসলিম হলাম? আমি মুসলিম কেন? আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম, ইসলাম সৃষ্টিকর্তার ধর্ম কেন বিশ্বাস করি? আমি কেন মুসলিম হলাম? ইসলাম কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম? এই ধরনে প্রশ্ন প্রায় শুনে থাকি।আমি কেন মুসলিম হলাম? আমি অনেকগুলো প্রশ্ন পেয়েছি, এর উত্তর -
সত্য ও বাস্তবতা এমন এক বিষয় যা কখনও ধামাচাপা দেয়া যায় না। আসলে সবাই জন্মের পর তার পরিবারে যে ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারে সে ধর্মই পালন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাস্তিক বা অন্যধর্মের মানুষদের কারনে আমরা নিজ ধর্ম নিয়ে একটু সন্দিহান হয়ে পরি ও পরে অন্য ধর্ম গ্রহন করি।
আবার অনেকে নিজ ধর্মীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ভাবে যেনে বা পড়াশোনা করে তারপর নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাসটাকে বাড়িয়ে নেয়। তাদের মধ্যে একজন আমিও আছি।
আমার কাছে ইসলাম এত প্রিয় ও বিশ্বাস যোগ্য হওয়ার কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরআন। প্রথমে আমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সব সন্দেহ দূর করেছি এবং কোরআনই আমাকে বেশি সাহায্য করেছে। যেমন সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই, সৃষ্টিকর্তা কে, সৃষ্টিকর্তা কয়জন, সৃষ্টিকর্তা দেখা দেয় না কেন ইত্যাদি। আবার কিছু যুক্তি, কিছু বিজ্ঞান ও ধর্মগ্রন্থগুলোও সাহায্য করেছে।
দ্বিতীয় আমি ইসলামের যে যে বিষয়ে সন্দিহান ছিলাম সে সে বিষয়ে সন্দেহ সম্পূর্ণ দূর করতে পেরেছি তাও কোরআন ও হাদিসের আলোকে। আপনি এটা পড়েন তাহলে এক আল্লাহতে কেন বিশ্বাস করি তা বুঝতে পারবেন। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব
আমি প্রতিটা ধর্মনিয়ে মোটা মুটি চিন্তা ভাবনা করেছি। হিন্দুধর্মে ৩৩ কোটি দেব-দেবী, সবাই নাকি সমান ও সবাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য কিন্তু আমার পক্ষেত সবাইকে মানা সম্ভব নয় তারপর আমার মনে প্রশ্ন জাগে যদি কয়েক জনকে মানি, ভক্তি করি, তাদের কাছে চাই, তাদের পূজা করি তাহলে বাকি ৩২ কোটির বেশি যে দেব-দেবি আছে তারা মাইন্ড করবে না? মাইন্ড করারই কথা এছাড়া বাকিদেরকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে তারা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট থেকে যাবে ও এত জন যদি অসন্তুষ্ট থাকে তাহলেত আমার নরক কনফার্ম। আবার খ্রিষ্টানরা একজনকে নিজেদের সৃষ্টিকর্তার পূত্র মনে করে ও তার আগে যারা এসেছিল তারা সবাই নবী ছিল, ইহুদিরাও ঠিক একই রকম। আবার তাদের ধর্ম মতে একজন শেষ নবী আসবে যাকে মানতে হবে সবাইকে। এখানেইত প্রশ্নটা জাগে তারা যাকে সৃষ্টিকর্তার পূত্র মনে করে তাকে কেন সৃষ্টিকর্তা শেষ নবী হিসেবে পৃথিবীতে পাঠালেন না এবং তারা শেষ নবীকে না মেনে কেন এর আগের নবীকে মানে? বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম এক প্রকার নাস্তিক ধর্ম কারন তারা সৃষ্টিকর্তা আছে তা মানে না আর আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী হওয়ার কারন উপরে একটা লিংকে দেওয়া আছে। এছাড়া বাকি ধর্মগুলার কথা না বললেই চলে।
ধর্মগ্রন্থ নিয়ে প্রশ্ন। প্রায় ধর্মে একটা কথা কমন আছে তা হলো সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন প্রতিকৃতি নেই, তার সমতুল্য কেউ নেই, তার পরিবার নেই। কিন্তু এই কথার সাথে খ্রিষ্টান, ইহুদি ও হিন্দু ধর্মসহ আরো কিছু ধর্মের মানুষ সাংঘর্সিক কাজ করে থাকে। যেমন তারা সৃষ্টিকর্তার প্রতিরূপ বানায়, কেউ কেউ কাউকে ইশ্বরের পুত্র-পুত্রি মনে করে আবার কাউকে ঈশ্বরের মা-বাবা মনে করে। কিন্তু ইসলামের সাথে ধর্ম গ্রন্থগুলোর কমন বিষয়গুলোর সাথে সম্পূর্ণ মিল ও এই কথার সাথে সাংঘর্ষিক কোন তথ্যও নেই কোরআনে বা হাদিসে। ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে এ ধর্মকে নিজের বিবেক ও প্রকৃতির সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই দেখতে পেয়েছি। কোন ধর্মগ্রন্থে এই কথাটা উল্লেখ নেই কিন্তু কোরআনে আছে 'নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৯) আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মধ্যে অর্থাৎ ইবরাহিম (আ) এর পালন করা ধর্মের সাথে ইসলামেরই হুবুহু মিল রয়েছে আর বাকিগুলোর মধ্যে কিছুটা নতুনত্ব দেখা যায়।
ভালো আদেশ-উপদেশ কম বেশি সব ধর্মগ্রন্থেই আছে। আমি বিশেষ যে ধর্মগুলো আছে সেগুলার মধ্যে হিন্দু-খ্রিষ্টান-ইহুদি ধর্মে বেশ কিছু খারাপ আদেশ/উপদেশ ও স্পষ্ট ভুল তথ্য পেয়েছি, সাংঘর্সিক তথ্য পেয়েছি ও সেই গ্রন্থগুলোকে মানুষের অপকারি বেশ কিছু বিষয়ও খুজে পেয়েছি, যা প্রমান করে এগুলা ঈশ্বরের ধর্মগ্রন্থ নয় বা ঈশ্বরের হলেও এগুলা বিকৃত হয়ে গেছে। কোরআনে অুসলিমদের প্রতি ও অন্যান্যা বিষয়ে যে আদেশ ও উপদেশ রয়েছে তা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সঠিক ও বাস্তব সম্মত মনে হয়েছে। আর কোরআন যে আল্লাহর বাণী সেটা কোরআন পড়লেই বুঝতে পারবেন। উপরের লিংকে সেই সম্পর্কে কিছু তথ্য ও দেওয়া আছে।
তারপর আসি আইনের দিকে। আমার দেখা মতে পৃথিবীতে যে যে দেশে ইসলাম অনুযায়ি বেশির ভাগ আইন প্রয়োগ করা হয় সে সে দেশে অপরাদের পরিমান সবচেয়ে কম। সেই সেই দেশে মেয়েরাও বেশি নিরাপদে আছে। আমার মতে ইসলামিক আইনই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর ও সুন্দর আইন অপরাধ কমানো ক্ষেত্রে।
ইসলামি অর্থব্যবস্থাও আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে যাকাত দেওয়া সিস্টেমটা। যাকাতের কারনে একটা দেশে গরিবদের আর্থিক অবস্থা অনেক বেশি উন্নত করা সম্ভব। আবার সুদ গ্রহন করে তা পরিশোষ করতে একটা মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টকর এবং একটা দেশে এদের সংখ্যাই বেশি। গরীব যেন অনাহারে-অর্ধাহারে মারা না যায় সেজন্য যাকাত, উশর, খারাজ ইত্যাদির বিধান রাখা হয়েছে। এমনিভাবে ধনবৈষম্য সৃষ্টিকারী শোষণমূলক সুদ, জুয়া, লটারী, কালোবাজারী, মওজুদদারী, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল ইত্যাদি উপার্জনের পন্থাকে হারাম করা হয়েছে। বস্তুত ইসলামি অর্থব্যবস্থায় কোনোরূপ যুলুম, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবকাশ নেই।
নারীদেরকে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সম্মান ও ন্যায্য অধিকার দিয়েছে ইসলাম। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ইসলামেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ইসলামেই সবচেয়ে বেশি শালিনতা রয়েছে। ইসলামে নারীদেরকে বলা হয়েছে স্বামীর আনুগত্য করতে কিন্তু নারীদের প্রতি সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে যা পালন না করলে স্বামীর শাস্তির ব্যবস্থাও আল্লাহ রেখেছেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ব পালন, খেয়াল রাখা, যত্ন করা, সাহায্য করা, গায়ে হাত না উঠানো ইত্যাদি বিষয়ে সবচেয়ে সেরা সেরা আদেশ ও উপদেশ কোরআন ও হাদিসে আমি খুজে পেয়েছি। আবার এক সাহাবি থেকে পাওয়া হাদিস যেখানে বলা হয়েছে আয়শা (রা) বিয়ে ৬ বছর বয়সে মহানবী (সা) এর সাথে হয়েছে সেই হাদিসে কিছু ভুল আছে - আয়েশা রাঃ এর বিয়ে কি ৬ বছর বয়সেই হয়েছে?
আমি ইসলামে সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে ভালো উপদেশ পেয়েছি অন্যধর্মের মানুষদের সাথে আচার-ব্যবহার বিষয়ে। অমুসলিমদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। এটা সবাই যানে যে ইসলামেই সবচেয়ে বেশি শালিনতার কথা রয়েছে শুধু তাই না সবচেয়ে ভালো চরিত্র গ্রহন করা ও তার পদ্ধতি ইসলামেই রয়েছে।
মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম ইসলাম আমার কাছে এটাই মনে হয় কোরআন ও হাদিস পড়ার পরে। কেউ একজন বলেছিল “একজন ভালো মানুষ হলো প্রাথমিক পাশের মতো আর একজন ভালো মুসলিম হওয়া মানে PHD করার মতো। অর্থাৎ ভালো মানুষ হওয়া ছাড়া কখনো ভালো মুসলিম হওয়া যায় না।” কথাটা শতভাগ সত্য। অনেকে বলে ইসলামে ধর্মত্যাগ করলেই মৃত্যু দন্ড দিতে বলা হয়েছে যা একদম ভুল - মুরতাদ হত্যার বিধান। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে জীবন পরিচালনার সব কিছু উল্লেখ আছে। একমাত্র ইসলামেই সব ভালো কাজ ও মানুষের উপকারি বিষয়কে হালাল ও সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার মানুষের জন্য যেগুলা ক্ষতিকর সেসব বিষয়কে হারাম করা হয়েছে ইসলামে। বর্তমানে মানব জাতির মধ্যে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে সব দিক দিয়ে সর্বসেরা মানুষ হিসেবে হযরত মুহাম্মদ ﷺ ক্ষ্যাতি লাভ করেছেন।
শিক্ষা গ্রহন ও দান, সৎ ভাবে কাজ করা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, নারীদেরকে মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার, দান করা, মানুষকে সাহায্য করা, প্রতারনা না করা, মানুষের সাথে ভালো আচরন করা, খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকা, বিয়ে, রাষ্ট্র পরিচালনা, সুন্দরভাবে পরিবার পরিচালনা, আনন্দ করা, মা-বাবার পতি সম্মান ও দায়িত্ব, সন্তানকে ভালোবাসা ও সঠিক শিক্ষা দেওয়া, শত্রুতা দূর করার পদ্ধতি, সময়ের সঠিক ব্যবহার, গরিব-মিসকিন ও এতিম-বিধমাদের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য, বিধর্মীদের প্রতি আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে অসাধারন ও ইতিহাসের সর্বসেরা উপদেশ এবং আদেশ কোরআন-হাদিসে পেয়েছি। উল্লেখ করতে গেলে অনেক কিছু উল্লেখ করা যায় যা শেষ হবার মত নয়।
ইসলাম বিদ্ধেষীদের কাছে কোরআনের ২/১ টা আয়াত বা হাদিস শুনে ইসলামকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাবেন না। আগে নিজে সেগুলা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের সব তথ্য ভালো ভাবে পড়ে দেখুন। কোরআন যখন পড়বেন কোনবিষয়ে সন্দেহ হলে তখন আগে পিছের আয়াত পড়বেন, সেই সম্পর্কিত হাদিস দেখবেন, সঠিক অর্থসহ পড়বেন, সেই আয়াতের তাফসির পড়বেন তাহলে যতগুলো কনফিউসন থাকবে সবগুলা দুর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আবর হাদিস নিয়ে যদি সন্দেহ দেখা দেয় তখন দেখবেন হাদিসের মান কি, তারপর দেখবেন হাদিসের প্রেক্ষাপট কি, তারপর দেখবেন কোরআনের আয়াত বিরোধী হাদিস কিনা, তারপর দেখবেন সেই হাদিসের বিপরীত হাদিস আছে কিনা, তারপর সেই সম্পর্কিত সকল হাদিস পড়ে দেখবেন তাহলে সে সম্পর্কিত সন্দেহও দুর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
Comments
Post a Comment