আমাদের সৃষ্টিকর্তা কে ও কয়জন? তাকে কে সৃষ্টি করেছে?

knowledge of Islam-শনিবার, জানুয়ারী ২৯, ২০২২ এর আগে একটা আর্টিক্যালে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছিলাম, এই আরটিক্যালে ঐটারই বাকি অংশ তুলে ধরছি ও অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। চাইলে পড়ে আসতে পারেন আর্টিক্যালটির প্রথম অংশ অনেকের মাথায় একটা প্রশ্ন আসে তাহল, সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে? আস্তিকরা স্রষ্টা নিয়ে তর্কবিতর্ক করার সময় একটা কমন যুক্তি দেয় যে স্রষ্টা ছাড়া কোন কিছু আসা সম্ভব না। অবশ্যই যুক্তিটা সঠিক হলেও বলায় কিছুটা ভুল রয়েছে যার কারনে নাস্তিকটা চট করে প্রশ্ন করে বসে যে, “তাহলে সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টা কে?” কিন্তু এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর অনেক আস্তিক ভাই দিতে পারেন না। যাই হোক, কথাটা আসলে হবে, ‘কোন সৃষ্টি স্রষ্টা ছাড়া আসতে পারে না’ বা ‘সব সৃষ্টির স্রষ্টা রয়েছে’। এখানে সব সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে কিন্তু স্রষ্টাত সৃষ্টি নন তাই তিনি এর আয়তাভুক্ত নন। আবার এই প্রশ্ন শুনলে আমার একটা বাঙালির কমন ডাইলগ মনে পড়ে যায় সেটা হল, “রাধুনীকে কে রাঁধল?” যাই হোক আমার এই কথায়ত আর নাস্তিকরা সন্তুষ্ট হবে না তাই বিজ্ঞান ও দর্শনের মাধ্যমে বিষয়টা বুঝিয়ে দেখানো যাক। উক্ত প্রশ্নটার উত্তর অনেক ভাবেই দেওয়া যায়। প্রথমত বলতে চাই যে যারা এই প্রশ্ন করে তারা হয়ত সৃষ্টিকর্তার সঙ্গাটাই যানে না তাই এমন প্রশ্ন করতে পারে। সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আছে সেটা ভুল এবং আপনার প্রশ্নটাও অযৌক্তিকও বটে। তারপরও এই প্রশ্নে বেশ কয়েকটা উত্তর আছে। তাহলে চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে সরাসরি উত্তরের দিকে যাই [১] সৃষ্টিকর্তা কে মানুষ ২ ধরনের মনে করে। প্রথম প্রকারের সৃষ্টিকর্তা মানুষ বা বুদ্ধিমান প্রাণী যাদের জন্ম-মৃত্যু আছে। এটা ছোট খাটো জিনিস তৈরি করতে পারে, একে সৃষ্টিকর্তা বলা ঠিক হবে না। এদেরকে সাধারনত আবিষ্কারক বলা হয়ে থাকে কারন কোন কিছু সৃষ্টি করা মানে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনা। কিন্তু এরাত অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব আনতে পারে না। আর সত্যিকারের সৃষ্টিকর্তা হল যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছে। তার জন্মও নেই মৃত্যুও নেই। অর্থাৎ যার সৃষ্টিও নেই আবার ধ্বংসও নেই। বিষয়টা আরো ভালো ভাবে বুঝবেন যদি আপনারা পদার্থ বিজ্ঞানের শক্তির নিত্যতার সূত্র যেনে থাকেন। কারন বিজ্ঞান বলে শক্তি সৃষ্টি করা যায় না আবার শক্তিকে ধ্বংস করা ও যায় না। শক্তি কেবল এক রূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে রূপান্তরিত হতে পারে। ঠিক তেমনই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তা নেই, বিজ্ঞানীরা যদি শক্তিকে অবিনশ্বর মেনে নিতে পারে তাহলে স্রষ্টাকে অবিনশ্বর মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? শক্তির নিত্যতার সূত্র সত্যই হতে পারে কারন সকল শক্তির মূল উৎসই আল্লাহ যিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা। [২] সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করল এর উত্তর অন্য ভাবে বলি, মনে করেন ‘ক’ হলেন আল্লাহ, যদি আল্লাহর সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হয় তাহলে বিষয়টা অনেকটা এমন দাড়ায় যে ‘ক’ কে কে সৃষ্টি করল উত্তর যদি আসে ‘খ’, তাহলে আবার প্রশ্ন আছে ‘খ’ কে কে সৃষ্টি করল? তখন হয়ত বলবেন ‘গ’, তখন আবার প্রশ্ন আছে ‘গ’কে কে সৃষ্টি করল? হয়ত বলবেন ‘ঘ’, তখন আবার প্রশ্ন আছে ‘ঘ’কে কে সৃষ্টি করল? এই প্রশ্নে খেলা চলতেই থাকবে। এই তত্ত্ব একটি অসীম প্রত্যাবর্তনের দিকে পরিচালিত করে। তখন “অনবস্থা দোষ” অর্থাৎ ইনফিনিটি রেন্জ দেখা যায় তাহলে কখনোই বর্তমানে আসা সম্ভব না। বাস্তবে প্রকৃত অসীমতা অসম্ভব অর্থাৎ এটার একটাই সমাধান হয় যেটা হচ্ছে এমন একজন আছে যিনি প্রথম থেকেই আছেন। মানে তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। কারন যদি ‘ক’ অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর তাহলে বর্তমানে আসা সম্ভব না অর্থাৎ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিল না। ইউনিভার্স সৃষ্টির কারণ যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার জন্য অসীম সংখ্যক কারণের প্রয়োজন নেই। বরং শুরুতে এমন একজন স্রষ্টা আছে যার পিছনে আর কোনো স্রষ্টা নেই। এই বিষয়টা আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন যদি infinite regress বা ইনফিনিটি রিগ্রেস সম্পর্কে আপনার ধারনা ধাকে। এছাড়া, Causality এর ধারণা থেকে আমরা জানতে পারি সব কিছু কারন থাকে। যেমন, ধরুন আমি একটা চেয়ার বানালাম, আমি এই চেয়ার এর Cause, মা সন্তানকে জন্ম দিল, মা হলো সন্তানের cause। ধরেন আপনার সামনে এইযে কমি্‌ুটার বা মোবাইল আছে, এটা কোনো না কোনো ভাবে, কারো মাধ্যমে তৈরি হয়ে, কারো মাধ্যমে আপনার কাছে এসেছে। এটা সর্বদা ছিল না, এটার শুরু শুরু আছে। যার মাধ্যমে এসেছে, তাই হলো cause। সুতরাং cause বলেন, creator বলেন, maker বলেন, disigner বলেন, এগুলা সবই cause। প্রকৃতিতের প্রতিটি পরিবর্তনের cause আছে, প্রতিটা জিনিস যার শুরু আছে তার cause ও আছে আর এটাই হচ্ছে Law’s of Causality. এটা অনুসারে এই ইউনিভার্সের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব, এবং সেই কারণই হলো সৃষ্টিকর্তা। [৩] মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার আগেও সৃষ্টিকর্তা ছিলেন ও মহাবিশ্ব ধ্বংস হওয়ার পরও থাকবেন, সৃষ্টিকর্তার কোন শুরু নেই ও শেষ নেই অর্থাৎ তিনি অনন্তকাল ছিলেন ও থাকবেন। কেন জানেন? এর কারন হচ্ছে কোন কিছু শুরু ও শেষ থাকা মানেই সেটা সময় ও স্থানের অন্তর্ভূক্ত থাকা। সব সৃষ্টিরই ধ্বংস আছে অর্থাৎ সব শুরু জিনিসের শেষ আছে এবং কোন কিছু সৃষ্টি হওয়া মানেই সেটা সময় ও স্থানের অধিনস্ত হয়ে যায়। তাই আমরা সাধারণ ভাবেই বলতে পারি যেটা সময় ও স্থানের অধিনে থাকে সেটারই কেবল সৃষ্টি আছে। সময় নির্ণয় করা কষ্টকর কারন পৃথিবীর মানুষ সময়কে সূর্য বা চাঁদের উপর ভিত্তি করে একভাবে চিন্তা করে এবং অন্য স্থানের সময় অন্য রকম, আবার স্রষ্টার কাছে সময়ের হিসাব অন্যরকম। সময় আসলে নির্ণয় করা সম্ভব না কারন এটা অতিতের অসিম ও ভবিষ্যতে অসিম ভাবে চলে আসছে ও চলতে থাকবে। যেখানে সৃষ্টিকর্তাই সময় ও স্থানকে সৃষ্টি করেছেন ও নিয়ন্ত্রন করেন তাহলেকি তাকে টাইম ও স্পেসের অধীনে চলতে হবে? অবশ্যই নয় কারন কোন অবিষ্কারক যখন কোন কিছু আবিষ্কার করে তখন সে তার আবিষ্কার করা জিনিসের মধ্যে থাকেন না তিনি বাহিরে থাকেন এবং তিনি চাইলে তার আবিষ্কার করা বস্তুর অধিনেও থাকতে পারেন আবার বাহিরেও থাকতে পারে সেটা তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যখন স্রষ্টা স্থান ও সময়ের অধীনের নেই তাহলে তার সৃষ্টি বা ধ্বংস হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আবার একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আদম সন্তান সময় ও কালকে গাল-মন্দ করে, অথচ আমিই সময় [সহীহ মুসলিম হাদিস ৫৬৬৭ ই.ফা.; একটা বিষয় বুঝতে হবে যে এখানে আল্লাহ শুধু পৃথিবীর নির্দিষ্ট সময়কে ইঙ্গিত করছেন না] আবার একজন বিজ্ঞানী একটা রোবট তৈরি করল নিজের মত এখানে বিজ্ঞানীটি হলেন সেই রোবটের সৃষ্টিকর্তা ও রোবটটি হল তার সৃষ্টি। এখন বিজ্ঞানীর মত চেহারা ও গঠন আছে রোবটের কিন্তু রোবটের অনুভুতি নেই, নিজস্ব বুদ্ধি নেই, প্রাণ নেই, রক্ত মাংস নেই আবার রোবটের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিজ্ঞানীর মধ্যে নেই অর্থাৎ আবিষ্কারক ও তার আবিষ্কারের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি পার্থক্য রয়েছে। বিজ্ঞানী চাইলে হয়ত এই পার্থক্যের পরিমান আরো কমাতে পারতেন যাইহোক ঠিক তেমনই সৃষ্টির যে বৈশিষ্ট্য সেটাযে সৃষ্টিকর্তার মধ্যেও থাকতে হবে এমনটা চিন্তা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। স্রষ্টা আমাদেরকে নিজের অল্প কিছু বৈশিষ্ট দিয়ে সৃষ্টি করেছেন কারন আমরা তার মুখাপেক্ষি তিনি আমাদের মুখাপেক্ষি নন তাই আমাদের কিছু বৈশিষ্ট তার সাথে মিললেই যে সব মিলবে তেমন না, অর্থাৎ স্রষ্টা আমাদেরকে ভালো-মন্দ সব মিলিয়ে অর্থাৎ ত্রুটিসহ সৃষ্টি করেছেন কারন আমরা তার সামনে ত্রুটি যুক্ত এবং সবচেয়ে তুচ্ছ একপ্রকার প্রাণী ছাড়া কিছুই নই। তাই বলে আমাদের মধ্যে যেমন ত্রুটি রয়েছে সেগুলা স্রষ্টার মধ্যেও থাকবে এমনটা কিন্তু নয়। তাই সৃষ্টির জন্য স্রষ্টার প্রয়োজন সে কারনে সৃষ্টিকর্তারও স্রষ্টা থাকতে হবে এমন চিন্তা বা বিশ্বাস আসলেই জ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। [৪] আপনার প্রশ্নটাই ঠিক নেই। প্রশ্ন করার আগে একজন মানুষের চিন্তা করা উচিৎ যে সে যে প্রশ্নটা করছে সেটাকি আসলেই valid নাকি invalid। ধরেন আপনি একজন ছেলে ও হাসপাতালে ভর্তি কোন কারনে। এখন যদি আমি আপনাকে প্রশ্ন করি আপনার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তাহলে কি প্রশ্নটা ঠিক? অবশ্যই না। কারন আপনি ছেলে, আপনার কিভাবে বাচ্চা হবে? বাচ্চা হলেত আপনার স্ত্রীর হবে। আরেকটা উদারহন নিলে আরেকটু পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনে করেন একজন ব্যাচলর ছেলেকে এসে কেউ ‍জিজ্ঞাসা করল যে ছেলেটির স্ত্রী ও সন্তান কেমন আছে, তারা কোথায় এখন। এখন আপনারাই বলেন প্রশ্নটা কি ঠিক হয়েছে? যেখানে সে ব্যাচলর সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তানের খবরাখবর জানতে চাওয়াটাকি বোকামি নয়? এই ধরনের প্রশ্নগুলা করে যারা যক্তি দেয় তাদের এগুলা আসলে হচ্ছে লজিক্যাল ফ্যালাসি, আবার এগুলাকে প্যারাডক্সও বলা যায় কারন উপরের তিনটা পয়েন্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন। ঠিক তেমনই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তা কে এই প্রশ্নটাও লজিক্যাল ফ্যালাসি ও একধরনের প্যারাডক্স। কারন আল্লাহকে আমরা মনে করি সৃষ্টিকর্তা আবার তার যদি সৃষ্টিকর্তা থাকে তাহলেত আর আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা রইলেন না। কারন তিনি তখন সৃষ্টি হয়ে যাবেন। আর সৃষ্টিকর্তা হতে হলে তিনি সৃষ্টি হতে পারবেন না। সূরা ইখলাসে সৃষ্টিকর্তার ৪টি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যথাক্রমে (১) বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয় (২) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী (৩) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি (৪) এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই। এই চারটা শর্তের একটাও ভঙ্গ হলে সে সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না, আর সৃষ্টিকর্তাকে যদি কেউ সৃষ্টি করে বা জন্ম দেয় তাহলে ২ ও ৩ শর্তভঙ্গ হয় তাই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকর্তা থাকা এমন প্রশ্ন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করাটা বোকামি ও জ্ঞানহীনতা ছাড়া কিছুই নয়। ঈশ্বর যে একজন সেটা কেন মানবেন? ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, ইহুদিধর্ম, বাহাই ধর্ম, জরাথ্রুস্ট্রবাদ, শৈব ধর্ম, শিখ ধর্ম, সনাতন ধর্ম (একত্ববাদ) প্রভৃতি হল একশ্বরবাদী ধর্ম, সাধারনত একঈশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিত। সব ধর্মগ্রন্থের মূল একটা বিষয় হল স্রষ্টা শুধু একজন। ইসলামে বলা হয়েছে স্রষ্টা একজন [সূরা ইখলাস] এছাড়া আল্লাহ কোরআনের বার বার বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। ইহুদী ধর্মে বলা হয়েছে তোমাদের ঈশ্বর একজন [ওল্ড সেস্টামেন্ট, দ্বিতীয় বিবরন ৬/৪-৫, ৪/৩৫-৩৯, ১৩/৪, ১৮/১৫, ৩২/৩৯; ওল্ড টেস্টামেন্ট, যীশাইয়/ইসাইয়া ৪০/১৮, ২৫, ২৮, ৪৩/১০-১১, ৪৪/৬-৭ ও ২৪, ৪৫/১৮, ৬৪/৪; মার্ক ১২/২৯-৩০; এফিশীয় ৪/৬; প্রকাশিত বাক্য/প্রত্যাদেশ ১/৮; হোসেয়া ১৩/৪; গীতসংহিতা/সামসংগীত ৮৩/১৮, ৮৬/৮ ও ১০; যাত্রাপুস্তক ৮/১০; বংশাবলী-১, ১৭/২০; ২ শ্যামুয়েল ৭/২২; করিন্থীয় ৪/৬] খ্রিষ্টান ধর্মে বলা হয়েছে তোমাদের ঈশ্বর একজন ও যিশু বার্তা বাহক [নিউ টেস্টামেন্ট, মার্ক ১২/২৯, ১৪/৩৬; লুক ২৪/১৯, ৪/৮; হোশেয় ১১/৯; যোহন ১/১৮, ৫/৩৭, ১৭/৩, ৭/১৬-১৭, ১৪/২৮, ৪/১৯, ৯/১৭, ২০/১৭; আদি পুস্তক ১/১৭; গণনা পুস্তক ২৩/১৯; ম্যাথু ৪/১০; মথি ২৩/৯-১০, ৭/২১; গসপেল অফ জন ১৭/৩; দ্বিতীয় বিবরণ ৬/৪; ১ করিন্থীয় ৮/৪; গালাতীয় ৩/২০; ১ তীমথিয় ২/৫; ১ করিন্থীয় ৮/৬; প্রকাশিত বাক্য ৪/১১ ইত্যাদি], হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে ঈশ্বর শুধু মাত্র একজন এবং তিনিই অন্য দেবতাদেরকে সৃষ্টি করেছেন [ভগবত গীতা অধ্যায় ৯, শ্লোক ২৩,২৪, গীতা অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ ১৭,২০-২৩, গীতা ১০/৩৭, ১৮/৬৬; ঋগবেদ গ্রন্থ ১, পরিচ্ছেদ ১৬৪, অনুচ্ছেদ ৪৬, ঋগবেদ ২/৪৫/১৬, ৮/১/১, ১০/৪৮/১, ১০/৪৯/১, ১০/১২১/৩; যর্যুরবেদ ১৩/৪, ৩২/১১, ৪০/১, ৪০/৯; অর্থববেদ ১০/৭/৩৮, ১৩/৪/১৬-২১, অথর্ববেদ সুক্ত ১৪/৪/২ ; উপনিষদ ৬/২/১, ৪/১০/২০; ছান্দোগ্য উপনিষদ , প্রাপাথাকা অধ্যায় ৬/২; শ্বেতাশ্বত্র উপনিষদ ৬/৯, ৪/১৯ ইত্যাদি] কোরআনে আল্লাহ আরো বলেছেন - যদি এতদুভয়ের (আসমান ও যমীনের) মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব, তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ কতই না পবিত্ৰ। (আল-আম্বিয়া, আয়াত ২২) আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! (আল-মুমিনুন আয়াত ৯১) অনেকে এই আয়াত গুলোকে শুধু বানীই মনে করবে। যদি এই আয়াত গুলো বিশ্বাস নাও হয় তাহলেও সমস্যা নেই। আপনি নিজেই চিন্তা করুন আপন দুই ভাইকে যদি একটা জমি দেওয়া হয় তাহলে তারা সেটাকে ভাগ করে নিজেদের মত করে সেখানে যা ইচ্ছা তা করা শুরু করে অনেক সময় এই যায়গা-জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারিও হয়। যদি টাকা-পয়সা স্বর্ণ-হীরা দেওয়া হয় তাহলেত খুনাখুনি পর্যন্ত হয়। তাহলে এত বড় সৃষ্টির একের অধিক সৃষ্টিকর্তা থাকলে সৃষ্টির সব কিছু কিভাবে স্বাভাবিক থাকত? বেশি না হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ গুলো পড়লেই দেখা যায় দেব-দেবীর মধ্যে ঝগড়া, দেবগণের মধ্যে যুদ্ধ, দেবকে অপমান করছেন দেবী, দেবীকে অপমান করছেন দেব, এক দেব একজনকে শক্তি দেয় আরেক দেব তা কেড়ে নেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি হিন্দু ধর্মকে অপমান বা কঠাক্ষ করছি না আমি শুধু উদাহরন দিচ্ছি। এছাড়া হিন্দুরা যাদেরকে পুজা করে সেগুলা হল উপদেবতা, কিন্তু ধর্মে বলা আছে সৃষ্টিকর্তা একজন এবং তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ১২ শতাব্দির একজন মুসলিম চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ইবনে রুশদ যিনি পশ্চিমা জগতের কাছে Averroes নামে পরিচিত, তিনি বলেন, “এই চরণটির মর্মার্থ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিতেই গেথে গেছে। এটি স্বতঃসিদ্ধ যে যদি একই শহরে দুইজন রাজা থাকে এবং প্রত্যেকের কাজই অভিন্ন। তাহলে তাদের উভয়ের পক্ষে একত্রে শহরের দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। কারণ দুটি একজাতীয় সত্বা কখনো এক এবং অভিন্ন কার্যসম্পন্ন করতে পারেনা। তাহলে এটাই বুঝায় যে দুজন একত্রে কাজ করলে শহরটি ধ্বংস হয়ে যাবে যদিনা একজনের কাজ করার সময় অপরজন অকার্যকরী হয়। এটি ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক। যখনই দুইটি একজাতীয় কার্যক্রম একই বিন্দুতে কোন ভিত্তির উপর ক্রিয়া করে, তখন ভিত্তিটি বিকৃত হবেই।” (Avorres. Faith and Reason in Islam. Avorres’ Explanation of Religious Arguments. ইব্রাহিম নাজ্জার দ্বারা (ইংরেজী) অনুবাদকৃত, One World, ২০০১, পৃষ্ঠা ৪০) তবে লক্ষণীয় যে, আয়াতে এটা বলা হয়নি যে, যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত আরো অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। বরং বলা হয়েছে যে, ‘বিশৃংখল হত' বা ফাসাদ হয়ে যেত। আর সেটাই প্রমাণ করে যে, এখানে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর ব্যত্যয় ঘটলে কিভাবে দুনিয়াতে ফাসাদ হয় সেটাই বোঝানো উদ্দেশ্য। কারণ, আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদের ইবাদত করলে সেখানেই ফাসাদ অনিবাৰ্য। কিন্তু যদি দুই ইলাহ থাকত, তবে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত। এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, আয়াতটি যেভাবে তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ বা প্রভুত্বে একত্ববাদের প্রমাণ, সাথে সাথে সেটি তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদেরও প্রমাণ। তবে এর দ্বারা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদাতে একত্ববাদের প্রয়োজনীয়তাই বেশী প্রমাণিত হচ্ছে। [বিস্তারিত দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৩৮৭: আন-নুবুওয়াত: ১/৩৭৬; ইবনুল কাইয়্যেম, মিফতাহু দারিস সা’আদাহ: ১/২০৬, ২/১১, ১২২; তরীকুল হিজরাতাইন ৫৭, ১২৫; আল-জাওয়াবুল কাফী ২০৩] আইজাক নিউটন লিখেছেন: “ সূর্য, গ্রহসমূহ এবং ধূমকেতুসমূহের এই সুন্দর সিস্টেমটি কেবল একজন বুদ্ধিমান ও ক্ষমতাবান সত্ত্বার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই চালু থাকা সম্ভব।”–[সূত্র: Newton, Principia, 2nd Edition; J. De Vries, Essentials of Physical Science, B.EerdmansPub.Co., Grand Rapids, SD, 1958, p.155] আমাদের স্রষ্টা কে? আমাদের স্রষ্টা হলেন আল্লাহ। বলে রাখা ভাল আল্লাহ হলেন তিনিই যিনি কারো থেকে সৃষ্টি হন নি, যিনি কারো থেকে জন্ম নেন নি ও কাউকে জন্ম দেন নি, যার স্ত্রী-ভাই-বোন নেই, যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছে, যিনি সর্বশ্রেষ্ট, সর্বোত্তম, সর্বশক্তিমান, সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, সবচেয়ে দয়ালু, ক্ষমাশীল, সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, আসমাউল হুসনাসহ সব গুন যার মধ্যে আছে, যিনি মানুষের চিন্তাভাবনার সবকিছুর ঊর্ধ্বে, যার সমকক্ষ কেউ নেই, যিনি একক ও অদ্বিতীয় সেই তিনিই হলেন আমাদের স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা যাকে মুসলিমরা আল্লাহ বলে ডাকে। আর আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে এই কথাগুলা কোরআন ও হাদিসেই বর্ণিত আছে। আশা করি আপনারা আমার উপরের আলোচনা থেকে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। যদি এটা পড়ার পর আল্লাহ আপনাকে হেদায়েদ দেয় তাহলে আলহাদুলিল্লাহ, আমার কষ্ট সার্থক হবে।

Comments