বহু প্রচলিত কিছু জাল ও যয়িফ হাদিস যা সবার জানা উচিৎ

knowledge of Islam-মঙ্গলবার, নভেম্বর ৩০, ২০২১ এখানে আমি এমন কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করব যেগুলাকে ব্যবহার করে অনেক নাস্তিক ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে প্রচার করে থাকে। আবার আমার অনেক মুসলিম ভাই ও না যেনে না বুঝে এসব বুক ফুলিয়ে প্রচার করে থাকে। হাদিসে রোগিকে দেখতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা ও ৩ দিন পর সেবা করার কথা আছে? তিন ধরনের রোগীর সেবা করা যায় না (দেখতে যাওয়া যায় না); চোখ উঠা রোগী, দাঁতের রোগী এবং ফোড়াধারি রোগী। (মুজামুল আওসাত ১/১১/১/১৫০), (উকায়লী ৪২১) ও (ইবনু আদী (২/৩১৯) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - তাবারানী ও ইবনু আদী বলেন হাদীসটি আওযাঈ হতে মাসলামা ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। আলবানী বলেছেন মাসলামা মিথ্যার দোষে দোষী। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেন তিনি কিছুই না। বুখারী বলেন তিনি মুনকারুল হাদীস। হাদীসটি ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (৩/২০৮) উল্লেখ করে বলেছেন এটি জাল (বানোয়াট)। এটিকে ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীরের কথা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। হাফিয ইবনু হাজার খুশানীর মুনকারগুলো “তাহযীবুত তাহযীব” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন আবু হাতিম বলেন এটি বাতিল, মুনকার। সুয়ূতী ইবনুল জাওযীর সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৪০৬) বলেছেন মাসলামা মিথ্যার দোষে দোষী নন, তাকে বাইহাকী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। বাইহাকী “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে (৬/৫৩৫/৯১৯০) বলেছেনঃ সঠিক হচ্ছে এই যে, এটি ইয়াহইয়ার কথা। এছাড়া এই হাদিস বেশ কিছু সহিহ হাদিসের বিপরীত রোগীর সেবা করতে হবে (দেখতে যেতে হবে) তিন দিন পর। (মু'জামুল আওসাত ১/২০০/১/৩৬৪৭) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - এ আবুল হারিস আল-ওররাক সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ كذاب তিনি মিথ্যুক। ইমাম বুখারী বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তার সমালোচনা করেছেন। আর রাওহ হচ্ছেন মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (৩/২০৫) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়, রাওহ এবং নাসর দু’জনই মাতরূক। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৪০৩) হাদীসটির শাহেদ উল্লেখ করেছেন। এর সূত্রে নূহ ইবনু আবী মারইয়াম এবং আবান রয়েছেন। নূহ মিথ্যার দোষে দোষী আর আবানও নূহের মতই। তিনি হচ্ছেন ইবনু আবী আইয়াশ। তিনি (রাসাূল সা) শুধুমাত্র তিন দিন পর রোগীর সেবা করতে (দেখতে) যেতেন। (ইবনু মাজাহ ১/৪৩৯), (আল-আখলাক ২৫৫) এবং (ইবনু আসাকির ১৬/২২৬/২, ১৯/১৩১/১) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - ইবনু আদী বলেন মাসলামা হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। আলবানী বলেছেন মাসলামা মাতরূক হবার বিষয়ে সকলে একমত। ইবনুল জাওযী বলেন মাসলামা মাতরূক। ইবনু যুরায়েজ মুদাল্লিস। তিনি দুর্বল বর্ণনাকারীদের থেকে তাদলীস করতেন। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৩১৫) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেনঃ এটি একটি বাতিল, জাল হাদীস। তার এ কথাকে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “তাহযবুত তাহযীব” গ্রন্থে মাসলামার মুনকারগুলো উল্লেখ করেছেন। নারীরাই সকল পাপের মূল? “যদি নারী জাতি না থাকত, তাহলে সত্যই সত্য আল্লাহর ইবাদত করা হত।" উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - এটি দু'টি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ প্রথম সূত্রটিতে বর্ণনাকারী আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-আমী রয়েছেন। তিনি তার পিতা যায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী হাদীসটি (কাফ ১/৩১২) উল্লেখ করে বলেছেন হাদীসটি মুনকার। নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-আমীর কোন হাদিসকে সমর্থন করেননি। ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেন মুহাদ্দিসগণ তাকে গ্রহণ করেননি। ইবনু মাঈন বলেন তিনি একজন মিথ্যুক, খবীস। আবূ হাতিম বলেন তার হাদীস ছেড়ে দেয়া উচিৎ। তিনি মুনকারুল হাদিস। তিনি তার পিতাকে দোষী করতেন। তার থেকে তিনি মহা বিপদ বর্ণনা করেছেন। আলবানী বলেছেন তার পিতা যায়েদ দুর্বল। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (২/২৫৫) ইবনু আদীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেন এর কোন ভিত্তি নেই। আব্দুর রহীম ও তার পিতা উভয়েই মাতরূক। সুয়ূতী ইবনুল জাওযীর সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৫৯) বলেছেনঃ এটির শাহেদ রয়েছে, কিন্তু তার এ সমালোচনা যথার্থ নয়। কারণ এর শাহেদ হিসাবে যে হাদীসটি উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটি আলোচ্য হাদীসটির চেয়ে উত্তম নয়। হাদীসটি নিম্নরূপঃ "নারীরা যদি না থাকত, তাহলে পুরুষরা জান্নাতে প্রবেশ করত।" কারণ এটির সনদে বিশর ইবনু হুসাইন নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন। তিনি মাতরূক, মিথ্যা বলতেন। মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে হাদীসটি এসেছে। সুয়ূতী বিশর সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুধুমাত্র বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। ইবনু ইরাক “তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২/২০৪) বলেছেনঃ তিনি হারিয়ে গেছেন এবং সাক্ষী হিসাবে কথা বলার উপযুক্ত নন বরং তিনি মিথ্যুক, জালকারী, তার হাদীস অন্য হাদীসের সমর্থনে শাহেদ হবার যোগ্য নয়।’ আবু বকর রা./ তার স্ত্রী এর খেজুর পাতার পোশাক পরিধান! প্রচলিত একটি পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে “ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিবার পূর্বে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) একজন বড় ধনাঢ্য লোক ছিলেন। যেদিন হযরত (দ.) এর খেদমতে আসিয়া তিনি ইসলামে দীক্ষিত হইলেন সেই দিন হইতেই তাঁহার যত ধন-সম্পত্তি ছিল সমস্তই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করিতে লাগিলেন। অবশেষে অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত হইয়াই সংসার-যাত্রা নির্বাহ করিতেন এবং খোদা তাআলার সন্তোষ লাভের আশা করিতেন। কিছুদিন পর এইরূপ অবস্থা হইয়াছিল যে, নিজের ও পরিবারের খোরাক পোশাকের জন্য অনেক কষ্ট করিতে বাধ্য হইলেন। একদিন পরনের কাপড়-অভাবে মসজিদে নামায পড়িতে যাইতে কিঞ্চিৎ দেরী হইয়াছিল দেখিয়া হযরত (দ.) বলিলেন, “হে আবু বকর! আমি জীবিত থাকিতেই ইসলামের প্রতি আপনাদের এত অবহেলা হইতেছে, আমি অভাবে আরও কত কি হয় বলা যায় না।” তখন সিদ্দীক (রা.) বলিলেন, “হুজুর! আমার অবহেলার কিছুই নহে, বাস্তবিক আমার পরনের কাপড় ছিল না, সেই হেতু আমি ছোট একখানা কাপড়ের সহিত বালিশের কাপড় ছিঁড়িয়া খেজুর পাতা ও কাঁটা দ্বারা সেলাই করত ধুইয়া শুকাইয়া পরিয়া আসিতে এত গৌণ হইয়াছে। হুজুর মার্জনার চক্ষে দর্শন করুন।” সিদ্দীক (রা.) এর কথা শুনিয়া হযরতের প্রাণ গলিয়া গেল। তাই তিনি দুঃখিত অন্তরে নামায আদায় করিয়া তাহার জন্য কিঞ্চিত দুআ করিলেন। ইহার কিছুক্ষণ পরেই জিবরাঈল (আ.) সম্পূর্ণ খেজুর পাতার পোশাক পরিয়া হযরত (দ.)এর সম্মুখে হাজির হইলেন। হযরত (দ.) তাহা দেখিয়া অবাক হইলেন ও জিজ্ঞাসা করিলেন, ভাই জিবরাঈল! প্রত্যহ তোমার শরীরে জরির পোশাক দেখিতে পাই, আর আজ খেজুর পাতার পোশাক দেখিতে পাইতেছি কেন? তদুত্তরে জিবরাঈল (আ.) বলিলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) খেজুর পত্রের সেলাই করা কাপড় পরিয়া নামায পড়িতে আসিয়াছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা সমস্ত ফেরেশতাকে ডাকিয়া বলিলেন, “দেখ হেফেরেশতাগণ! আবু বকর আমার সন্তোষ লাভের জন্য কতই না কষ্ট স্বীকার করিতেছেন। অতএব তোমরা যদি আজ আমার সন্তোষ চাও, আমার দফতরে তোমাদের নাম রাখিতে চাও, তবে এখনই আবু বকরের সম্মানার্থে সকলেই খেজুর পত্রের পোশাক পরিধান কর। নচেৎ আজই আমার দফতর হইতে সমস্ত ফেরেশতার নাম কাটিয়া দিব।' এই কঠোর বাক্য শুনিয়া আমরা সকলেই তাঁহার সম্মানার্থে খেজুর পত্রের পোশাক পরিতে বাধ্য হইয়াছি।” উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদীস, তাফসীর, সীরাত ও তারীখের নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ কোনো গ্রন্থে ঘটনাটি নেই। আবু বকর রা. সম্পর্কে লিখিত নির্ভরযোগ্য কোনো জীবনীগ্রন্থেও আমরা ঘটনাটি পাইনি। (১) আবার আরেক ধরনের হাদিস পাওয়া যায় সেটা হল, ‘একবার হযরত আবু বকর রা. আল্লাহর রাস্তায় দান করতে করতে সবকিছু দান করে দিলেন। এমনকি তিনি নিজের গায়ের পোশাকও দান করে দিলেন। এখন তিনি সতর ঢাকার জন্য ছালার চট পরিধান করলেন। হযরত আবু বকরের এই কাজ আল্লাহ এত পছন্দ করলেন যে, সমস্ত ফেরেশতাকে ডেকে বললেন, আমার হাবীবের দোস্ত আবু বকর নিজের সবকিছু দান করে চট পরিধান করেছে। সুতরাং তোমরাও তার অনুসরণে চট পরিধান কর। সমস্ত ফেরেশতা তখন দীর্ঘ তিনদিন পর্যন্ত চট পরিধান করে ছিলেন। ‘জিবরীল আ. একবার চট পরিহিত অবস্থায় নবীজীর কাছে আগমন করলেন। নবীজী বললেন, হে জিবরীল! আপনাকে তো এমন পোশাকে কখনো দেখিনি? উত্তরে জিবরীল আ. বললেন, আল্লাহ তাআলা আসমানে সকল ফেরেশতাকে এই পোশাক পরতে নির্দেশ করেছেন। কারণ আবু বকর যমীনে এই পোশাক পরেছে।’’ উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফযীলত বা আবু বকর রা.-এর ফযীলত হিসেবে অনেকে ঘটনাটি বলে থাকেন। কিন্তু আসলে এটি একটি জাল বর্ণনা যা উশনানী নামক জনৈক মিথ্যাবাদী কর্তৃক জালকৃত। (২) শাস্ত্রীয় নীতিমালার আলোকে বিচার করলে এটি একটি বানোয়াট ঘটনা' বলেই প্রতীয়মান হয়। অতিএব উল্লেখিত হাদিস দুটি জাল হিসেবে ধরা যায়। (১) খতীব বাগদাদী রহ. রচিত ‘তারীখে বাগদাদ' গ্রন্থে (৫/৪৪২) একটি 'জাল' বর্ণনা রয়েছে। এ ঘটনাটি সেই বর্ণনার বিকৃত ও সংযোজিত রূপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আহলে ইলম উলামায়ে কেরাম বর্ণনাটি দেখতে পারেন। আরও দেখুন, কিতাবুল মাওযূআত ২/৫৪ ৫৫, তানযীহুশ শরীয়া ১/৩৪৩, আলফাওয়ায়েদুল মাজমূআ ৩৩২ (২) ইবনুল জাওযী রাহ. এর আলমাউযুআত কিতাবে (খ. ১ পৃ.৩১৪), সুয়ূতী রাহ. আললাআলিল মাছনূআ-তে (১ : ২৬৯), এছাড়া আলফাওয়াইদুল মাজমূআ ১:৩৩২; তানযীহুশ শারীআহ ১:৩৯১ ইত্যাদিতে এই কথা বলা হয়েছে নবীর সাহাবীগণ বা আহলু বাইত নক্ষত্রতুল্য? মুসলিম সমাজে অত্যন্ত প্রচলিত একটি ‘হাদীস’ ‘‘আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।’’ [(জামেউল ইলম ২/৯১) ও (আল-ইহকাম ৬/৮২)] উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - হাদীসটি আমাদের মধ্যে এত প্রসিদ্ধ যে, সাধারণ একজন মুসলিম স্বভাবতই চিন্তা করেন যে, হাদীসটি বুখারী, মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তা ও সকল হাদীগ্রন্থেই সংকলিত। অথচ প্রকৃত বিষয় হলো, সিহাহ সিত্তা তো দূরের কথা অন্য কোনো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। যয়ীফ ও জালিয়াত রাবীগণের জীবনী গ্রন্থে, কয়েকটি ফিকহী গ্রন্থে ও অপ্রসিদ্ধ দুই একটি হাদীসের গ্রন্থে এ বাক্যটি এবং এ অর্থের একাধিক বাক্য একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জালিয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ অথবা অত্যন্ত দুর্বল এবং মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত। এজন্য আবূ বাকর বায্যার আহমাদ ইবনু আমর, ইবনু হায্ম যাহিরী আলী ইবনু আহমাদ, যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন। (আবদ ইবনু হুমাইদ, আল-মুসনাদ, পৃ. ২৫০; ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ৬/২৪৪; ইবনুল মুলাক্কিন (৮০৪হি), খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর ১/২৫০; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ২/১৪১-১৪২, ৩৭৯, ৮/৭৩; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/১৩৭; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৯-৫০; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১৪৭; ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী, শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ পৃ: ৪৬৭-৪৭১, সিলসিলাতুল যয়ীফা ৫৮) ইবনু আদিল বার বলেন এ সনদটি দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না, কারণ এ সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন মাজহুল। ইবনু হাযম বলেন এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিইয়ান রয়েছেন, তিনি দুর্বল আর হারিস ইবনু গোসাইন হচ্ছেন মাজহুল। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি। আলবানি বলেছেন সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলায়মান আত-তাবীল, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খাররাশ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান বলেন তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। উপরের হাদীসের ভাষাতেই আরেকটি হাদীস: ‘‘আমার আহলু বাইত অর্থাৎ বাড়ির মানুষেরা বা বংশধরেরা নক্ষত্রতুল্য, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হবে।’’ [(আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ ১/৮৬) ও (আল-ইবানাহ ৪/১১/২), (যায়লুল আহাদিসীল মাওযূ'আহ পৃঃ ২০১), (তানখীহুশ শারীয়াহ ২/৪১৯), (ফাওয়াইদুল মাযমূয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওযুআহ পৃঃ ১৪৪)] উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - নুবাইত ইবনু শারীত (রা) একজন সাহাবী ছিলেন। একাধিক তাবিয়ী তাঁর থেকে হাদীস শিক্ষা ও বর্ণনা করেছেন। তাঁরই এক অধস্তন পুরুষ আহমাদ ইবনু ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু নুবাইত তৃতীয়-চতুর্থ হিজরী শতকে দাবী করেন যে, নুবাইতের লিখিত একটি পান্ডুলিপি তার নিকট আছে। তিনি দাবী করেন, তিনি তার পিতা-পিতামহের মাধ্যমে এ পান্ডুলিপিটি পেয়েছেন। এতে লিখিত হাদীসগুলোর একটি এ হাদীস। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ লোকটি একজন জঘন্য মিথ্যাবাদী ছিলেন। তিনি নিজে জালিয়াতি করে এ পান্ডুলিপিটি লিখে তার ঊর্ধ্বতন দাদার নামে চালান। এ হাদীসটি এবং পান্ডুলিপিটির সকল হাদীস জাল। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ১/২১৪; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ১/১৩৬; সুয়ূতী, যাইলুল লাআলী,পৃ. ২০১; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/৪১৯; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ৯৮; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৪৮৯, সিলসিলাতুল যয়ীফা ৬২) ইবনু আদিল বার বলেছেন এ সনদটি সহীহ নয়, হাদিসটি নাফে' হতে এমন কেউ বর্ণনা করেননি যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়।’ আলবানী বলেছেন এ হামযা হচ্ছে আবু হামযার ছেলে; দারাকুতনী তার সম্পর্কে বলেন তিনি মাতরূক। ইবনু আদী বলেন তার অধিকাংশ বর্ণনা জাল। ইবনু হিব্বান বলেন তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে এককভাবে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন। সুতরাং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করাই হালাল নয়। হাদীসটি মিথ্যা, বানোয়াট, বাতিল, কখনও সহীহ নয়, যেমনটি ইবনু হাযম বলেছেন। একই রকম হাদিস আরো বর্ণনায় এসেছে যেখানে যাহাবী বলেন তাতে বহু সমস্যা রয়েছে! আহমাদ ইবনু ইসহাক দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বৈধ নয়, কারণ তিনি একজন মিথ্যুক।’ আলবানী বলেচেন আহমাদ ইবনু ইসহাক হতে বর্ণনাকারী অপর ব্যক্তি আহমাদ ইবনু কাসেম লোকাঈ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর কথাকে সমর্থন করেছেন। অনেকটা একই রকম আরো আছে - অবশ্যই আমার সাথীগণ নক্ষত্রতুল্য। অতএব তোমরা তাদের যে কারো কথা গ্রহণ করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে। [আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ ১/৮৬, আল-ইবানাহ ৪/১১/২] উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি জাল কারন - ইবনু আদিল বার বলেছেন এ সনদটি সহীহ নয়, হাদিসটি নাফে' হতে এমন কেউ বর্ণনা করেননি যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়। আলবানী বলেছেন এ হামযা হচ্ছে আবু হামযার ছেলে; দারাকুতনী তার সম্পর্কে বলেন তিনি মাতরূক। ইবনু আদী বলেন তার অধিকাংশ বর্ণনা জাল (বানোয়াট)। ইবনু হিব্বান বলেন তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে এককভাবে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন। সুতরাং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করাই হালাল নয়। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার জাল হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর একটি হচ্ছে এটি । ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে ৬/৮৩) বলেনঃ এটিই স্পষ্ট হয়েছে যে, এ বর্ণনাটি আসলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং বর্ণনাটি যে মিথ্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। (৬/৮৬) এ তিনি বলেছেন কীভাবে সম্ভব তাদের অন্ধ অনুসরণ করা যারা ভুল করেছেন, আবার সঠিকও করেছেন? ইবনু হাযম মতভেদ নিন্দনীয় অধ্যায়ে (৫/৬৪) আরো বলেনঃ আমাদের উপর ফরয হচ্ছে আল্লাহর নিকট হতে কুরআনের মধ্যে যা এসেছে ইসলাম ধর্মের শারীয়াত হিসাবে তার অনুসরণ করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ বর্ণনায় যা এসেছে তার অনুসরণ করা। (সিলসিলাতুল যয়ীফা ৬১) অনেকটা একই প্রকারের হাদিস হল - তোমাদের মধ্যে পুলসিরাতের উপর বেশী স্থিতিশিলতা অর্জন করবে সেই ব্যক্তি যে আমার আহলেবাইত এবং আমার সাথীগণকে বেশী ভালোবাসবে। (দাইলামী - ১/১/৮৪, আললিসান - ২/২২১) উল্লেখিত হাদিসটির তাহকিক - হাদিসটি খুবই দুর্বল কারন - আলবানী বলেছে এ সনদটি খুবই দুর্বল। কাসেম ইবনু বাহরাম সম্পর্কে হাফিয যাহাবী বলেন ইবনুল মুনকাদির হতে বর্ণিত তার আজব আজব বিষয় রয়েছে। ইবনু হিব্বান প্রমুখ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর হুসাইন ইবনু হুমরান এবং তার নিচের বর্ণনাকারীদেরকে আমি চিনি না। তবে মানবী "আলফায়েয” গ্রন্থে বলেনঃ এটি দুর্বল, এর কারণ এর মধ্যে হুসাইন ইবনু আলান রয়েছেন অথচ তিনি ইবনু আলানকে হাদিস জাল করার দোষে দোষী করেছিলেন। হাফিয ইবনু হাজার "আললিসান" গ্রন্থে তার মূলের উদ্ধৃতিতে বলেন যেমন ইবনুল জাওযী; তিনি আহমাদ ইবনু হাম্মাদের উদ্ধৃতিতে একটি হাদীস জাল করেছেন।

Comments