মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা:) কি আসলেই মুসলিমদের উটের মূত্র পান করার কথা বলেছিলেন? প্রমাণসহ উত্তর দেবেন কি?
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা:) কি আসলেই মুসলিমদের উটের মূত্র পান করার কথা বলেছিলেন? প্রমাণসহ উত্তর দেবেন কি?
এই প্রশ্নের উত্তর একদম সহজ ভাবে ছোট করেও দেওয়া যায় আবার বিস্তারিত অনেক বড় করেও লিখা যায়। আসলে ছোট করে উত্তর দিতে গেলে সমস্যা হয়ে যায় কারন প্রতিপক্ষ আরো প্রশ্ন ছুড়ে মারে। তাই একটু পড় করেই উত্তরটা লিখতে হবে, যাবে সব প্রশ্নের উত্তর একবারে চলে আসে।
এখানে বিস্তারিত উত্তর লিখছি না, মূল কিছু কথা বলব শুধু। এই লিঙ্ক থেকে দয়া করে বিস্তারিত পড়ে নিয়েন,
http://www.frommuslims.com/%E0%A6%89%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87/?swcfpc=1
মহানবী (সা) এর হাদিস থেকেই স্পষ্ট দেখা যায় যে, কিছু লোক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল তাই মহানবী ﷺ তাদেরকে উটের মুত্র ও দুধ ঔষুধ হিসেবে খেতে বলেছিলেন। [বিহার আল-আনওয়ার, ৫৯/৮৪; আরদাহ আল-আহওয়াদী ৮/১৯৭; আল মুহাল্লা ১/১৭৫; ইসলামওয়েভ.নেট এর ফতুয়া ৮৫৯৪৪] এছাড়া অন্য হাদিসে দেখা যায় যে কিছু মুসলিম উটের মূত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাবহার করতেন। [সহীহ বুখারী ৫৭৮০, ৫৭৮১]
এমন ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ কেন দিয়েছিলেন মহানবী সেটা আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, রাসূল ﷺ অন্য সাধারন মানুষদের মত ছিলেন না, তিনি ওহির মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন যে লোকগুলোর অসুস্থতার নিরাময় শুধু উটের দুধ ও মূত্রেই রয়েছে, আর কোন কিছুর মধ্যে নেই, মহানবী হয়ত ওহির মাধ্যমে এটাও জানতে পেরেছিলেন যে তারা মুনাফিক, তাই তিনি তাদেরকে তা খেতে বলেছিলেন। কারন মুনাফিকরা বাস্তবে মুসলিম না, যার কারনে তাদের জন্য হালাল ও হারাম তেমন মেটার করে না। [উমদাত আল- ক্বারী ৩/৩৩-৩৪; আল-হিদায়া ১/১০২]
আবার অনেকে কিছু বর্ণনা থেকে ধারনা করেন যে সেই মুনাফিকদের অনুরোধের কারনেই মহানবী ﷺ তাদেরকে উটের দুধ ও মূত্র খেতে অনুমতি দিয়েছিলেন। [ইবনে মনজুর: লিসান আল আরব ৬/৪৩০১; আল-জুবাইদি: ক্রাউন অফ দ্য ব্রাইড ৯/৭০ - মাওম; আওন আল-বারী ১/৪৩৪; সব গুলা বর্ণনা পড়লে স্পষ্ট প্রমান পেয়ে যাবেন]
যাইহোক এই (উরাইরা/উকল গোত্রে) হাদিসটা ছাড়া আর কোন সহিহ বা হাসান হাদিস নেই যেখান থেকে কেউ প্রমান দেখাতে পারবে উটের মুত্র খাওয়া ইসলামে জায়েজ। অবশ্যই হাদিসটিতে যাদেরকে উটের মূত্র খেতে বলা হয়েছিল তারা কোন মুসলিম ছিল না বরং তারা মুনাফিক ছিল, কারন উটের দুধ ও মুত্র খেয়ে সুস্থ হওয়ার পর তারা মহানবীর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে ধর্মত্যাগ করেছিল, সাহাবি রাখালকে হত্যা করেছিল ও উট গুলো চুরি করেছিল। তাই সেই মুনাফিকদেরকে হত্যা করার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। [বুখারি ৬৮৯৯; মুসলিম ১৬৭১; উটের দুধ ও মূত্র পান করার হাদিসটির সম্পূর্ণ বর্ণনা দেখলেই প্রমান পেয়ে যাবেন]
ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামকে ক্রিটিসাইজ করে আরো বলে থাকে যে ইসলামে উটের মুত্র পান করা সুন্নত। এখন ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান না থাকার কারনেই হয়ত তারা এমন মন্তব্য করে বা তাদের আসলেই মাথায় সমস্যা আছে। কারন কোন কিছুকে মহানবী ﷺ এর সুন্নত বলতে গেলে আগে অবশ্যই মহানবী ﷺ সেটা এক বা একাধিকবার করেছেন অথবা তিনি নিজের সাহাবিদেরকে করতে বলেছেন এমন সহিহ হাদিস থাকতে হবে। আবার কোন কিছুকে সাহাবিদের সুন্নত বলতে গেলেও একই রকম প্রমান থাকতে হবে যে সাহাবিরা সেটা করেছে বা অন্যদেরকে করতে বলেছেন।
অথচ মহানবী ﷺ নিজের পুরো জীবন দশাতে কখনো উটের মূত্র পান করেন নি, নিজের কোন সাহাবিকে উটের মূত্র পান করতে বলেন নি, কোন সাহাবিও উটের মূত্র পান করেছেন বা পান করার উপদেশ দিয়েছে এমন সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাবেঈদের থেকেও এমন কোন সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। আমাদের নবী বা সাহাবি বা তাবেঈ বা তাবে তাবেঈনদের কেউ অযথা কোন কারন ছাড়া উটের মূত্র পান করেছেন এমন কোন সহিহ বা হাসান হাদিস পাওয়া যায় না। এই থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে যারা বলে ইসলামে উটের মূত্র পান করা সুন্নত তাদের এই মন্তব্যটা আসলে তাদের জ্ঞনহীনতা ও অজ্ঞতার পরিচয় ছাড়া কিছুই না।
উটের মূত্রকে কেন্দ্র করে বিশেষ করে হিন্দুরা লাফালাফি করে বেশি। উপরের আলোচনায়ত আশা করি বেশ কিছু জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এখনোত আরো কিছু অভিযোগের জবাব দেওয়া বাকি আছে। সেগুলার আগে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলি। হিন্দুদের ধর্মে গরুর মল ও মূত্রকে নিয়ে অনেক কিছুই লিখা আছে, সেগুলা আপাতত উল্লেখ করছি না কারন সেসব সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানে। যাইহোক কিন্তু ইসলামের উটের মূত্র নিয়ে এসব কিছু বলা হয় নি, কোরআন বা হাদিসে আল্লাহ বা মহানবী বলেন নি যে, সবাই উটের মলমূত্র খাও, উটের মূত্র পবিত্র, উটের মলমূত্র খেলে পূন্য হবে, উটের মলমূত্র খেলে পাপ দূর হবে, উটের মলমূত্র দিয়ে গোসল কর, উটের মলমূত্র দিয়ে নিজেকে ও পরিবেশষকে পবিত্র কর, উটের মলমুত্রের অনেক উপকারিতা আছে, উট আমাদের মা, উট আমাদের বাবা, উটকে হত্যা করা যাবে না, উটকে পূজা কর, উট দেবি ও দেবতা, উট মানুষের উপকার করতে পারে, উটের আশির্বাদ নাও ইত্যাদি। এমন একটা কথাও কোরআন বা সহিহ হাদিসে নেই। তাই উটের মূত্রকে নিয়ে লাফালাফি একেবারেই পাগলামি ছাড়া কিছু না।
হানাফি ও শাফেই আলেমদের মত হচ্ছে উটের পেশাব শুধুমাত্র ঐ সময়ের হালাল হবে যখন এটি কোন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে ও ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার হবে। হাম্বলি ও মালেকি মাযহাবে এই নিয়ে ২টি মত পাওয়া যায়। তাদের আলেমদের মতে যদিও হালাল পশুর মলমূত্র পাক ও পবিত্র কিন্তু তারপরও তাদের অনেক আলেম বলেছেন এসব ঔষধ হিসেবে খাওয়া ছাড়া বৈধ হবে না। আহলে হাদিসদের আলেমদেরও এই একই মত [আল-মাবসুত ১/৫৩; আল-হাওইয়ুল কাবির ২/২৪৮; ফাতহুল বারি ১/৪৪১; উমদাত আল-কারী শরহ সহীহ আল-বুখারী ৩/৩৩, ৩৪, ১৫৪; নাতাইজ আল আফকার ৮/৮১; শারহু মুখতাসারিত তাহাওই ২/৩৮; বিদায়াতুল মুবতাদি ৪/৪১২; আল-হিদায়াহ ১/১০২, ৪/৪১২; তাবিঈনুল হাকাইক ৬/১০; আলবাহরুর রাইক ৮/১৮২; আল-ওয়াসিত ফিল মাযহাব ১/১৫৬; আল-ফাদিল আল-হিন্দী কাশফ আল-লিথাম ৯/২৯০; রাদ্দ আল মুহতার ৫/২১৫, ২১৬; আল বায়ান ওয়া আল তাহসিল ওয়া আল তাওজিহ ১৮/৩২৩; নববি, মাজমু আল ফাতাওয়া ৯/৫০, ৫১; রওদাত আল-তালিবীন ৩/২৮৫; ইবনে তাইমিয়া, মাজমু আল ফাতাওয়া ২১/৫৬২; মুসান্নাফ আব্দুল রাজ্জাক ৯/২৫৯; আল শাওকানি, নিল আল-আওতার ১/৫০, ৯/৯৩; কাশফ আল কিনা ৬/১৮৯-২০০; আল-শেরবিনি, মুগনি আল-মুহতাজ ৪/১৮৮; আল আনওয়ার লি আমান আল আবরা ২/৫১৮; আল মুহাল্লা ১/১৭৫, ২২২; আওন আল-বারী ১/৪৩৬; আল সিরাজী, আল মুহাদযাব ১/৪৬; আল হিদায়াত ওয়ালিনায়া ১/১০১, ১০২; শারহ জাদ আল-মুস্তাকনি ২৩/৮, ৯]
অর্থাৎ মেজরিটি স্কলার ও মুসলিমদের মতে উটের মূত্র সাধারন ভাবে খাওয়া জায়েজ নেই, কিন্তু কোন কারনে ঔষধ হিসেবে খেতে হলে তা জায়েজ হবে। এছাড়া উটের মূত্র এখনো কেন আরব দেশের কিছু মুসলিম খাচ্ছে, হাম্বলি ও মালেকি মাযহাবের আলেমদের ২য় মত, উটের মূত্রের উপকারিতা, স্কলারদের আরো বিস্তারিত আলোচনা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু আর্টিক্যালে উল্লেখ করা আছে দলিল সহ, তাই সেটা পড়ে নিবেন আশা করি তাহলে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না কারো মনে ইনশাআল্লাহ।
Comments
Post a Comment