জান্নাতে হুর এর বাস্তবতা ও নারীদের একটি প্রশ্ন

knowledge of Islam-শুক্রবার, আগস্ট ১৯, ২০২২ হুর (حُـور) শব্দ উৎপন্ন (حُـورِيَّـة ,حُورِيّ‎‎) স্ত্রীলিংঙ্গগত বিশেষণ যার অর্থ উজ্জ্বল সাদা-কালো চোখধারী। আরবীতে হুর (حُور‎‎) শব্দটি বহুবচন যার পুংবাচক একবচন হল ‘আহর’ (أحْوَر‎‎) ও স্ত্রীবাচক একবচন হল ‘হাউরা’ (حَوْراء‎‎) এবং (ازواج) ‘আযওয়াজ’ শব্দটি বহুবচন, এর এক বচন হচ্ছে زوج ‘যওজ’, যার অর্থ হচ্ছে জোড়া, এ শব্দটি স্বামী বা স্ত্রী অর্থে ব্যবহার করা হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হচ্ছে ‘যওজ’, আবার স্ত্রীর জন্য স্বামী হচ্ছে ‘যওজ’। অর্থাৎ এই শব্দটা দ্বারা নির্দিষ্ট করে স্ত্রী বা স্বামী বুঝায় না বরং দাম্পত্য সঙ্গী বুঝায়। কোরআনে হুর দ্বারা উদ্দেশ্যে শুধু সুন্দরী তরুণী জান্নাতি নারী নয় বরং পুরুষও হতে পারে, কারন হুর শব্দ দ্বারা বিশেষ করে নারীকে বুঝায় না, আর কোরআনে আল্লাহ বলেছেন হুরকে জান্নাতিদের দাম্পত্য সঙ্গী করবেন, স্ত্রী বানাবেন বলেন নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কিছু আয়াতের অনুবাদে বলা হয়েছে হুরদেরকে জান্নাতিদের স্ত্রী বানাবেন, তাই সবাই মনে করে হুর মানে শুধু নারী। অর্থাৎ কোরআন অনুসারে হুর শুধু পুরুষদের জন্য নয় বরং নারীদের জন্যও থাকবে। অবশ্যই হাদিসে নারী হুর কেন্দ্রিক হাদিস পাওয়া যায় বেশি। সাধারনত হুর বলতে মানুষ অতিশয় সুন্দরী; জান্নাতের পরী; স্বর্গের অপ্সরী ইত্যাদিকেই বুঝিয়ে থাকে। তাদেরকে হুর এই জন্য বলা হয় যে, দৃষ্টি তাদের রূপ ও সৌন্দর্যকে দেখে হয়রান (মুগ্ধ) হয়ে যাবে। অনেক মুর্খ হুর বিষয়টার অপব্যাখ্যা করে, হয়ত তারা মনে করে তারা অপব্যাখ্যা করে ইসলামকে ডিফেন্ড করছে আর না হয় তারা নারীদেরকে খুশি করছে। কোরআনের এই আয়াত গুলোতে একটাতেও নির্দিষ্ট করে নারী হুরের কথা বলা হয় নি, বা নির্দিষ্ট করে নারী হুরের সাথে পুরুষ জান্নাতিদের বিবাহ দেওয়া হবে এই কথাও বলা হয় নি। [1] এটা মনে করিয়েন না যে পুরুষের সাথে পুরুষের আর নারীর সাথে নারীর বিয়ে দেওয়াকে বুঝাচ্ছি, বরং আমি বুঝাতে চাচ্ছি এখানে বলা হয়েছে জান্নাতিদেরকে হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। আমরা অনুবাদকেই কোরআন মনে করি, যার কারনে অনেক মুসলিমই কোরআনের বেশ কয়েকটা আয়াতের অনুবাদ পরে ভুল বুঝে থাকে, বাজারে এমনও অনুবাদ আছে যেগুলোতে জগন্য ভুল রয়েছে। যাইহোক, কোরআনে শুধু দুটি আয়াতেই নির্দিষ্ট করে নারী হুরের কথা পাওয়া যায়। [2] জান্নাতে পুরুষরা কতগুলা হুর পাবে? আমাদের মুসলিমদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা ঘেতে আছে, সেটা হল, ইসলামে বলা হয়েছে সব জান্নাতি পুরুষ ৭০/৭২ টা হুর পাবে। আসলে হাদিসে জান্নাতে শুধু শহিদদের জন্য ৭০/৭২ টা হুরের কথা বলা হয়েছে, সব জান্নাতি মানুষের জন্য এটা বলা হয়নি। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে শুধু শহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ৬টি নেয়ামত রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল তাদেরকে ৭০/৭২ টি হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। [3] কোরআনে সাধারন জান্নাতি পুরুষদের জন্য হুর দেওয়ার কথা বলার সময় বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে ও হাদিসে সাধারন জান্নাতি পুরুষদের জন্য ২ জন স্ত্রী থাকবে তা বলা হয়েছে। এই থেকে বুঝা যায় সাধারন জান্নাতি পুরুষদের জন্য অন্তত দুজন করে স্ত্রী থাকবে। কিন্তু কেউ যদি আরো চায় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা, তাকে হয়ত আরো হুর দেওয়া হতে পারে, কারন জান্নাতে যে যেটা চাইবে আল্লাহ তাকে সেটা দিবেন কোরআনে বলেছেন। আলেমগণের মতে হয়ত প্রধান স্ত্রী দুইজন থাকবে আর তার আমল অনুসারে উপপত্নি থাকতে পারে আরো, যার সংখ্যা হাদিসে স্পষ্ট না। [4] এছাড়া সব জান্নাতি ৭২ জন হুর পাবে এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো একটাও সহিহ হাদিস না। যেমন ইবনু মাজাহর ৪৩৩৭ হাদিস, যেখানে বলা হয়েছে, “মহান আল্লাহ যাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাদের প্রত্যেককেই বাহাত্তরজন স্ত্রীর/হুরের সাথে বিবাহ দিবেন” কিন্তু হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ, অর্থাৎ হাদিসটি যয়িফের শেষ স্তরে আর এমন হাদিস কোন মতেই গ্রহন করা যায় না, হাদিসটি অতিরিক্ত যয়িফ হওয়ার ২টি কারন রয়েছে। ১ম কারন ইবনু মাজাহ একক ভাবে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন, ২য় কারন হাদিসটির সনদের ২ জন রাবীর উপর দূর্বল হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। [5] আরো একটি হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে, “অতি সাধারণ মর্যাদা সম্পন্ন একজন জান্নাতীরও আশি হাজার খাদিম ও বাহাত্তর জন হুর থাকবে।” কিন্তু এই হাদিসটিও যয়িফ। আবু ইসা তিরমিজী বলেছেন হাদিসটি গরিব ও শুধু একজনের রিওয়ায়াত থেকেই এটি পাওয়া যায়। এছাড়া এই হাদিসের সনদেও ২ জন রাবীতে সমস্যা রয়েছে। [6] এছাড়া আরো কিছু হাদিস আছে এই সংক্রান্ত কিন্তু সেগুলোও যয়িফ হাদিস। অর্থাৎ প্রতিটা জান্নাতি পুরুষ ৭২ জন করে হুর পাবে এই সংক্রান্ত কোন হাদিস সহিহ বা হাসান পর্যায়ের না। [7] জান্নাতে পুরুষরা হুর পাবে, তাহলে নারীরা কি পাবে? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই ধরনের প্রশ্ন করা হবে তাই হয়ত আল্লাহ উত্তর হিসেবে নিচের আয়াত গুলো নাজিল করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন - আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা কিছু তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। [8] আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের উদ্যানসমূহে। তারা যা কিছু চাইবে তাদের রবের কাছে তাদের জন্য তা-ই থাকবে। এটাই তো মহা অনুগ্রহ। [9] সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই তাদের জন্য থাকবে স্থায়ীভাবে; এটি তোমার রবের ওয়াদা [10] তাদের জন্য সেখানে থাকবে ফলমূল আর তাদের জন্য থাকবে তারা যা কিছু চাইবে। [11] স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী। [12] এখন কোন নারী যদি চায় পুরুষরা যেমন জান্নাতে হুর পাবে তেমনই যাতে তাদেরকেও সেরকম পুরুষ হুর দিতে হবে তাহলে তারা সেটাও পাবে ইনশাআল্লাহ, মোবাইল চাইলে সেটাও পাবে, ব্যাঙ-ক্যাঙ্গারুর মত লাফাতে চাইলে সেটাও পাবে, পাখির মত উড়তে চাইলে সেটাও পাবে ইনশাআল্লাহ। জান্নাতে আরো কি থাকে জানেন? জান্নাতে আমাদের চিন্তা থেকেও অনেক অনেক বেশি কিছু থাকবে, তার অল্প কিছু উদাহরন হল - মুমিন নারী-পুরুষ পাবে অগণিত রিযিক [13], বহু প্ৰাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হয়, জান্নাতে যেখানে ইচ্ছে সেখানে বসবাসের সুযোগ [14] , যদি জান্নাতী সন্তান জন্মের বাসনা করে, তবে গর্ভধারণ, প্রসব, শিশুর দুধ ছাড়ানো এবং যৌবনে পদাৰ্পন সব এক মুহুর্তের মধ্যে হয়ে যাবে। [15], চিরদিন সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না, চিরদিন জীবিত থাকবে, কখনো মরবে না চিরদিন সুখী থাকবে কখনো দুৰ্দশাগ্ৰস্ত হবে না এবং চিরদিন যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না, নিয়ামত প্রাপ্ত হবে, হতভাগা হবে না, যৌবন কখনও ফুরিয়ে যাবে না, কাপড়ও কখনও ছিড়ে যাবে না। [16] মুমিনরা আসনে বসে থাকবে ও তাদের উপরে সুশীতল ছায়া থাকবে [17] আল্লাহ জান্নাতে মানুষ থেকে বিদ্বেষ, হিংসা, ঈর্ষা, শক্রতা, ঘৃণা, দুঃক্ষ, কষ্ট, ক্লান্তি ইত্যাদি দূর করে দেবে [18], সোনার ও রূপার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে, পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। [19], তাদের খিদমত করার জন্য থাকবে তাদের খাদেম ছেলেরা যারা এমন সুন্দর যেমন ঝিনুকে লুকানো মোতি তারা সবসময় বালকই থাকবে। [20] আরো থাকবে হূর [1], জান্নাতিদের জন্য পান করার এমন পানীয় থাকবে যা অনেক সুস্বাদু, তার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু নেই, মাথাব্যাথা হবে না, এসব খেলে উলটা পালটা কথা বা উলটা পালটা কাজও করবে না, তাতে নেশাগ্রস্তও হবে না [21] পরিবারের লোকজন ও বন্ধু যারা যারা জান্নাতি হতে তারা এক সাথে থাকতে পারবে [22] জান্নাতে কি কি থাকবে বা কি কি দেওয়া হবে তা সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে সাধারন কিছু ধারনা দেওয়ার জন্যই কিছু উদাহরন পেশ করেছেন, না হয় জান্নাতে বাস্তবে আরো কি কি আছে সেটা কেউ কল্পনায়েও চিন্তা করতে পারবে না। আল্লাহ কোরআনে আরো বলেছেন - “অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!” [23] হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।” [24] আরেক হাদিস ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্য কোনো কিছুই জান্নাতবাসীদের নিকট মহান আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে না।’ [25] আল্লাহ ন্যায় বিচারক। কাউকে প্রাপ্যের বেশি কাউকে প্রাপ্যের কম, কারো প্রতি ন্যায় আর কারো প্রতি অন্যায় করেন না। ইসলাম ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী সমান অধিকারে না। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” [26] জান্নাতে আল্লাহ পুরুষকে বেশি দিবেন, নারীকে কম দিবেন এমন চিন্তা নিছক বোকামি ছাড়া কিছু না। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “পুরুষগণ যা অর্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য অংশ এবং নারীগণ যা অর্জন করে, তা তাদের প্রাপ্য অংশ।”[27] আল্লাহ আরো বলেছেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে আমলকারী কোন নর বা নারীর আমল বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।” [28] আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর বীচির আবরণ পরিমাণ যুলমও করা হবে না।” [29] আল্লাহ সবাইকে তার প্রাপ্য ও ন্যায্য প্রতিদান দিবেন, কোরআনে আছে, “যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” [30] বিস্তারিত আরো পড়তে পারেন [31] কোরআনে আল্লাহ আরো বলেছেন, “অচিরেই তোমার রব তোমাকে এরূপ দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।” [32] সাধারনত স্বামী ও স্ত্রী এক সাথে জান্নাতে থাকতে পারবে যদি তারা দুজনই জান্নাতি হয় তাহলে। [33] কিন্তু যদি পৃথিবীতে স্বামী মারা যাওয়ার কারনে স্ত্রী একের অধিক বিবাহ করে, আর সব স্বামীই যদি জান্নাতি হয় তাহলে সেই নারী শেষের ঘরের স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে। [34] কিছু যয়িফ হাদিস থেকে আলেমগণ বলেছেন তালাক প্রাপ্ত নারী জান্নাতে সেই স্বামীর সাথে থাকবে যে স্বামী তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে, আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় সে নারীটিকে এখতিয়ার দেয়া হবে যে, যাকে ইচ্ছে বাছাই করে নিতে। [35] নারীদের হুর দেওয়া নিয়ে ওলামাদের বক্তব্য গুলো হলো - মাজমাউল ফতোয়াতে, “যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতি কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেবেন।” [36] শাইখ উছায়মিন (রহ) বলেছেন, “নারীদের প্রতি পুরুষদের অধিক আসক্তির কারণে কুরআনে পুরুষদের জন্য হূরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জান্নাতী নারীদের জন্য তাদের স্বামীর ব্যাপারে কুরআন চুপ রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কোন স্বামী থাকবে না। বরং জান্নাতে তাদের স্বামী থাকবে।” [37] জান্নাতবাসী মহিলার জন্য তার দীনদার স্বামীকেই দেয়া হবে এবং তাকে জান্নাতের হুরদের সরদার বানিয়ে দেয়া হবে। মোট কথা, হুরদের চেয়ে দুনিয়ার জান্নাতী মহিলাদের মর্যাদা বেশী হবে। তবে দুনিয়ার কারো সঙ্গে বিবাহ হওয়ার পূর্বে যে মহিলার ইন্তিকাল হয়, তাকে দুনিয়ার পুরুষদের মধ্যে হতে যে কোন কাউকে বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হবে। যাকে সে পছন্দ করবে, তার সঙ্গেই সেখানে তার বিবাহ হবে। যদি সে কাউকে পছন্দ না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ পুরুষ হুর সৃষ্টি করে উক্ত মহিলাকে তার সঙ্গে বিবাহ দিবেন। উল্লেখ্য বেশির ভাগ আলেমদের মত হল যে জান্নাতের মধ্যে সকলের সব ধরনের খাহেশ পূর্ণ করা হবে সত্য, কিন্তু পূণ্যবান মহিলাদের ফিতরতের মধ্যে যেহেতু একাধিক স্বামীর কোন খাহেশই থাকে না, বরং সেই নারীরা এটাকে দোষণীয় মনে করে এবং এটাকে তারা মেয়েদের নষ্ট চরিত্র বা চরিত্রহীনতা বলে বিশ্বাস করে। সুতরাং এই কারনে তাদের একাধিক স্বামী থাকবে না বা তারা একাধিক স্বামী চাইবে না, বরং নারীরা একটি স্বামীতেই সন্তুষ্ট থাকবে। [38] বলে রাখা ভালো যে শেষেরটা সাধারনত আলেমদের মতামত, বুঝ, ধারনা। এই মতের পক্ষে শক্তিশালি কোন দলিল নিই, এছাড়া তাদের এই মত ভুলও হতে পারে কারন জান্নাতে কে কি চাইবে, কি হবে সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। এছাড়া অন্য আস্তিক ধর্মেও যেমন হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মে স্বর্গে হুর দেওয়া হবে এমন বর্ণনা পাওয়া যায়। আবার এই হুর নিয়ে নাস্তিকদের আলাদাই আজব ও উদ্ভট আচরন লক্ষ করা যায়। তারা ইহকালে হাজার নারীর সাথে সহবাসকে খারাপ মনে করে না বারন সেটাকে নিজেরদের আনন্দ, ভোগ, স্বাধীনতা, উপভোগ, সাধারন বিষয় মনে করে অথচ পরকালে হুরের কথা নিয়ে হাসি তামাসা করে। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় হুর না দিয়ে কি দিলে তারা খুসি হত, তখন আবার তাদের কাছ থেকে যৌক্তিক ও বাস্তব সম্মত উত্তর পাওয়া যায় না। এই নামধারী নাস্তিক যারা প্রকৃত পক্ষে ইসলাম বিদ্বেষী তাদের সব বিষয়েই এই মুনাফিকি অর্থাৎ ডাবল স্টেন্ডার্ড আচরন লক্ষ করা যায়। আবার অনেক নারী জানতে চায় যদি তারা আল্লাহর কাছে চায় আল্লাহ যাতে তাদের স্বামীকে হুন না দেয় তাহলেকি তা হবে কিনা। এর একটু সহজ ও সোজা উত্তর হচ্ছে তারা এমনটা জান্নাতে চাইবেই না। কারন এমনটা কোন মানুষ তখনই চাইতে পারে যখন তার মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি থাকবে কিন্তু জান্নাতেত আর এসব থাকবে না, যার কারনে কোন নারী তার স্বামীর অপর স্ত্রী বা হুরের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসাবোধ করবে না, আর এমন ত্রুটিযুক্ত আচরন যখন জান্নাতে থাকবেই না তাহলে সেখানে তার স্বামীকে যাতে হুর না দেওয়া হয় সেটাত কোন নারী চাইবে না। তথ্যসূত্রঃ [1] কোরআন ২:২৫; ৩৬:৫৫-৫৬; ৩৭:৪৮-৫০; ৩৮:৫২; ৪৪:৫৪; ৫২:২০; ৫৫:৫৬, ৫৮, ৭০-৭৮; ৫৬:২২-২৩, ৩৫, ৩৭ [2] কোরআন ৭৮:৩৩; ৫৬:৩৬ [3] তিরমিযী, ১৬৬৩; ইবন মাজাহ ২৭৯৯; সিলসিলাহ সহীহাহ ৩২১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩১; তা'লীকুর রাগীব ২/১৯৪; আহকামুল জানায়ীজ ৩৫; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; শায়খ ওয়ালীদ আল-ফিরিয়ান, ইসলাম প্রশ্নোত্তর, ফতোয়া নং ৮৫১১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; মুফতি ইব্রাহিম দেশাই, জিজ্ঞাসা-ইমাম, প্রশ্ন নং ৭০০৭, অক্টোবর ২৯, ২০০২; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতুয়া নং ৪১৩১৭০; ইসলাম কিউ এ ডট অর্গ, ফতুয়া নং ৩১৬৪৩ [4] সহিহ বুখারী ৩২৫৪; সহিহ মুসলিম ২৮৩৪, ১৮৮; সুনানে তিরমিজি ২৫৩৭; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; হাদী আল আরওয়াহ, পৃ. ১২৫, ১৫৭, ২৩২; মাজমু‘আল-ফাতাওয়া, ৬/৪৩২; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াহ, ২০/৩৪১; তারহ আত-তাতরিব ফি শারহ আত-তাকরিব, ৮/২৭০; আত-তাখউইফ মিন আন-নার, পৃ. ২৬৮; দুরুস লি’শ-শাইখ ‘আব্দুল-আযীয ইবনে বায, ৪/২১; ইবনে বাজের ফতোয়া নূর ‘আলা আদ-দারব, ৪/৩৫১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতুয়া নং ২৮৭০১৭ [5] সিল-সিলাতুজ জয়িফা ৪৪৭৩; তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৬৩, ৮/১৯৬ নং পৃষ্ঠা; রাবী নং ৭০২২, ৩২/১৮৯ নং পৃষ্ঠা; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫ [6] তিরমিজী ২৫৬২; মিশকাত ৫৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪১; আবূ ইয়া'লা ১৪০৪; হিদয়াতুর রুওয়াত ৫/২১৪, হা. ৫৫৭৩; য'ঈফ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২১৮৭; য'ঈফুল জামি ২৬৬; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; সালাহউদ্দীন ইউসুফ, রিয়াদুস সালিহীন, নাওয়াবীর তাফসীর, অধ্যায় ৩৭২ [7] Shaikh Assim al hakeem , islamqa.info , ড. আবু বকর জাকারিয়া আল-গাজ্জালী, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৯/৬০৮, ৬২০ (দার আল-মিনহাজ) [8] সূরা হা-মীম-সাজদা আয়াত ৩১ [9] সূরা আশ-শূরা আয়াত ২২ [10] সূরা ফুরকান আয়াত ১৬ [11] সূরা ইয়াসিন আয়াত ৫৭ [12] সূরা আয যুখরুফ আয়াত ৭১ [13] সূরা মুমিন আ.য়াত৪০ [14] সূরা আয-যুমার আয়াত ২০, ৭৮ [15] তিরমিযী ২৫৬৩ [16] মুসলিম ২৮৩৭; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪, ৩০৫; সহীহ ইবন হিব্বান ১৬/৩৯৬ [17] সূরা ইয়াসীন আয়াত ৫৬; সূরা আন-নিসা আয়াত ৫৭ [18] সূরা হিজর আয়াত ৪৭; সূরা আরাফ আয়াত ৪৩; সূরা ফাতির আয়াত ৩৪-৩৫; সহীহ বুখারী ২৪৪০ [19] সূরা হজ্জ আয়াত ২৩, সূরা ইনসান আয়াত ২১ [20] সূরা আত-তূর আয়াত ২৪; সূরা আল-ইনসান আয়াত ১৯ [21] সূরা সাফফাত ৪৫-৪৭; সূরা মুহাম্মাদ আয়াত ১৫; সূরা ইনসান আয়াত ৫-৬; সূরা ওয়াকিয়াহ আয়াত ১৭-১৯; সূরা তুর আয়াত ২৩ [22] সূরা গাফির আয়াত ৮; সূরা তুর আয়াত ২১; সুরা আয-যুখরুফ, ৭০ [23] সূরা সাজদা আয়াত ১৭ [24] বুখারী ৪৭৭৯; মুসলিম ১৮৯, ২৪২৪ [25] সহিহ মুসলিম হাদিস ১৮১ [26] সূরা আম্বিয়া আয়াত ৪৭ [27] সূরা নিসা আয়াত ৩২ [28] সূরা আলে ইমরা আয়াত ১৯৫ [29] সূরা নিসা, আয়াত ১২৪ [30] সূরা নাহল, আয়াত ৯৭ [31] Men and Women Are Equal in Reward [32] সূরা আদ দুহা আয়াত ৫ [33] সূরা আর-রাদ আয়াত ২৩; সূরা আয-যুখরুফ আয়াত ৭০ [34] ত্বাবরানী, আল-আওসাত, ৩/২৭৫, নং ৩১৩০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৭০; তারিখে ইবনে আসাকির ১৯/১৯৩; বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৭/৬৯–৭০; খতিব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ ৯/৩২৮; বুসীরী, ইতহাফুল খিয়ারাতুল মাহারাহ, ৪/৩৭ নং ৩২৬৪; ইবনে হাজার, আলমাতালিবুল আলিয়া ২/১১০; জামে‘ ছাগীর ৬৬৯১; আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সাহীহা ৩/২৭৫ [35] তাবরানী, মুজামুল কাবীর ২৩/২২২, ৩৬৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১১৯; রুহুল মা'আনী ২৫/১৩৬; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ৩/৪৩০ [36] মাজমাউল ফতোয়া ১৫/৩ [37] ফাতাওয়া উছায়মীন, ২/৫৩, ১৭৮ [38] ফাতাওয়া রহীমিয়া, ৫/২৯০; কানযুল উম্মাহ্, ১৪/৪৭৮; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল, ১/৩৪৬; ফাতাওয়া আব্দুল হাই, ১/১০৪; রুহুল মা'আনী ২৫/১৩৬

Comments