বেহেশতে নারীদের জন্য কী কী পুরস্কার রয়েছে? পুরুষ যেমন ৭০টা হুর পাবেন, নারীরা তেমন কিছু পাবেন কি?

বেহেশতে নারীদের জন্য কী কী পুরস্কার রয়েছে? পুরুষ যেমন ৭০টা হুর পাবেন, নারীরা তেমন কিছু পাবেন কি? মূল আর্টিক্যাল থেকে চাইলে উত্তর পড়ে আসতে পারেন। সেখানে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু বলা হয়েছে। আমি লিখাকে বেশি বড় করতে চাচ্ছি না, তাই শুধু মূল কিছু বিষয় নিয়ে এখানে বলছি - https://islamicknowledge80.blogspot.com/2022/08/blog-post.html নারীদের পুরুষ্কার কি হবে সেটা বলার আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার করা ভালো। আমাদের মুসলিমদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা ঘেতে আছে, সেটা হল, ইসলামে বলা হয়েছে সব জান্নাতি পুরুষ ৭০/৭২ টা হুর পাবে। আসলে হাদিসে জান্নাতে শুধু শহিদদের জন্য ৭০/৭২ টা হুরের কথা বলা হয়েছে, সব জান্নাতি মানুষের জন্য এটা বলা হয়নি। শহিদদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ৬ বা কোন কোন বর্ণনায় আছে তার বেশি স্পেশাল নেয়ামত দেওয়া হবে যার মধ্যে একটি হচ্ছে ৭২ হুর হুরের সাথে বিবাহ। আর সহিহ হাদিসে শুধু শহিদদের ব্যাপারেই এই ৭২ হুর সম্পর্কে বক্তব্য পাওয়া যায়। [1] আর প্রতিটি জান্নাতি পুরুষ ৭২টি হুর পাবে এই সংক্রান্ত কোন হাদিসই সহিহ না। [2] অবশ্যই সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় সব জান্নাতি পুরুষদের জন্য ২ জন কের স্ত্রী থাকবে। আলেমগণ বলেছেন আমল অনুসারে তার আরো বেশি থাকবে। [3] এবার আসি নারীরা কি পাবে সেই বিষয়ে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই ধরনের প্রশ্ন করা হবে তাই হয়ত আল্লাহ উত্তর হিসেবে নিচের আয়াত গুলো নাজিল করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন - আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা কিছু তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। [4] আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা থাকবে জান্নাতের উদ্যানসমূহে। তারা যা কিছু চাইবে তাদের রবের কাছে তাদের জন্য তা-ই থাকবে। এটাই তো মহা অনুগ্রহ। [5] সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই তাদের জন্য থাকবে স্থায়ীভাবে; এটি তোমার রবের ওয়াদা [6] তাদের জন্য সেখানে থাকবে ফলমূল আর তাদের জন্য থাকবে তারা যা কিছু চাইবে। [7] স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী। [8] এখন কোন নারী যদি চায় পুরুষরা যেমন জান্নাতে হুর পাবে তেমনই যাতে তাদেরকেও সেরকম পুরুষ হুর দিতে হবে তাহলে তারা সেটাও পাবে ইনশাআল্লাহ, মোবাইল চাইলে সেটাও পাবে, ব্যাঙ-ক্যাঙ্গারুর মত লাফাতে চাইলে সেটাও পাবে, পাখির মত উড়তে চাইলে সেটাও পাবে ইনশাআল্লাহ। জান্নাতে আমাদের চিন্তা থেকেও অনেক অনেক বেশি থাকবে। জান্নাতে কি কি থাকবে বা কি কি দেওয়া হবে তা সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে সাধারন কিছু ধারনা দেওয়ার জন্যই কিছু উদাহরন পেশ করেছেন কোরআন ও হাদিসে, না হয় জান্নাতে বাস্তবে আরো কি কি আছে সেটা কেউ কল্পনায়েও চিন্তা করতে পারবে না। আল্লাহ কোরআনে আরো বলেছেন - “অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!” [9] হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ “আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।” [10] আরেক হাদিস ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্য কোনো কিছুই জান্নাতবাসীদের নিকট মহান আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে না।’ [11] কোরআনে আল্লাহ আরো বলেছেন - “অচিরেই তোমার রব তোমাকে এরূপ দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।” [12] নারীদের হুর দেওয়া নিয়ে ওলামাদের বক্তব্য গুলো হলো - মাজমাউল ফতোয়াতে, “যে মহিলার বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে জান্নাতি কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দেবেন।” [13] শাইখ উছায়মিন (রহ) বলেছেন, “নারীদের প্রতি পুরুষদের অধিক আসক্তির কারণে কুরআনে পুরুষদের জন্য হূরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জান্নাতী নারীদের জন্য তাদের স্বামীর ব্যাপারে কুরআন চুপ রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের কোন স্বামী থাকবে না। বরং জান্নাতে তাদের স্বামী থাকবে।” [14] জান্নাতবাসী মহিলার জন্য তার দীনদার স্বামীকেই দেয়া হবে এবং তাকে জান্নাতের হুরদের সরদার বানিয়ে দেয়া হবে। মোট কথা, হুরদের চেয়ে দুনিয়ার জান্নাতী মহিলাদের মর্যাদা বেশী হবে। তবে দুনিয়ার কারো সঙ্গে বিবাহ হওয়ার পূর্বে যে মহিলার ইন্তিকাল হয়, তাকে দুনিয়ার পুরুষদের মধ্যে হতে যে কোন কাউকে বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হবে। যাকে সে পছন্দ করবে, তার সঙ্গেই সেখানে তার বিবাহ হবে। যদি সে কাউকে পছন্দ না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ পুরুষ হুর সৃষ্টি করে উক্ত মহিলাকে তার সঙ্গে বিবাহ দিবেন। উল্লেখ্য বেশির ভাগ আলেমদের মত হল যে জান্নাতের মধ্যে সকলের সব ধরনের খাহেশ পূর্ণ করা হবে সত্য, কিন্তু পূণ্যবান মহিলাদের ফিতরতের মধ্যে যেহেতু একাধিক স্বামীর কোন খাহেশই থাকে না, বরং সেই নারীরা এটাকে দোষণীয় মনে করে এবং এটাকে তারা মেয়েদের নষ্ট চরিত্র বা চরিত্রহীনতা বলে বিশ্বাস করে। সুতরাং এই কারনে তাদের একাধিক স্বামী থাকবে না বা তারা একাধিক স্বামী চাইবে না, বরং নারীরা একটি স্বামীতেই সন্তুষ্ট থাকবে। [15] বলে রাখা ভালো যে শেষেরটা সাধারনত আলেমদের মতামত, বুঝ, ধারনা। এই মতের পক্ষে শক্তিশালি কোন দলিল নিই, এছাড়া তাদের এই মত ভুলও হতে পারে কারন জান্নাতে কে কি চাইবে, কি হবে সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। এছাড়া অন্য আস্তিক ধর্মেও যেমন হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মে স্বর্গে হুর দেওয়া হবে এমন বর্ণনা পাওয়া যায়। আবার এই হুর নিয়ে নাস্তিকদের আলাদাই আজব ও উদ্ভট আচরন লক্ষ করা যায়। তারা ইহকালে হাজার নারীর সাথে সহবাসকে খারাপ মনে করে না বারন সেটাকে নিজেরদের আনন্দ, ভোগ, স্বাধীনতা, উপভোগ, সাধারন বিষয় মনে করে অথচ পরকালে হুরের কথা নিয়ে হাসি তামাসা করে। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় হুর না দিয়ে কি দিলে তারা খুসি হত, তখন আবার তাদের কাছ থেকে যৌক্তিক ও বাস্তব সম্মত উত্তর পাওয়া যায় না। এই নামধারী নাস্তিক যারা প্রকৃত পক্ষে ইসলাম বিদ্বেষী তাদের সব বিষয়েই এই মুনাফিকি অর্থাৎ ডাবল স্টেন্ডার্ড আচরন লক্ষ করা যায়। তথ্যসূত্রঃ [1] তিরমিযী, ১৬৬৩; ইবন মাজাহ ২৭৯৯; সিলসিলাহ সহীহাহ ৩২১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩১; তা'লীকুর রাগীব ২/১৯৪; আহকামুল জানায়ীজ ৩৫; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; শায়খ ওয়ালীদ আল-ফিরিয়ান, ইসলাম প্রশ্নোত্তর, ফতোয়া নং ৮৫১১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; মুফতি ইব্রাহিম দেশাই, জিজ্ঞাসা-ইমাম, প্রশ্ন নং ৭০০৭, অক্টোবর ২৯, ২০০২; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতুয়া নং ৪১৩১৭০; ইসলাম কিউ এ ডট অর্গ, ফতুয়া নং ৩১৬৪৩ [2] সিল-সিলাতুজ জয়িফা ৪৪৭৩; তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৬৩, ৮/১৯৬ নং পৃষ্ঠা; রাবী নং ৭০২২, ৩২/১৮৯ নং পৃষ্ঠা; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; তিরমিজী ২৫৬২; মিশকাত ৫৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪১; আবূ ইয়া'লা ১৪০৪; হিদয়াতুর রুওয়াত ৫/২১৪, হা. ৫৫৭৩; য'ঈফ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২১৮৭; য'ঈফুল জামি ২৬৬; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; সালাহউদ্দীন ইউসুফ, রিয়াদুস সালিহীন, নাওয়াবীর তাফসীর, অধ্যায় ৩৭২; Shaikh Assim al hakeem ; islamqa.info ; ড. আবু বকর জাকারিয়া ; আল-গাজ্জালী, ইহইয়া উলুম আল-দীন, ৯/৬০৮, ৬২০ (দার আল-মিনহাজ) [3] সহিহ বুখারী ৩২৫৪; সহিহ মুসলিম ২৮৩৪, ১৮৮; সুনানে তিরমিজি ২৫৩৭; তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সূরা আদ দুখান আয়াত ৫৪ এর তাফসির; ফাতহুল বারী, ৬/৩২৫; হাদী আল আরওয়াহ, পৃ. ১২৫, ১৫৭, ২৩২; মাজমু‘আল-ফাতাওয়া, ৬/৪৩২; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াহ, ২০/৩৪১; তারহ আত-তাতরিব ফি শারহ আত-তাকরিব, ৮/২৭০; আত-তাখউইফ মিন আন-নার, পৃ. ২৬৮; দুরুস লি’শ-শাইখ ‘আব্দুল-আযীয ইবনে বায, ৪/২১; ইবনে বাজের ফতোয়া নূর ‘আলা আদ-দারব, ৪/৩৫১; শায়খ জিব্রিল হাদ্দাদ, সুন্নিপথ ডট কম, প্রশ্ন আইডি: ৪৮২৮; ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফতুয়া নং ২৮৭০১৭ [4] সূরা হা-মীম-সাজদা আয়াত ৩১ [5] সূরা আশ-শূরা আয়াত ২২ [6] সূরা ফুরকান আয়াত ১৬ [7] সূরা ইয়াসিন আয়াত ৫৭ [8] সূরা আয যুখরুফ আয়াত ৭১ [9] সূরা সাজদা আয়াত ১৭ [10] বুখারী ৪৭৭৯; মুসলিম ১৮৯, ২৪২৪ [11] সহিহ মুসলিম হাদিস ১৮১ [12] সূরা আদ দুহা আয়াত ৫ [13] মাজমাউল ফতোয়া ১৫/৩ [14] ফাতাওয়া উছায়মীন, ২/৫৩, ১৭৮ [15] ফাতাওয়া রহীমিয়া, ৫/২৯০; কানযুল উম্মাহ্, ১৪/৪৭৮; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল, ১/৩৪৬; ফাতাওয়া আব্দুল হাই, ১/১০৪; রুহুল মা'আনী ২৫/১৩৬

Comments