তারাবিহ সালাত নিয়ে সকল বিভ্রান্তির সমাধান

knowledge of Islam-বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩১, ২০২২ মূল আলোচনা শুরুর আগে আমি বলে নিতে চাই যে, তারাবির সালাত সংখ্যা নিয়ে সবগুলো হাদিসের তাহকিক আপনারা এখানে পেয়ে যাবেন। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের মধ্যে একজন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির সাহেব তারাবিহ সালাতের প্রায় সকল হাদিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়া যাদের আরবি বুঝতে সমস্যা হবে তারা চাইলে [১] [২] [৩] [৪] পড়ে দেখতে পারেন। দ্বিতীয়বারে দেওয়া লিংকগুলোর ১ম দুটোতে বেশ কিছু অসংঘতি আছে তারপরও সেটাতে দেওয়া হাদিসের তাহকিক থেকে উপকৃত হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। তারাবিহর সালাত নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা সাধারণত রাতের সালাতকে কিয়ামূল লাইল বলা হয়ে থাকে। ‘তারাবীহ্’ শব্দটি বহুবচন, একবচনে ‘তারওয়ীহাতুন’ ‘‘ترويحة’’ মূলে শব্দটি মাসদার। কেউ কেউ বলে মূলত: তারবীহা ترويحة বৈঠক বা বসাকে বুঝায়। ইবনুল আসীর বলেন, تراويح শব্দটি ترويحة এর বহুবচন। আর এটি راحة থেকে تفعيلة ওযনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন تسليمة শব্দটি سلام থেকে এসেছে। পরিভাষায়, এটি এমন এক সালাত যা রমযান মাসে ইশার সালাতের পর পড়া হয়। অথবা বলা হয়: রমযান মাসে দু’ দু’ রাকা‘আত সালাত আদায় করা, যার রাকা‘আত সংখ্যা সম্পর্কে ফকীহগণের মতভেদ রয়েছে এবং অন্যান্য মাসআলা সম্পর্কেও। মূলত একে তারাবীহ্‌ বলা হয়, যেহেতু এর দ্বারা শান্তি বা প্রশান্তি চাওয়া হয়। কেননা চার রাকা‘আত সালাতের পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেন।অথবা প্রত্যেক দু’ রাকা‘আত পর। ফাইয়্যুমী বলেনঃ বিশ্রাম কষ্ট ও ক্লান্তিকে দূর করে— আর তারাবীহ্‌র সালাত راحة থেকে নির্গত হয়েছে, কেননা, এক ترويحة চার রাকা‘আতে। আর মুসল্লিগণ চার রাকা‘আত পর বিশ্রাম নেন। বলা হয়ে থাকে, এ সালাতটি দীর্ঘ এবং এতে প্রত্যেক চার রাকা‘আত পর মুসল্লিগণ বিশ্রাম নেয় বিধায় একে তারাবীহ্‌ বলা হয়। ☞ আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে (সাওয়াব প্রাপ্তির বিশ্বাস নিয়ে) রমযানে রাত্রি জাগরণ করে এবাদত করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [বুখারি, হাদিস ৩৬; সহিহ মুসলিম ১৬৫২ - সহিহ] ☞ রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। উজর ছাড়া তারাবির নামাজ না পড়লে সুন্নতে মুআক্কাদা তরক করার গোনাহ হবে। লাগাতার ছেড়ে দেয়া কবিরা গোনাহের শামিল। তারাবিহ সালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। [আজনারুল ফাতাওয়া : খ. ৩, পৃ. ৫২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৫; বাদাউস সানায়ে, ১/৬২৩; উমদাতুল কারি, খ. ১২, পৃ. ১৮৩; কামুসুল ফিকহ ২/৪৪৮; আরওজুল মুরবি-৬৫; শরহুন নুকায়া-১/৩৪১; আলবাহরুর রায়েক-১/১১৭; আলমুহাজ্জাব-১/৮৪; হুলয়াতুল উলামা-২/১১৯; আলইক্বনা-১/১১৭; নিহায়তুজ জাইন-১/১১৪; আলফুরূহ-১/৪৮৮; আল মুগনী ২/৬০১; আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ২/৬৪,৬৫; বিদায়াতুল মুজতাহেদ ওয়া নেহায়েতুল মুকতাসিদ ১/৪৭৩; আল-মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যাহ ২৭/১০৩] ☞ রমজানে তারাবিহতে পবিত্র কোরআন অন্তত এক খতম করা সুন্নত ও এক এর অধিক মুস্তাহাব [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ৭৬৭৯; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদিস ৭৯৩৮; সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৭; হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬; আততিবয়ান, পৃ. ১৫৯] ☞ আল্লাহ বলেন, “কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।” [সূরা মুজ্জাম্মিল আয়াত ৪], রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, সে আমাদের দলভূক্ত নয়, যে সুন্দর সূরে কুরআন তিলাওয়াত করে না। [বুখারী, হাদীস ৭৫২৭ - সহিহ], ‘এমন অনেক কুরআন তেলাওয়াতকারী রয়েছে, কুরআন যাকে অভিশম্পাত করে।’ [ইহয়াউ উলুমিদ্দীন ১/২৭৪] সুতরাং খতম তারাবি মুসল্লিদের বুঝতে কষ্ট হবে সেরকম দ্রুত পড়া উচিৎ নয়। [রাদ আল-মুহতার, ২/৪৯৭,৪৯৮.৪৯৯; হাশিয়াহ আল-তাহতাউয়ি মারাকি আল-ফালাহ-৪১৫,৪১৬] ☞ “ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে।”[তিরমিজী ৮০৬; ইবনু মাজাহ ১৩২৭] ☞ মসজিদে জামায়াতের সাথে কিয়ামূল লাইল পড়ার দলিল সহিহ হাদিসে রয়েছে এবং এর আরো ইজমাও রয়েছে। [সুনানে তিরমিযি ৮০৬; সহিহ বুখারি, হাদিস ২০১০; সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ১০৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ৭৬৭৯; শুআবুল ঈমান, হাদিস ৩০০৪] ☞ মহিলাদের জন্য মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও বা বাসায় পুরুষ ইমামের পিছনে সঠিক পর্দা মেনে জামায়াতে তারাবিহ পড়া জায়েজ আছে। [মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃষ্ঠা ২২; হাশিয়াতুর রওজ ২/২০১; আদদুররুল মুখতার ১/৫৬৬; আল বাহরুর রায়েক ১/৬২৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/২৮৪] ☞ বর্তমানে তারাবীর পর মুনাজাতে বা এমনি সাধারণ ভাবে যে বিশেষ দোয়াগুলো পড়া হয়ে থাকে যেমন “সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি ...”, “আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ...” ইত্যাদি তা কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই সেগুলাকে জরুরি মনে করে পড়া স্পষ্ট বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। যদি শুধুই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা বা দোয়া করার উদ্দেশ্যে পড়ে তাহলে সমস্যা নেই, তারপরও এসব না পড়ে বাংলায় দোয়া করাই উত্তম কারন সেগুলা পড়ার সময় যতই চেষ্টা করুক তারপরও এগুলাকে ইসলামের বিধান মনে করার একটা প্রবনতা থেকেই যায়। [বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৮; এগুলা কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয় ও সুন্নাহ বা মুস্তাহাব মনে করে এসব পড়া যাবে না, ফতুয়া দিয়েছেন সমসাময়িক বিখ্যাত ফতুয়ার ওয়েবসাইটগুলো ও বিখ্যাত ওলামাগণ - [১] [২] [৩] [৪] [৫]। দোয়া গুলো উল্লেখ আছে - রাদ আল-মুহতার ২/৪৯৬-৪৯৭; হালাবি কবির, নামাজের বই, তারাবিহ নামাজ-৩৫০, ৪০৪; তালা আল-আনওয়ার, ২/২৯৯-৩০০; খায়ের আল-ফাতওয়া ২/৫২১] তারাবিহ সালাতের রাকাত সংখ্যা বিভিন্ন হলেও সকল হাদিসে কিছু মিল রয়েছে তা হল - নবী করিম ﷺ বা সাহাবিগণ কেউই তারাবি ১/১:৩০ ঘন্টায় শেষ করতেন না বরং তাদের তারাবি হত কমপক্ষে ৩/৪ ঘন্টা। এবং তারা রমজানে তারাবিহতে কমপক্ষে কোরআন ২/৩ খতম করতেন। কোরআন তেলাওয়াত সুদ্ধ ও স্পষ্ট করে করতেন। তারাবিহ সালাতের রাকাত নিয়ে মারামারি করতেন না। তাই সুন্নত পালন করতে ৮/২০ রাকাত নিয়ে মারামারি না করে সঠিক ভাবে তারাবিহ আদায় করার অনুরোধ করছি। কেউ চাইলেই তারাবি ৮ রাকাত, ১০ রাকাত, ১২ রাকাত, ২০ রাকাত ইত্যাদি পড়তে পারে। কারন সবগুলোর পক্ষেই সহিহ হাদিস রয়েছে এবং তারাবিহ সালাতেরও তাহাজ্জুদের মত কোন নিদিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই। কিন্তু অনেক মসজিদে দেখা যায় ২০ রাকাত তারাবিহর মধ্যে কিছু ভাই ৮/১০ রাকাত পড়ে বের হয়ে যায় কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। এমন করলেত আর খতম তারাবিহর পূর্ণ করা সম্ভব হবে না। যদি কারও ৮ রাকাত পড়তে ইচ্ছা হয় তাহলে তারা যে মসজিদে ৮ রাকাতের জামায়াত হয় সেখানে সালাত পড়বেন দয়া করে। তাহলে আপনার ৮ রাকাত তারাবিহও হবে আবার খতম তারাবিহও পূর্ণ হবে। ☞ কিন্তু যেখানে ২০ রাকাত তারবিহ হয় সেখানে ৮/১০ রাকাত তারাবিহ পড়ে দয়া করে বের হয়ে যাবেন না। সূরা তারাবিহতে চাইলে ৮/১০ রাকাত পড়ে বের হয়ে যেতে পারেন কিন্তু তা করাটাও অনুত্তম কারন এতে অন্যদের সালাতে মনোযোগ ও গুরুত্বে ব্যঘ্যাত ঘটে। [তিরমিজী ৮০৬; ইবনু মাজাহ ১৩২৭; আল-ফাতাওয়া, কিতাবুদ দাওয়াত, ১/১৯৪-১৯৬; ফাতাওয়া আস-সিয়াম, পৃ. ১৪৪-১৪৫] ৮/২০ রাকাত ছাড়া অন্য রাকাতের তারাবিহ তারাবিহ সালাত ৮ ও ২০ রাকাত ছাড়াও অন্যান্য রাকাতের তারাবির সালাত রয়েছে। প্রথমে ৮/২০ রাকাতের বাহিরে অন্যা দলিল গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ☞ এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন রাতের সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু’রাক‘আত দু’রাক‘আত করে আদায় করবে। আর যখন ভোর হবার আশঙ্কা করবে, তখন আরো এক রাক‘আত আদায় করে নিবে। সে রাক‘আত তোমার পূর্বের সালাতকে বিত্র করে দিবে। [বুখারী, হাদীস ৪৭৩; মুসলিম, হাদীস ৭৪৯ - সহিহ] আহমাদ (রা)-এর পুত্র আবদুল্লাহ বলেন, আব্বাজীকে এত বেশি রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছি, যার সংখ্যা উল্লেখ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। [মাসাইলুল ইমাম আহমাদ (৪৫৫); আলমুবদি‘ ২/২২] বিচারক ইমাম আবু ইউসুফ ইয়াকূব বিন ইব্রাহিম আল-আনসারী (রহ) এর গুণাবলীর বইতে: ইউসুফ বিন আবি ইউসুফ তার পিতার সূত্রে, আবু হানিফার সূত্রে, হাম্মাদ থেকে, ইব্রাহিমের সূত্রে বলা আছে যে, লোকেরা রমজানে পাঁচ ধরনের তারাবীহ নামায পড়ত। [আবু ইউসুফ, ইয়াকুব বিন ইব্রাহিম, কিতাব আল-আতহার পৃষ্ঠা ৪১ - সহিহ] আল্লামা কাশমিরী (রহ) বলেন, ওমর (রা) এর জামানায় তারাবি ৫ ধরনের পাওয়া যায়, ৪টা শক্তিশালী সনদে বর্নিত। [আরফুশা শাজি-২/২০৯ - সহিহ] আল্লামা আইনি হানাফি (রহ) তারাবির রাকাতের ব্যাপারে ইখতিলাফ বর্ননা করেন, ৩৮, ৩৬, ২৮, ২০, ২৩, ১৩, ১১ ইত্যাদি [উমদাতুল কারি'১১/১২৬,১২৭] শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ) বলেন, বর্ণনাগুলোর পারস্পরিক বৈপরিত্য ও সেগুলোর মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে বলা যায়, রাকা‘আত সংখ্যা কম বা বেশী হতে পারে দন্ডায়মানের দীর্ঘতা ও স্বল্পতার উপর। তিনি বলেন, উত্তম হলো মুসল্লীদের সিদ্ধান্ত বা পারিপাশ্বিকতা যদি তাদের র্দীঘ সময় দন্ডায়মান থেকে দশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌ ও তিন রাকা‘আত বিতির সালাত আদায় করা সম্ভব হয় যেমনটি নবী করিম (স.) ও অন্যান্যরা রমযানে আদায় করেছেন, তবে সেটিই উত্তম। আর যদি মুসল্লীরা সেটা করতে সমর্থ না হয় তবে বিশ রাক‘আত পড়া উত্তম। আর এটির উপরই অধিকাংশ মুসলিম আমল করে থাকেন। কেননা বিশ সংখ্যাটি দশ ও চল্লিশ এর মাঝামাঝি। আর যদি কেউ চল্লিশ রাকা‘আত বা অন্য কিছু পড়ে তবে তাও জায়েয। এখানে মাকরূহ হওয়ার কিছু নেই। কেউ যদি মনে করে যে, তারাবীহ এর ক্ষেত্রে রাসূল ﷺ এর বর্ণিত নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রয়েছে যার মধ্যে কোন কম-বেশ করা যাবে না তাহলে সে সুস্পষ্ট ভুলের মধ্যে রয়েছে। [মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১৩; ফাতাওয়া শায়খিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২/৪০১] ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ) বলেছেন: “যিনি ইমাম আবু হানীফা শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাত তারাবী সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত তারাবী আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত তারাবী আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন। তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম হবে।”[আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪] মূলত তারাবীর জন্য নবী কারীম ﷺ রাকাতের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি রমযান ও রমযানের বাইরে তের রাকাতের বেশি পড়তেন না, কিন্তু তাতে কেরাত অনেক দীর্ঘ করতেন। [মাজমূউল ফাতাওয়া ২২/২৭২] ইবনে তাইমিয়া (রহ) এর মত একই ফতুয়া দিয়েছেন - [ফাতাওয়া আস-সিয়াম, পৃ. ১৩৫, ১৪২-১৪৪; ফতহুল বারী, ৪/২৯৮; আল-ফাতাওয়া, কিতাবুদ দাওয়াত, পৃ. ১/১৯১-১৯২; আবু আবদুল্লাহ ইবনে মুফলিহ ১/৪৮৮; আলমুবদি‘ শারহুল মুকনি‘ ২/২২; আননুকাত ওয়াল ফাওয়াইদুস সানিয়্যা ১/৯০; আলইনসাফ, মুরদাভী ২/১৮০] আল-সুয়ুতি (রহ) বলেছেন, “সহীহ ও হাসান হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তা হল রমজান মাসে রাতের নামায পড়ার নির্দেশ, যা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ না করেই উৎসাহিত করা হয়। রাসুল ﷺ বিশ রাকাত তারাবীহ নামায পড়েছেন বলে প্রমাণিত নয়, বরং তিনি রাত্রে অনির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নামায পড়েছেন। অতঃপর তিনি চতুর্থ রাতে তা বিলম্বিত করলেন, যাতে তা তাদের জন্য ওয়াজিব না হয়ে যায় [আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়াহ, ২৭/১৪২-১৪৫] ☞ নবী করীম ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রমজানের কিছু রাতে মাত্র দুই রাকাত নামায পড়তেন, যা তাঁর থেকে বর্ণিত সবচেয়ে কম। যেমন একটি হল মহানবী ﷺ এক রাতে সালাতে দাড়ালেন ও এক সাহাবিও উনার পিছনে দাড়ালেন নামাজ পড়তে, তখন মহানবী ﷺ ২ রাকাত নামাজ শেষ করেছিলেন সেই দুই রাকাতের ১ম রাকাতে সূরা বাকারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা নিসা পুরো পড়েছিলেন ও ওনার সালাত ততখন শেষ হয়নি যতক্ষন না বিলাল (রা) আজান দেন। [আহমেদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ ৫/৪০০- হাদিস সহিহ] ☞ হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে এক রমযান সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ রুকু করলেন এবং রুকুতে বললেনঃ "সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম" তার রুকু তার দাঁড়ানো থাকার সমপরিমাণ ছিল। তারপর উভয় সিজদার মধ্যে বসে বললেন, তার বসাও তার কিয়ামের সমপরিমাণ হত। তারপর সিজদা করলেন এবং বললেন, "সুবহানা রব্বিয়াল আ'লা" তার সিজদাও তার কিয়ামের সমপরিমাণ হত। মাত্র চার রাকআত সালাত আদায় করতেই বিলাল (রা) এসে ফজরের সালাতের সংবাদ দিলেন। [সুনান আন নাসায়ী ১৬৬৮ - হাদিসটিকে অনেকে মুরসাল বলেছে কিন্তু হাদিসটি সহিহ ও গ্রহনযোগ্য] ☞ আল-বুখারী এবং মুসলিম ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃত্বে বর্ণনা করেছেন, রাতে নবীর নামাযের বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন তিনি দুই একক সালাত আদায় করেন, তারপর দুই, তারপর দুই, তারপর দুই, তারপর দুই, তারপর দুই (বর্ণনাকারী বলেন) : ছয়বার), তারপর বিতর.." [(বুখারী, সহীহ ১/৭৮, ৪০১, ৪/১৬৬৬, ১৬৬৭, এবং মুসলিম, সহীহ ১/৫২৬ এবং মুসলিম এই সংখ্যাটি জায়েদ বিন খালিদ আল-জুহানী, হতে ... নবীর কর্তৃত্বে বর্ণনা করেছেন, (মুসলিম, আল-সহীহাহ ১/৫৩১) - সহিহ] ☞ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বায়িস (রহ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রা)-কে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিতর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন অথবা তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি সাত রাক‘আতের কম এবং তের রাক‘আতের অধিক বিতর করতেন না। [আহমাদ (৬/১৪৯); আবু দাউদ ১৩৬২ - হাদিস সহিহ] ☞ মালেক (রহ.) দাউদ ইবন হুসাইন থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি আল ‘আরাজ কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, রমযান মাসে মানুষকে কাফেরদের অভিসম্পাত দেয়া অবস্থায় পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, আট রাকা‘আতে ক্কারী সূরা বাকারাহ পাঠ করত। অত:পর যখন বার রাকা‘আত পড়তে যেতেন, তখন মানুষ মনে করত যে, (কিরাআত) হাল্কা করা হয়েছে। [ইমাম মালেক, আল-মুয়াত্তা (১/১১৫) নং (২৫৩); আব্দুর রাযযাক, আল- মুসান্নাফ (৪/২৬২) নং (৭৭৩৪] ☞ আবদুল্লাহ ইবনে কায়সের বর্ণনায় স্বয়ং আয়েশা (রা) থেকেই সহীহ সনদে তের রাকাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩৬২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫১৫৯; শরহু মাআনিল আসার, তহাবী, হাদীস ১৬৯৭ - সহিহ] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রা) বলেন, আমরা ওমর (রা)-এর যামানায় রামাযান মাসে ১৩ রাকাত সালাত পড়তাম। [মুহাম্মাদ ইবনু নাছর, কিয়ামুল লাইল; ফাৎহুল বারী ৪/৩১৯ পৃঃ - সহিহ] মুহাম্মদ বিন ইসহাক, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ১৩ রাকাত তারাবির সালাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন [ফাওয়াইদ আবী বাকার নিশাপুরী হাদিস ১৩৬ - সনদ হাসান] ☞ সাঈদ ইবন জুবায়ের হতে বর্ণিত : তারাবীহ্‌র সালাত চবিবশ রাকা‘আত। কেউ কেউ বলেন, বিতর ব্যতীত ষোল রাকা‘আত [ইবন হাজার,ফতহুল বারী, (৪/২৫৪)] ☞ ইবনে মাহদী আমাদেরকে দাউদ ইবনে কাইসের সূত্রে বলেছেন, তিনি বলেন, আমি ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ও আবান ইবনে উসমানের সময়ে মদীনায় লোকদের সাথে মিলিত হয়েছিলাম, ছত্রিশ ওয়াক্ত নামায পড়তাম এবং আদায় করতাম। তিনটির সাথে আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা [ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ ২/১৬৪ - সনদ সহিহ] দাউদ ইবনু কাইস বলেছেন, ‘উমার ইবনু আবদিল আযিয ও আবান ইবনু উসমানের যুগে মদিনাতে লোকদের দেখেছি, তাঁরা ছত্রিশ রাকাত (তারাবিহ) ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।’ [মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবাহ : ৭৬৮৯] মুহাম্মদ ইবন নসর দাউদ ইবন কায়সের বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, আবান ইবন উসমান ও ওমর ইবন আব্দুল আযীযের শাসনকালে মদিনায় আমি মানুষদেরকে ছত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তারা তিন রাকা‘আত বিতির পড়তেন। [মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৪৯] নাফে‘ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মানুষকে উনচল্লিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে দেখেছি [আবু ওমর ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল বির আন নামিরী,আল ইস্তেযকার; তাহকীক সালেম মুহাম্মদ আতা,মুহাম্মদ আল মুয়াওয়্যায(২/৭০)] ☞ ইবনে আবী শায়বাহ (রহ) বলেন, হাফস আমাদেরকে আল হাসান ইবনে উবাইদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, "আব্দুল-রহমান ইবনে আল আসওয়াদ আমাদের সাথে রমজানে চল্লিশ রাকাত নামায পড়তেন এবং সাত রাকাত বিতর পড়তেন" [ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ ২/১৬৩, এবং ১৬৭] ইবন আবি শাইবাহ হাসান ইবন উবায়দিল্লাহ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ আমাদের সাথে রমযান মাসে চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌ এবং সাত রাকা‘আত বিতির সালাত পড়েছেন। [মুসান্নাফ,ইবন আবি শাইবা, (২/১৬৩) নং ৭৬৮৭] ইবন আব্দুল বার (রহ) আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন চল্লিশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌ ও সাত রাকা‘আত বিতির। [আবু ওমর ইউসুফ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল বির আন নামিরী,আল ইস্তেযকার; তাহকীক সালেম মুহাম্মদ আতা,মুহাম্মদ আল মুয়াওয়্যায (২/৭০)] ☞ ইমাম শাফেয়ী (রহ) বলেন, আমি মদিনাতে মানুষকে উনচল্লিশ রাকা‘আত এবং মক্কায় তেইশ রাকা‘আত পড়তে দেখেছি। এ থেকে এখানে আর কোন কিছু সংকীর্ণ নেই। তার থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, যদি কিয়াম দীর্ঘ হয়, সিজদা কম হয় তবে তা ভালো। আবার যদি সিজদা বেশী হয় এবং কিরাত সহজ হয় তাও উত্তম। তবে প্রথমটি (কিরাত বড়) আমার নিকট বেশী প্রিয়। [ফতহুল বারী, (৪/২৯৮)] ইমাম শাফিঈ (রহ) বলেছেন - মদীনাবাসীদের দেখেছি, উনচল্লিশ রাকাত নামায পড়ে। আমার নিকট তারাবী বিশ রাকাত পড়া উত্তম। কেননা, মক্কাবাসীরা বিশ রাকাত পড়ে। তবে এসব সংখ্যার কোনটি নির্ধারিত নেই যে, এর বেশি পড়া যাবে না। [মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ২০২; মারিফাতুস সুনান, বায়হাকী ৪/৩৯,৪২] ইমাম মালিক মদিনার অধিবাসী ছিলেন। তাঁর যুগেও মদিনার মসজিদে এ রকমই পড়া হতো। তিনি বলেন, ‘মদিনায় লোকেরা কিয়ামু রমাদান যে পরিমাণ আদায় করত, তৎকালীন আমির আমার কাছে লোক পাঠিয়ে রাকাতের পরিমাণ তা থেকে কমিয়ে দিতে চাইল। তা ছিল বিতরসহ উনচল্লিশ রাকাত—ছত্রিশ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর। আমি তা কমাতে বারণ করলাম এবং বললাম—এই আমলের ওপর আমি মদিনাবাসীকে পেয়েছি; এটিই পুরনো আমল যার ওপর তাঁরা সবসময়ই আমল করে এসেছেন।’ [আল-মুদাওয়ানাহ, অধ্যায় : কিয়ামু রমাদান, ১/২৮৭], মদিনাবাসীগণ ছত্রিশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌ সালাত পড়েন। [শারহুল মুহাযযাব (৩/৫২৭)] ইবনে ক্বুদামাহ বলেন: “আবু-আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ (রহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম ছাওরী, ইমাম আবু-হানীফা (রহ) ও ইমাম শাফেয়ী (রহ)। আর ইমাম মালেক (রহ) বলেছেন: “তারবীহ ৩৬ রাকাত।”[আলমুগনী (১/৪৫৭)] ইমাম আবূ হানীফা (রহ), ইমাম শাফেয়ী (রহ), ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ) বিশ রাকাত তারাবীর কথা বলেছেন। হ্যাঁ ইমাম মালেক (রহ) বিশ রাকাতের চেয়ে বেশী পড়ার কথা বলেছেন। [খুলাসাতুল ফাতওয়া ১/৬৩; কিতাবুল উম ১/১৪২; আল মুগনী, ইবনে কুদামা ১/৮৩৩; আশ শারহল কাবীর ১/৩১৫, বিদাইয়াতুল মুজতাহিদ] ইমাম তিরমিজি (রহ) নিজের হাদিসের কিতাব সুনান আত-তিরমিজীতে ৮০৬ নং হাদিসে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে ৪১ রাকাত তারাবি ও ২০ রাকাত তারাবিহ এর কথা উল্লেখ করেছে। অনেকে বলে আট রাকাতের অধিক তারাবিহর সালাত পড়া যাবে না কারন মহানবী ৮ রাকাতের বেশি পড়তেন না। অথচ তাদের এই দাবিটি ভুল, তাদের দেওয়া দলিলটি হল ☞ আবূ সালামাহ্ ইবনু আবদুর রাহমান (রা) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রা)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল ﷺ -এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রা) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৭ - সহিহ] এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসূল ﷺ রাতে বিতর ছাড়া আট রাকাত পড়তেন। এ আট রাকাত হতে পারে তাহাজ্জুদের নামায, তারাবীর নামায নয়। কেননা এ হাদীসে বলা হয়েছে, রমযান এবং রমযানের বাইরে। আর সবার জানা কথা যে, রমযানের বাইরে তো তারাবীর নামায নেই। আবার হাদিসে দেখা যাচ্ছে রাসুল ৪ রাকাত করে পড়ছেন যেখানে তারাবি সাধারণত ২ রাকাত করেই পড়া হয়। বহু সহিহ হাদিস দ্বারা দেখা যায় যে রমজানের শেষ ১০ দিন মহানবী ﷺ রাত্রি জাগরন করতেন ও এবাদত করতেন যা ৮ রাকাতের পর ঘুমাতে যাওয়ার সাথে মিলছে না। আয়েশা (রা) নবী কারীম ﷺ যত রাকাত পড়তে দেখেছেন তত রাকাতের বর্ণনা দিয়েছেন। এর দ্বারা এটা জরুরি নয় যে, নবী কারীম ﷺ এর থেকে বেশি পড়তেন না। নবীজী তো সবসময় আয়েশা (রা) -এর ঘরে থাকতেন না যে, নবীজীর কোনো রাতের আমলই তাঁর অজানা থাকবে না। এছাড়া তারাবিগ যখন ওমর (রা) ২০ রাকাত করলেন তখনও অবশ্যই আয়শা (রা) প্রতিবাদ করার কথা ছিল কিন্তু এমন কোন ঘটনা পাওয়া যায় না। সুতরাং এই নামায হচ্ছে, তাহাজ্জুদের নামায, যদি এটা তারাবিহও হয় তাহলেও এই হাদিস দিয়ে এটা প্রমান করা সম্ভব না যে তারাবিহ শুধু ৮। ৮ রাকাত তারাবিহ ☞ আবূ সালামাহ্ ইবনু আবদুর রাহমান (রা) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রা)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল ﷺ -এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রা) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। [সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৭ - সহিহ] ☞ সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রা) থেকে বর্ণিতঃ: উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-উবাই ইবনু কা’ব এবং তামীমদারী (রা)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক’আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াইতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারী একশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করতেন, আর (আমাদের অবস্থা এই ছিল) আমরা নামায দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত হয়ে পড়লে) সাহায্য গ্রহণ করতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়তে পড়তে রাত শেষ হত) আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে ফিরে আসতাম। [মুয়াত্তা মালেক ১/১১৫; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩০২ অধিকাংশ স্কলার সহিহ বলেছে কিন্তু কয়েকজন কিছু অভিযোগ করেছে, কেউ যদি এই হাদিসকে সহিহ বলনে নারাজ থাকে তাহলে ২০ রাকাতের সেই হাদিসকেও সহিহ বলতে পারবে না] ☞ আসমা বিন জাইদ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ১১ রাকাত সালাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন [ফাওয়াইদ আবী বাকার নিশাপুরী হাদিস ১৩৫ - সনদ সহিহ] ☞ জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজান মাসে আমাদের সাথে ৮ রাকআত সালাত আদায় করেছেন এবং বিতর পড়েছেন। [সহীহ ইবনে খুযায়মাহ ১০৭০; ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/২৪০১, ২৪০৬ - সনদ হাসান] ☞ সাইয়েদুনা উবাই বিন কা‘ব (রা) হতে রেওয়ায়াত আছে যে, আমি রমযানের মধ্যে আট রাকআত এবং বিতর পড়েছি। এবং নবী ﷺ কে বললাম, তখন তিনি কিছুই বললেন না। অতএব এটি সন্তুষ্টিমূলক সুন্নাত হয়ে গেল [মুসনাদু আবী ইয়ালা, হা/১৮০১ - সনদ হাসান] ☞ ৮ রাকাত তারাবিহ এর আরো সহিহ বা হাসান হাদিস আছে [আবু ইয়ালা আল-মাওসিলি, আল-মুসনাদ ৩/৩৩৬; ইবনে হিব্বান, আল-সহীহ ৬/২৯০] ☞ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রা) বলেন, আমি সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রা)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমরা ওমর (রা)-এর যামানায় ১১ রাকাত সালাত আদায় করতাম। [সুনানে সাঈদ বিন মানছূর, আল-হাবী লিল-ফাতাবীর বরাতে ১/৩৪৯; হাশিয়া আছারুস সুনান, পৃঃ ২৫০ - সহিহ] ☞ উমরের যুগে সাহাবী ও অনুসারীরা আট রাকাত পড়তেন এবং প্রতি রাকাতে শত শত আয়াত পড়তেন। এর অর্থ এই যে তারা প্রতি রাকাতে পবিত্র কুরআনের অন্তত এক বা একাধিক অংশ তিলাওয়াত করতেন। আর প্রতি রাতে তারা পবিত্র কোরআনের আটটির বেশি পাড়া পাঠ করেন। এই কারণেই তারা সকালের আগে তারাবীহ শেষ করে। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তারা সন্ধ্যার নামাযের পর শুরু করতেন (বুখারী, সহীহ ২/৭০৭, এবং মালিক, আল-মুওয়াত্তা, পৃ. ১১৪) ☞ অনেক সাহাবি ও তাবেই ৮ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতির একত্রে ১১ রাকাত সালাত আদায় করেছেন [আল-মুগনী (২/৬০৪); আল-মাজমূ (৪/৩২)] ওমর (রা) এর সময়ও ৮ রাকাত তারাবির সালাত পড়া হয়েছে। [মুয়াত্তা মালিক ১/১১৫] ☞ আল্লামা আইনি হানাফি (রহ) তারাবিহ এর এখতেলাফ বর্ণনা করে, একদম শেষে এসে বলেন ইমাম মালেক (রাহ),ও আবু বকর আরাবি (রহ) ১১ রাকাতকে নিজের জন্য পছন্দ করতেন! [উমদাতুল কারি' ১১/১২৭] ☞ হানাফি মাযহাবে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়ানো হলেও ৮ রাকাতকেও সুন্নাহ বলা হয়েছে। আবূ হানিফার ছাত্র মুহাম্মাদ বিন হাসান অধ্যায় রচনা করেন: তিনি আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত ৮ রাকআত কিয়ামুল লাইল আদায় এর হাদীস উল্লেখ করেন। [“রমাদ্বান মাসের ক্বিয়াম ও তার ফযিলত” অধ্যায়] অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় হানাফী ফক্বিহ আব্দুল হাঈ লাক্ষ্ণৌভী বলেন: “সেটিকে (কিয়ামে রামাদ্বানকে) তারাবীহ নামে জানা হয়ে থাকে ” [তালিকুল মুমাজ্জাদ ১/৬১৮] ☞ ইমাম ইবনে হুমাম হানাফী বলেন - উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতির সহ এগার রাকআত জামআতের সাথে তারাবীহর সালাত আদায় করেছিল। [ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৪] ☞ এছাড়া ৮ রাকাতের বিতিরের হাদিসগুলোকে সমর্থন করেছেন অনেকে - [আল-বাহরুর রাঈক্ব ১/১১৭, মিরক্বাতুল মাফাতিহ ৩/৩৪৫, মারাক্বিউল ফালাহ পৃ: ১৫৯, কানযুল দাক্বাঈক ১/১২২, ইলমুল ফিক্হ পৃ: ১৯৫, মাআরিফুস সুনান ৫/৫৪৩১১; আলহাভী লিল্ ফাতাওয়া ১/৪১৭; আরেযাতুল আহওয়াযী শারহু তিরমিযী, ৪/১৯; কিতাবুত তাহাজ্জুদ, পৃষ্ঠা ১৭৬, হা/৮৯০, অপর একটি নূসখায় পৃ: ২৮৭] ২০ রাকাত তারাবিহ ☞ বায়হাকী হতে বর্ণিত তিনি তার সনদে বলেন, আমার নিকট আবু যাকারিয়া ইবন আবু ইসহাক সংবাদ দিয়েছেন, তার নিকট আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের নিকট মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব বর্ণনা করেছেন, তাকে জা‘ফর ইবন আউন, এবং তাকে আবুল খুসাইব এ মর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বলেন, রমযান মাসে সুয়াইদ ইবন গাফলাহ (রা) আমাদের সালাতে ইমামতি করতেন এবং তিনি পাঁচ বিশ্রামে বিশ রাকা‘আত সালাত আদায় করতেন। (আল-বায়হাকী, আল-সুনান আল-কুবরা ২/৪৯৬ - সহিহ) ☞ ওয়াকী আমাদেরকে নাফি ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: ইবনে আবি মালিকাহ আমাদের সাথে রমজানে বিশ রাকাত নামাজ পড়তেন এবং এক রাকাতে সূরা আল-মালাইকা (সূরা ফাতির) পড়তেন। (ইবনে আবি শায়বাহ, ২/১৬৫ - সহিহ) যেহেতু তারা প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিরের মতো পাঠ করতেন। অর্থাৎ তারা প্রতি রাতে পাঁচ পাড়ার মত তেলাওয়াত করতেন এবং পাঁচ বা ছয় রাতে কুরআন খতম করতেন। ☞ সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা) বলেন- তারা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে বিশ রাকাত (তারাবী) পড়তেন। তিনি আরও বলেছেন যে, তারা নামাযে শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন। এবং উসমান ইবনে আফফান রা. এর যুগে দীর্ঘ নামাযের কারণে তাদের (কেউ কেউ) লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। [আস সুনানুল কুবরা বাইহাকী ২/৪৯৬, হাদীস: ৪৮০১; রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩; মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০; সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪ - অধিকাংশ স্কলার সহিহ বলেছে কিন্তু কয়েকজন কিছু অভিযোগ করেছে, কেউ যদি এই হাদিসকে সহিহ বলনে নারাজ থাকে তাহলে ৮ রাকাতের সেই হাদিসকেও সহিহ বলতে পারবে না] ☞ তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহ) বলেন- আমি লোকদেরকে (সাহাবা ও প্রথম সারির তাবেয়ীনকে) দেখেছি, তারা বিতরসহ তেইশ রাকাত পড়তেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, ২/৩৯৩, হাদীস: ৭৭৭০, এই বর্ণনার সনদ হাসান] ☞ হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত, হযরত উমার রা. উবাই ইবনে কা’ব ও তামীম আদ্দারী (রা)-এর মাধ্যমে একুশ রাকাত পড়তে মানুষকে একত্রিত করেছেন। যাতে তাঁরা দুইশত আয়াত বিশিষ্ট সূরাগুলো পাঠ করতেন এবং ফজরের অল্প আগে নামায থেকে ফিরে যেতেন। [আব্দুর রযযাক: ৭৭৩০ পৃষ্ঠা: ৪/২৬০ - হাসান সহিহ, মাউকুফ] ☞ আল-সাইব ইবনে ইয়াজিদ থেকে তিনি বলেন, ওমর ইবনে আল-খাত্তাবের যুগে রমজানে তারা বিশ রাকাত নামায পড়তেন কিন্তু এক রাকাতে দুইশত রাকাত এর মত। তারা দাঁড়ানোর তীব্রতার কারণে লাঠিতে হেলান দিয়ে সালাত আদায় করেছিল [আল-ফিরিয়াবি, জাফর বিন মুহাম্মদ, পৃ. ১৩১ - কিছু স্কলার এই হাদিসের বিরোধীতা করায় একে হাসান পর্যায়ের হাদিস বলা যায়] ☞ ইবনে নুমাইর আমাদেরকে আবদ আল-মালিকের সূত্রে থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি লোকদেরকে বিতরের সাথে তেইশ রাকাত নামায পড়তে দেখেছি। [ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ২/১৬৫ - হাসান] ☞ “ইয়াযিদ ইবন রুমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাবের যুগে মানুষ তেইশ রাকা‘আত সালাত আদায় করত। [মালেক, মুয়াত্তা, ১/১১৫], “ইবনে আবি শায়বাহ, আবদুল আযীয ইবনে রাফি'র সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, 'উবাই ইবনে কা'ব রমজানে মদীনায় মানুষের সঙ্গে বিশ রাকাত নামায পড়তেন।” [ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ ২/১৬৩], ইবন আবু শাইবাহ ওকী‘ হতে, তিনি মালেক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব এক ব্যক্তিকে বিশ রাকা‘আত সালাত পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [মুসান্নাফে ইবন আবি শাইবা, ২/৩৯৩], মুহাম্মদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী হতে কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আ‘মাশ বলেন, ইবন মাসউদ বিশ রাকা‘আত তারাবীহ্‌ পড়তেন এবং তিন রাকা‘আত বিতির সালাত পড়তেন। [মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৪৮] (৪টি হাদিসেরই সব ঠিক আছে কিন্তু এগুলা বিচ্ছিন্নতার ত্রুটিতে যুক্ত তাই এগুলাকে হাসান বলেছেন অধিকাংশ স্কলার) ☞ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন - “এটা প্রমাণিত যে, ওমর (রা) এর আমলে উবাই ইবনে কাব (রা) রমযানে তারাবীতে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়তেন এবং তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। তাই বহু আলেমের সিদ্ধান্ত, এটাই সুন্নাহ। কেননা উবাই ইবনে কাব রা. মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের উপস্থিতিতে বিশ রাকাত পড়িয়েছেন। এবং কেউ তাতে আপত্তি করেননি।” তিনি আরো বলেছেন, “খোলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহ ও মুসলমানদের আমল দ্বারা তা (বিশ রাকাত তারাবী) প্রমাণিত।” [মাজমুউল ফাতাওয়া, ২১/১১২, ১২৩] ☞ ইমাম নববী (রহ) বলেছেন: “আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয, জামাতের সাথে পড়াও জায়েয।”[আলমাজমূ ৪/৩১] ☞ উমর (রা)-এর যমানায় উবাই ইবনে কাব (রা) যখন সবাইকে নিয়ে এক জামাতে দাঁড়ালেন তখন তিনি বিশ রাকাত পড়েছেন। কেননা, দীর্ঘ কেরাত মুসল্লীদের জন্য কষ্টের কারণ। তাই তিনি কেরাত দীর্ঘ না করে রাকাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। [মাজমূউল ফাতাওয়া ২৩/১১২-১১৩, ১২০] ☞ ”উবাই ইবনে কা‘ব (রা) কত রাকাত নামায পড়িয়েছিলেন তা ঐ রেওয়ায়েতে বিবৃত হয়নি। তিনি সাহাবীদের নিয়ে কত রাকাত তারাবী পড়েছিলেন এ বিষয়ে কয়েক ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা) থেকে মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ তিনভাবে বর্ণনা করেছেন। ১. বিতরসহ এগার রাকাত। তখন একেক রাকাতে দুইশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন। দীর্ঘ কেরাতের কারণে লাঠির উপর ঠেক দিয়ে দাঁড়াতে হত। ২. বিতরসহ তের রাকাত। ৩. বিতরসহ একুশ রাকাত। সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা) থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাত তারাবী পড়তেন। ইয়াযীদ ইবনে রূমান (রহ) ও বলেন, উমর (রা)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম বিতরসহ তেইশ রাকাত নামায পড়তেন। আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহ) বলেছেন, আমি মক্কার সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের দেখেছি, তারা বিশ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন। এসব রেওয়ায়েতের মাঝে এভাবে সমন্বয়১৭ করা যায় যে, একেক সময় একেক সংখ্যার তারাবী পড়তেন। অথবা এমনও হতে পারে যে, কেরাত দীর্ঘ করলে রাকাত কম পড়তেন আর কেরাত হালকা করলে রাকাত সংখ্যা বাড়াতেন।” [ফতহুল বারী ৪/২৫২, ২৫৩] ☞ ২০ রাকাত তারাবিহ এর সালাতের পক্ষে ৩ মাযহাবের ৩ ইমাম - ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেই, আহমদ ইবনে হাম্বল এবং মুসলিম উম্মাহ এর ইজমা রয়েছে [মিরকাত-৩/১৯৪; ইতহাফুল সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৪২২, আনারাতুল মাসাবীহ-১৮; উমদাতুল কারী-৫/২৬৭; ফাতাওয়া কাজীখান-১/১১২; আলমুগনী-১/৮০৩; শরহে মুকান্না’-১/৮৫২; আওযাজুল মাসালেক-১/৩৯০; শরহে নুকায়া-১০৪; আউনুল বারী-২/৩০৭; হালবী শরহে মুনিয়্যা-৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে-১/২৮৮; ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫১১; আলবাহরুর রায়েক-২/৬৬; আলমুগনী-২/১৬৭; ফাতাওয়াল আযহার ৮/৪৬৪; মাজমুআতুর রাসাইল ওয়াল মাসাইলিন নাজদিয়াহ ১/৯৫; ফাতাওয়া শাইখ বিন বায ৭/১৭৩; ওয়া রাসাইলে মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শাইখ ৭/৮৮; আল ইসতিযকার ৫/১৫৭; তারহুত তাছরীব ৩/৯৭; বিদায়াতুল মুজতাহিদ : ১/২১৯; আলইসতিযকারঃ ৫/১৫৭; মাজমুউল ফাতাওয়া ২৩/১১২; লিকাউল বাবিল মাফতুহ ১০/৫৯; আল-শারহ আল-মুমতি' ৪/৭৩-৭৫; আল-মাবসুত, ২/১৪৫]

Comments